বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

সাঁওতালদের জানমাল রক্ষায় রিট

নিজস্ব প্রতিবেদক

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাঁওতালদের জানমাল রক্ষা, নিরাপত্তা, ক্ষতিপূরণ ও স্বাধীনভাবে চলাফেরার  সুযোগপ্রাপ্তির নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট হয়েছে। গতকাল আইন ও সালিশ কেন্দ্র—আসক, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্মস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট—এএলআরডি ও ব্রতী সমাজকল্যাণ সংস্থার পক্ষ থেকে হাইকোর্টে এ রিট করা হয়। আবেদনকারীদের আইনজীবী জেড আই খান পান্না ও কুমার দেবুল দে জানিয়েছেন, বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের বেঞ্চে রিটের ওপর শুনানি হতে পারে। রিট আবেদনে রংপুর চিনিকলের জন্য অধিগ্রহণ করা জমি থেকে সাঁওতালদের উচ্ছেদের সময় কোন কর্তৃত্ববলে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে— তাও জানতে রুল চাওয়া হয়েছে। জেড আই খান পান্না বলেন, রিটে সাঁওতালদের জানমাল রক্ষায় নির্দেশনা চাওয়ার পাশাপাশি তাদের ওপর হামলা, প্রাণহানি ও উচ্ছেদ কার্যক্রম কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না— এ মর্মে রুল জারির আবেদন জানানো হয়েছে। রিটে জনপ্রশাসন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, শিল্প সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, পুলিশের রংপুর রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক, গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান, রংপুর সুগার মিল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সাহেবগঞ্জ সুগারক্যান ফার্মের উপ-মহাব্যবস্থাপককে বিবাদী করা হয়েছে।

জমির ধান কাটতে পারছেন না সাঁওতালরা এবার নবান্ন অনুষ্ঠান নেই সাঁওতাল পল্লীতে : গোবিন্দগঞ্জের সাহেবগঞ্জ ইক্ষুু খামারের দখল নিয়ে সেখানে ১০০ একর জমিতে ধান চাষসহ প্রায় ৮০০ একর জমিতে মাসকলাই ডাল, সরিষা ও বীজ সংরক্ষণের পাট চাষ করেছিলেন সাঁওতালরা। ৬ নভেম্বর সেই জমি থেকে যখন তাদের উচ্ছেদ করা হয় তখন ধান ছাড়া সব ফসল তছনছ করে কেটে নিয়ে যায় লুটেরারা। সাঁওতালদের অভিযোগ, সেই লুটপাট চলে পরদিন ৭ নভেম্বর দুপুর পর্যন্ত। এখন তাদের চাষকৃত ১০০ একর জমিতে যে সোনালি রঙের পাকা ধান শোভা পাচ্ছে তাও কাঁটাতারের বেড়া ঘিরে পুলিশ পাহারায় আছে। সে ফসল কাটতে না পারায় নতুন চালের ভাত-পিঠা তৈরি করে নবান্ন (যা সাঁওতালদের ভাষায় ‘লবান’) অনুষ্ঠান এবার করতে পারছেন না সাঁওতালরা।

সাঁওতালরা সরকারি ত্রাণ নিয়েছেন : সাঁওতালদের পুনর্বাসন ও নানা অভিযোগ সম্পর্কে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে এরকম আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে গোবিন্দগঞ্জের সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার এলাকার মাদারপুর ও জয়পুর গ্রামের সাঁওতালরা গতকাল জেলা প্রশাসন বরাদ্দকৃত ত্রাণ গ্রহণ করেছেন।  জেলা প্রশাসক মো. আবদুস সামাদ এবং আদিবাসী ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির কোষাধ্যক্ষ রাফায়েল হাসদা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে গত ১৪ নভেম্বর জেলা প্রশাসন বরাদ্দকৃত ১৫০ প্যাকেট ত্রাণ ট্রাকযোগে নিয়ে গিয়ে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল হান্নান দিনভর অপেক্ষা করে সাঁওতালরা তা না নেওয়ায় ফিরে আসেন।

সাঁওতালদের দাবি ছিল তাদের পুনর্বাসন, বাপ-দাদার জমি ফেরতসহ সুনির্দিষ্ট কিছু দাবি-দাওয়া বাস্তবায়িত না হওয়া পর্যন্ত তারা সরকারি কোনো ত্রাণ গ্রহণ করবেন না। গতকাল পারস্পরিক আলোচনা ও আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে মাদারপুর ও জয়পুর গ্রামের ১৫০টি পরিবার সাঁওতাল নেতা রাফায়েল হাসদার তত্ত্বাবধানে ত্রাণ গ্রহণ করেন। ত্রাণ বিতরণ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা।

সর্বশেষ খবর