রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ঘুমন্ত ওআইসিকে (ওর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন) জাগাতে হবে। ওআইসি ঘুমাচ্ছে, এই ইস্যুতে সংস্থাটি কোনো ভূমিকাই রাখছে না। এমনকি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আমরা প্রয়োজনে জাতিসংঘের কাছেও যেতে পারি। প্রবীণ কূটনৈতিক ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ফারুক চৌধুরী এই কথা বলেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে আমাদের অর্থনীতির ওপর বিরাট একটি চাপ আসছে। আর আমাদের একার পক্ষে এই চাপ সহ্য করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশ যদি রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ বন্ধ না করে, দরজা খুলে দেয় তাহলে দেশে রোহিঙ্গাদের জনস্রোত আসবে। আর বাংলাদেশের পক্ষে তখন বিষয়টি সামলানো সম্ভব হবে না। এই বিষয়টি সামলানো আমাদের ক্ষমতার বাইরে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ফারুক চৌধুরী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। তবে রোহিঙ্গাদের সমস্যাটি কোনো ভাবেই বাংলাদেশের সমস্যা নয়। এটি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সমস্যা। ফারুক চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় দিয়েছে। আর এত বিশাল সংখ্যক রোহিঙ্গা তথা বহিরাগতদের চাপ বাংলাদেশের পক্ষে সহ্য করা সম্ভব না। আমাদের নিজেদেরও এর বাইরে অসংখ্য সমস্যা আছে। আমরা এতদিন মানবিকতার কথা ভেবে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছিলাম। কিন্তু বর্তমান সমস্যাটি সম্পূর্ণ মিয়ানমারের সমস্যা। বাংলাদেশ কেন এই সমস্যার সমাধান করতে যাবে! সাবেক এই পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত তখনকার বার্মা (বর্তমানে মিয়ানমার) ভারত সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। ভারতের বিভিন্ন অংশে মানুষ বসতি গড়েছিল। এখন যে রোহিঙ্গাদের বাঙালি বলা হচ্ছে তারা শত শত বছর ধরে মিয়ানমারে বাস করছে। কারণ তখন মিয়ানমার ভারতের অংশ ছিল আর এখন যেটা বাংলাদেশ, ইংরেজদের সময় সেই অঞ্চলও ভারত সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই কূটনৈতিক রোহিঙ্গা সমস্যাটিকে এলাকাভিত্তিক ও আন্তর্জাতিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করতে বলেন। তার মতে, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকেও একইভাবে বোঝাতে হবে রোহিঙ্গাদের সমস্যা বাংলাদেশের সমস্যা নয়। বাংলাদেশ এখানে ফেঁসে যাচ্ছে। কারণ বাংলাদেশ একটি সীমান্তবর্তী দেশ। কিন্তু আমাদের দৃষ্টিতে রোহিঙ্গারা সম্পূর্ণ বিদেশি। তারা বাঙালি নয়। ব্রিটিশ আমলে ভারতীয় উপমহাদেশের ছিল বলে তাদের এমনটি মনে করার কোনো কারণ নেই যে, তারা বাংলাদেশের মানুষ। ফারুক চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে আর সে কারণে তাদের প্রতি আমাদের সহানুভূতি আছে। তাদের প্রতি মানবতার দিকটাও আমাদের থাকবে। কিন্তু এরপরও আমাদের দৃষ্টিতে তারা বহিরাগত। আর রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশও আমরা সমর্থন করি না। এটি একটি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সমস্যা। বাংলাদেশ একা এই ইস্যুটি দেখতে পারে না। আমার মতে, এই সমস্যাটি প্রথমে মিয়ানমারের সমস্যা, দ্বিতীয়ত এটি আঞ্চলিক সমস্যা, সর্বশেষে এটি আন্তর্জাতিক সমস্যা।