মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

আর খুলবে না হলি আর্টিজান

সাখাওয়াত কাওসার

আর খুলবে না হলি আর্টিজান

রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁর সামনে গতকাল পুলিশের প্রহরা —জয়ীতা রায়

আর খুলবে না গুলশানের অভিজাত হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁ। বাংলাদেশে অনেকটা ইতিহাসই হয়ে গেল এই রেস্তোরাঁটি। তবে গুলশান এভিনিউর সাততলা এক ভবনে ৫০০ বর্গফুটের একটি দোকানে চালু হবে শুধু হলি আর্টিজান বেকারি। গুলশান কূটনীতিক পাড়ার ৭৯ নম্বর সড়কে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁর ওই ভবনটি এখন আবাসিক কাজেই ব্যবহার হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে, বর্বর জঙ্গি হামলার ১৩৪ দিন পর গত রবিবার আদালতের নির্দেশে পুলিশ মালিকপক্ষকে ভবনটি হস্তান্তর করলেও আতঙ্ক পিছু ছাড়েনি মালিকপক্ষসহ আশপাশের ভবনের বাসিন্দাদের। আগামী ২০ নভেম্বর চালু হবে লেক ভিউ ক্লিনিকটিও। তবে এখনো ২৪ ঘণ্টা পুলিশি পাহারা থাকছে ওই বাড়িটির সামনে। ক্ষতিগ্রস্ত ওই ভবনের সংস্কার কাজে নিয়োজিতদের কড়া তল্লাশির পরই ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। গতকালও গণমাধ্যম কর্মীদের ওই ভবনে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। জানা গেছে, হামলার পর থেকে তদন্তের জন্য কেবল দিনের বেলায় সংশ্লিষ্টরা এই রেস্টুরেন্টে যাতায়াত করতেন। তবে রাতে কারও প্রবেশাধিকার ছিল না। হলি আর্টিজান ও লেকভিউ ক্লিনিকে ঢোকার একটিই গেট। হামলার পর লেকভিউ ক্লিনিক থেকে সব রোগী অন্যত্র চলে যায়। কড়া তল্লাশির মধ্য দিয়ে অল্প কয়েকদিন যাতায়াত করেছিলেন কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী। একপর্যায়ে রোগী না থাকার কারণে বন্ধ হয়ে যায় ক্লিনিকটি। আদালতের নির্দেশে হলি আর্টিজানের কর্ণধারের কাছে রেস্টুরেন্টের নিয়ন্ত্রণ বুঝিয়ে দেওয়ার পর লেক ভিউ ক্লিনিকেও চলছে ধোয়া-মোছার কাজ। হলি আর্টিজানের মালিকপক্ষের একজন সাদাত মেহেদী জানান, এখানে নতুন করে আর রেস্তোরাঁ চালু করা হবে না। এখন থেকে এখানে তারা বসবাস করবেন। গত ১ জুলাই রাত পৌনে ৯টার দিকে হলি আর্টিজান বেকারি এবং ‘ও’ কিচেনে হামলা চালায় জঙ্গিরা। জঙ্গিদের হাতে ওইদিন নিহত হন দেশি-বিদেশি ২০ নাগরিক। অপারেশন চালাতে গিয়ে জঙ্গিদের ছোড়া গ্রেনেডে নিহত হন পুলিশের দুই কর্মকর্তা। টানা প্রায় ১১ ঘণ্টা জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণে ছিল হলি আর্টিজান। জিম্মি করে রাখা হয়েছিল হোটেলের কর্মচারীসহ রেস্তোরাঁয় আগতদের। পরদিন সকালে ‘অপারেশন থান্ডারবোল্টে’র  মাধ্যমে রুদ্ধশ্বাস এই জিম্মি ঘটনার অবসান হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা হলি আর্টিজান থেকে ৩২ জনকে উদ্ধার করেন। কমান্ডো অভিযানে নিহত হয় ৫ জঙ্গিসহ ছয়জন। গতকাল দুপুরে গুলশান ৭৯ নম্বর সড়কের ওই বাড়িটিতে গিয়ে দেখা যায়, ৬ জন পুলিশ পাহারা দিচ্ছে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁর আগের ওই ভবনের গেটে। ভিতরে শ্রমিকরা সংস্কার ও ধোঁয়া-মোছার কাজ করছেন। শ্রমিকদের কেউ কেউ কাজের জন্য বের হয়ে পুনরায় ঢোকার সময় তাদের পুরো শরীর তল্লাশি করেই ভিতরে ঢুকতে দিচ্ছে পুলিশ। কিছু সময় পরপর ভিতর থেকে আসছে আসবাব সরানোর শব্দ। পুলিশ পাহারা রাখার বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানান, হলি আর্টিজান বেকারি মালিকের কাছে বুঝিয়ে দিলেও আরও কয়েকদিন পুলিশ পাহারায় রাখা হবে। এটা মূলত আশেপাশের ভবনের বাসিন্দাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই। কারণ কোনো এলাকায় বড় ধরনের কোনো ঘটনা ঘটলে এর আশেপাশের এলাকার মানুষের মধ্যে এক ধরনের ভীতি কাজ করে। জানা গেছে, ২ জুলাই হলি আর্টিজান থেকে সবার লাশ উদ্ধারের পর রেস্তোরাঁটি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তের প্রয়োজনে মাঝেমধ্যেই ঘটনাস্থল হিসেবে হলি আর্টিজান বেকারি পরিদর্শন করতেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। মালিক বা অন্য কারও হলি আর্টিজানের ভিতরে ঢোকার অনুমতি ছিল না। ফলে হলি আর্টিজানে রাতে আলো জ্বালানোরও কোনও সুযোগ ছিল না।

 

২০১৪ সালের জুন মাসে চালু হওয়া হলি আর্টিজান বেকারি বিদেশি নাগরিকদের কাছে জনপ্রিয় রেস্তোরাঁ হিসেবে পরিচিত ছিল। সাদাত মেহেদী, তার স্ত্রী সামিরা আহমেদ, তাদের বন্ধু নাসিমুল আলম পরাগসহ কয়েকজন মিলে এই রেস্তোরাঁটি চালু করেছিলেন। প্রথমে আন্তর্জাতিক চেইন শপ হলি আর্টিজান বেকারির শাখা হিসেবে এটি চালু করা হয়। পরবর্তী সময়ে একই জায়গায় চালু করা হয় ‘ও’ কিচেন। সম্প্রতি হলি আর্টিজান বেকারির জমি ও ভবনের মালিক সামিরা আহমেদ হলি আর্টিজান ভবনে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে আদালতে আবেদন করেন। আদালত তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের ভবনটি মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। এরপর রবিবার মামলার তদন্ত সংস্থা কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ভবনটি সামিরা ও তার স্বামী সাদাত মেহেদীর কাছে বুঝিয়ে দেয়।

তবে হলি আর্টিজান বেকারির অ্যাসিস্টেন্ট কুক শিশির বৈরাগীর প্রত্যাশা আবারও হলি আর্টিজান চালু হবে। হয়তো কিছুদিন পর মালিকের মনের অবস্থা পরিবর্তন হবে। বিদেশি নাগরিকদের কাছে আমাদের রেস্টুরেন্টটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর