মঙ্গলবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন

অলি-গলি রাজপথে নির্বাচনী হাওয়া

আহমদ সেলিম রেজা, নারায়ণগঞ্জ থেকে ফিরে

অলি-গলি রাজপথে নির্বাচনী হাওয়া

বন্দরনগরী নারায়ণগঞ্জের চা-দোকান, অফিস ও আদালত পাড়ায়, ঘরোয়া আড্ডা—সবখানে এখন সিটি নির্বাচন নিয়ে আলোচনা।

অলি-গলি রাজপথে নীরবে নির্বাচনী কাজ করছেন আওয়ামী লীগ-বিএনপির নেতা-কর্মীরা। সবখানেই এখন নির্বাচনী হওয়া।  এদিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) মেয়র মনোনয়নে এবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার দূরদর্শিতার প্রশংসা করছেন সবাই। মেয়রপ্রার্থী হিসেবে তিনি জনগণের কাছের মানুষকে বেছে নেওয়ায় উচ্ছ্বসিত নারায়ণগঞ্জের মানুষ। এমনকি স্থানীয় বিএনপি-জামায়াতের অনেক সমর্থকের সঙ্গে কথা বলেও পাওয়া যায় একই চিত্র। বর্তমান মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ায় তারাও খুশি। স্বস্তি বিরাজ করছে আওয়ামী লীগের স্থানীয় রাজনীতিকদের মধ্যে। তা সত্ত্বেও নারায়ণগঞ্জবাসীর কৌতূহলের কমতি নেই বিএনপির প্রার্থী নিয়ে। নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি সভাপতি তৈমূর আলম খন্দকার নির্বাচন না করার সিদ্ধান্তে নাটকীয়তার সৃষ্টি হয়। এ ক্ষেত্রে নতুন করে আলোচনায় চলে আসেন বিএনপি নেতা নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান, মহানগর বিএনপি সভাপতি এ টি এম কামাল ও সাবেক এমপি আবুল কালাম। তবে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন সাখাওয়াত হোসেন খান।

আইভী নমিশন পাওয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব এখন অনেকটাই যেন নির্ভার। স্বস্তি বিরাজ করছে তাদের মধ্যে। তারপরও অলআউট বেরিয়ে আসার ক্ষেত্রে যেটুকু অস্বস্তি আওয়ামী লীগের কিছু পকেটে বিরাজ করছে, কেন্দ্রের উদ্যোগে তা কেটে যাবে বলে এবার নারায়ণগঞ্জবাসী আশাবাদী। তাই এখন তারা ব্যস্ত সময় পার করছেন অভ্যন্তরীণ দলীয় ঐক্য মেরামতের কাজে।  নারায়ণগঞ্জের আদালত পাড়া, চাষাড়ার অফিস পাড়া ও বন্দরের পেশাজীবী, শ্রমজীবী ও সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া যায় এই চিত্র। সেলিনা হয়াৎ আইভীর মনোনয়ন প্রাপ্তিতে স্থানীয় জনগণের উচ্ছ্বাসের নেপথ্য কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে পান দোকানদার থেকে বাড়িওয়ালা সবার এক কথা—ভাই বিপদে-আপদে তাকে কাছে পাই। স্থানীয় হিন্দু, মুসলমান, সাংবাদিক, আইনজীবী, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, গৃহিণী—সবাই মনে করেন, শেখ হাসিনা এখানে আবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির পুনর্জন্ম দিয়েছেন। এতে আওয়ামী লীগ আবার জনগণের কাছে ফিরে এসেছে। এতে দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধ নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলেও তারা মনে করেন। স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও কেন্দ্রীয়ভাবে দলের ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখার কাজ চলছে।

সরেজমিন বন্দর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার মানুষ আইভির মনোনয়ন নিয়েই আলোচনা করছেন। স্থানীয়ভাবে গরিব ও মধ্যবিত্তের বাসস্থান এই বন্দর এলাকা রীতিমতো আইভির ঘাঁটি। তাদের কথায় আইভীর আমলে কোনো কাজে তাকে বখরা দিতে হয় না। তিনি রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করেছেন। নারায়ণগঞ্জকে সুন্দর শহর করতে চান। শহরের পাশে পার্ক করেছেন। মাসদাইরে আধুনিক মসজিদ করেছেন। হকারদের জন্য আলাদা মার্কেট করে দিয়েছেন—এমন নানান ফিরিস্তি শোনা গেল চাষাড়া ও মাসদাইরের মানুষের মুখে। নারায়ণগঞ্জ মানবাধিকার কমিশনের সভাপতি ও স্থানীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান মাছুমের ভাষায়, নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের রাজনীতি এখন আওয়ামী লীগের কাছে ফিরে এসেছে। সত্তরে বা স্বাধীনতার পরেও আওয়ামী লীগ জনগণের লীগ ছিল। সেখান থেকে দলকে ধীরে ধীরে একটি পরিবারের লীগে আমি বলব ওসমান লীগে পরিণত করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে আওয়ামী লীগ নারায়ণগঞ্জে আবার জনগণের রাজনৈতিক প্লাটফরম হিসেবে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পেয়েছে। চাষাড়ার এলাকার ব্যবসায়ী মমিনুল মনে করেন, নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে আর কোন ষড়যন্ত্র টিকবে না। কেউ সেটা করতে গেলে নেত্রীর চোখে ধরা পড়ে যাবেন। স্থানীয় ব্যবসায়ী বাবুল জানান, শেখ হাসিনা জনগণের প্রার্থীকে দলের প্রার্থী করে নারায়গঞ্জবাসীর মন জিতে নিয়েছেন। বাচ্চা নিয়ে স্কুলে আসা জনৈক গৃহিণী বলেন, আইভী আপা নারায়ণগঞ্জের নারীদের সম্মানের প্রতীক।

সর্বশেষ খবর