ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি—ন্যাপ সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, ধর্ম-কর্ম ও গণতন্ত্রের নিশ্চয়তাসহ সমাজতন্ত্রের সংগ্রাম এগিয়ে নিন। গণতন্ত্র সুসংহত রাখার জন্য সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে। খেটে খাওয়া মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তিনি বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানকে কেউ পছন্দ করতেন না, তার দলের কর্মীরা ছাড়া। অথচ তিনিই পেরেছিলেন দেশ স্বাধীন করতে। তাই সমাজ পরিবর্তনের জন্য বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রয়োজন। জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তন হবে। কানসাট-ফুলবাড়ীর আন্দোলন এর প্রমাণ। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে গতকাল ন্যাপের দশম জাতীয় সম্মেলনে অধ্যাপক মোজাফফর টেলিফোনে তার উদ্বোধনী বক্তব্য দেন। সম্মেলনে বিভিন্ন জেলার কাউন্সিলর ও ডেলিগেটরা ব্যানার-ফেস্টুন-প্লাকার্ড নিয়ে অংশ নেন। দ্বিতীয় অধিবেশনে দলের নতুন নেতা নির্বাচন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের অন্যতম উপদেষ্টা ও বাম রাজনীতির পুরোধা অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ বলেন, আজ হোক কাল হোক এ দেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবেই হবে। সেজন্য ছাত্র-যুবকদের নেতৃত্বে আন্দোলন বেগবান করতে হবে। বক্তৃতাকালে সবার কাছে দোয়া চান অধ্যাপক মোজাফফর। তিনি বলেন, ‘আমি অসুস্থ। ডাক্তার আমাকে কম কথা বলতে বলেছেন। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন, যেন সুস্থভাবে মরতে পারি।’ ন্যাপের কার্যকরী সভাপতি ও অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের স্ত্রী আমেনা আহমদ এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপু, বাংলাদেশ শান্তি পরিষদের সভাপতি মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পর্টির সভাপতি ও বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাতীয় পার্টির (জেপি) মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাৎ হোসেন, গণআজাদী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এস কে শিকদার, বাসদ একাংশের আহ্বায়ক রেজাউর রশীদ খান, ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এনামুল হক প্রমুখ। সম্মেলনে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন ন্যাপের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রশীদ সরকার। সদা হাস্যোজ্জ্বল অধ্যাপক মোজাফফরকে বক্তব্য দেওয়ার সময় গতকালও কয়েকবার হাসতে দেখা যায়। তিনি বলেন, সমাজ পরিবর্তনশীল। ইতিহাস এ কথাই বলে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ সমাজ পরিবর্তনের দিকে বিভিন্ন পথে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, দেশ বর্তমানে দুই ভাগে বিভক্ত। একটি হলো শাসকের, আরেকটি শোষকের। তিনি বলেন, জনগণের খবর কেউ রাখে না। ক্ষমতাসীনরা নিজের কাজে ব্যস্ত। দেশ ও সমাজের উন্নয়নের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সবাই বলে ‘করব’। ‘করেছি বা করছি’ বলে না কেউ। গোলাম আরিফ টিপু বলেন, সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের কারণে সরকারের সাফল্য ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। যারা জঙ্গিবাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে উৎসাহ দিচ্ছে, তারাই আবার জঙ্গি নির্মূলের কথা বলছে। এ কারণে জনগণ তাদের ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তিনি বলেন, সমাজ পরিবর্তন করতে হলে এ মুহূর্তে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। রাশেদ খান মেনন বলেন, ন্যাপ ইতিহাসের অংশ। পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসন ও খেটে খাওয়া মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ন্যাপের জন্ম হয়েছিল। তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এসে মৌলবাদী শক্তিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করে। দেশে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ সৃষ্টিকারীদের মদদ দেয়। এতে এ দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভূলুণ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় এসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠা করেছে। মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামে গোটা জাতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল, বর্তমান সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িক শক্তি নির্মূলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এদের উত্খাত না করা পর্যন্ত আমাদের ঐক্য অটুট রাখতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা দেশ থেকে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতি নির্মূল করতে চাই। এজন্যই আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের ঐক্য রাখা প্রয়োজন।’ মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ন্যাপের সঙ্গে সিপিবির সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এ সম্পর্ক আরও মজবুত হবে। তিনি বলেন, বাম রাজনীতিকরা ঐক্যবদ্ধ হলে আগামী দিনে এরাই হতে পারে বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক দল। দিলীপ বড়ুয়া বলেন, দেশ থেকে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূলে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এজন্য ১৪ দলকে আরও শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
ন্যাপ সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর সা. স. অধ্যক্ষ নজরুল : ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ। কার্যকরী সভাপতি তার স্ত্রী আমেনা আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ নজরুল মজিদ বেলালকে নির্বাচিত করা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউশনে ন্যাপের ১০তম জাতীয় সম্মেলন শেষে মোট ৫১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়।