ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজ সরকারিকরণের দাবিতে ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা ও গ্রেফতারের প্রতিবাদে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলে লাঠিপেটা করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় এক শিক্ষকসহ দুজন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া দফায় দফায় সংঘর্ষে শিক্ষক-শিক্ষার্থী-এলাকাবাসীসহ আহত হয়েছেন অন্তত ৬০ জন। পুলিশের লাঠিপেটায় নিহত শিক্ষকের নাম আবুল কালাম (৫৫)। তিনি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। আহত অবস্থায় ময়মনসিংহ সদর উপজেলার কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বিকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। নিহত অপরজন পথচারী সফর আলী (৬৫)। এ সময় পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে বেশ কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। গতকাল দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে। আন্দোলনকারী শিক্ষকরা জানান, ফুলবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজ সরকারিকরণের দাবিতে ৪৫ দিন ধরে তারা নিয়মিতই আন্দোলন করে আসছেন। বিক্ষোভ মিছিল, অবরোধ, হরতালসহ নানা কর্মসূচি পালিত হলেও দাবি পূরণ না হওয়ায় তারা আন্দোলনের সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় স্থানীয় সংসদ সদস্যের ছেলে অ্যাডভোকেট ইমদাদুল হক সেলিমের মালিকানাধীন আখালিয়া হেলথ সেন্টার, আলম এশিয়ার কাউন্টারসহ কয়েকটি পয়েন্টে বৃহস্পতিবার হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরে অজ্ঞাতনামা ১৮০ জনকে আসামি করে ফুলবাড়িয়া থানায় পৃথক তিনটি মামলা করা হয়। এসব মামলায় শিক্ষার্থীসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল দুপুরে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করতে চান আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। কিন্তু পুলিশ এ মিছিলে বাধা দেয়। এ সময় কলেজ দাবি আদায় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক এস এম আবুল হাশেম অবরোধের ঘোষণা দেন। এ ঘোষণায় অনেক শিক্ষার্থী কলেজ থেকে বেরিয়ে আসেন। আচমকা পুলিশ কলেজের ভিতর গিয়ে আন্দোলনকারীদের লাঠিপেটা শুরু করে। এতে কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আবুল কালামসহ ২০ থেকে ২৫ জন শিক্ষক-শিক্ষার্থী আহত হন। এরই মধ্যে পুলিশের লাঠিপেটায় সফর আলী (৬৫) নামে এক পথচারী মারা গেছেন বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে। এতে আন্দোলনকারীরা আরও উত্তেজিত হয়ে পড়েন। ফের পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন তারা। বিকাল নাগাদ ময়মনসিংহ সদর উপজেলার কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিক্ষক আবুল কালামের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থী ও স্থানীয় এলাকাবাসী ক্ষোভে ফুঁসে ওঠেন। তারা ফুলবাড়িয়া-ময়মনসিংহ সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে সড়ক অবরোধ করে রাখেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ শতাধিক রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। উভয় পক্ষে ফের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সৃষ্টি হয়। এতে ৩০ থেকে ৩৫ জন আহত হন। আন্দোলনকারী শিক্ষক মাশরুফা সুলতানা মিমি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ কলেজের ভিতর ঢুকে নির্দয়ভাবে শিক্ষকদের ওপর হামলে পড়ে লাঠিপেটা করে। এসআই রফিক আমাদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। তারা মধ্যযুগীয় কায়দায় শিক্ষকদের নির্যাতন করে। পুলিশের লাঠিপেটায় আমাদের এক শিক্ষক মারা গেছেন।’ ফুলবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিফাত খান রাজীব বলেন, ‘লাঠিপেটায় কোনো শিক্ষক বা পথচারীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। আন্দোলনকারীরা বৃষ্টির মতো ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে আমরা লাঠিপেটা করি। এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শতাধিক রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করা হয়।’ তিনি বলেন, ‘যে শিক্ষক মারা গেছেন তার হার্টে সমস্যা ছিল। তিনি আগেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বলে শুনেছি। আমাদের লাঠিপেটায় তার মৃত্যু হয়নি।’