গেল জুন মাসে সৌদি আরব সফর শেষে দেশে ফিরছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার আগ মুহূর্তে রানওয়েতে ধাতব বস্তুর মতো কিছু একটা দেখতে পান পাইলট। অবতরণ না করে ট্রাফিক কন্ট্রোলে যোগাযোগ করেন তিনি। সেই ধাতব বস্তু সরানোর পর প্রধানমন্ত্রীর বিমানটি রানওয়েতে অবতরণ করে। এর আগে ২০ মিনিট ধরে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানটি আকাশেই থাকতে হয়েছে। ধাতব বস্তুর ওপর অবতরণ করা হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা ছিল। গত রবিবার বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায় প্রধানমন্ত্রীকে বহন করা বাংলাদেশ বিমানের আরেকটি উড়োজাহাজ। হাঙ্গেরি যাওয়ার পথে জরুরি অবতরণের জন্য কাছাকাছি কোনো বিমানবন্দর খুঁজতেই বিমানটির আধাঘণ্টা পেরিয়ে গেছে আকাশেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তেলের প্রেসার কমে যাওয়ায় একটি ইঞ্জিন গরম হয়ে যায়। এতে বড় ধরনের দুুর্ঘটনার আশঙ্কার সৃষ্টি হয়। আগের দিন প্রধানমন্ত্রীর ফ্লাইটে যান্ত্রিক ত্রুটির পর গতকাল ঢাকা-কলকাতা ফ্লাইটও দুই দফা যান্ত্রিক ত্রুটির কবলে পড়ে। এ নিয়ে আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
গত ৩ মার্চ। শাহজালালের রানওয়ের শেষ প্রান্তের ব্যারিয়ার ভেঙে উড্ডয়ন করে জেদ্দাগামী বাংলাদেশ বিমানের ব্র্যান্ড নিউ এয়ারক্রাফট। তবে অলৌকিকভাবে ভয়াবহ দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পায় বিমানটি। প্রাণ বাঁচে ৩৭৪ যাত্রীর। বিমানের ওজনের সঙ্গে ইঞ্জিনের গতির সমন্বয় না করেই টেকঅফ করায় পাইলট নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলেন উড়োজাহাজটির। বিমান বাংলাদেশ এয়াললাইন্সের ভিভিআইপি ফ্লাইট থেকে শুরু করে যাত্রীবাহী উড়োজাহাজের যাত্রা এমনই ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। বার বার অলৌকিকভাবেই দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেন ভিভিআইপি এবং যাত্রী সাধারণ। বিমান ভ্রমণে এমনিভাবেই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদও তার সফরসঙ্গী নিয়ে দুর্ঘটনার মধ্যে পড়েছিলেন। সংশ্লিষ্টরা বলছে, পাইলটদের অদক্ষতা, অজ্ঞতা এবং প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তাদের খামখেয়ালিপনায় বিমান যাত্রা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। এসব ঘটনায় তদন্ত কমিটি হয়। কিন্তু কমিটির প্রতিবেদন কখনো আলোর মুখ দেখে না। যেন দেখার কেউ নেই।
ঝুঁকিপূর্ণ বিমান যাত্রা : বিমান সূত্র জানায়, গত ১০ বছরে দেশে-বিদেশে ছোটখাটো সাতটি দুর্ঘটনায় পড়ে বিমানের উড়োজাহাজ বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। অলৌকিকভাবে হলেও সবগুলোতেই বড় দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেছে।বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১৯৭২ সালে কার্যক্রম শুরু করার পর এ পর্যন্ত ১৮টির মতো ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ ও দুর্ঘটনার শিকার হয় এয়ারলাইনসটি। ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বিমানের প্রথম ফ্লাইটই দুর্ঘটনার মুখে পড়ে। পরীক্ষামূলক উড্ডয়নের সময় ওই দুর্ঘটনার পর মেরামত অযোগ্য হয়ে যায় সে সময় বিমানের বহরে থাকা একমাত্র ডিসি-৩ উড়োজাহাজটি। দ্বিতীয়বার দুর্ঘটনায় পড়ে ১৯৭৯ সালের ১৮ নভেম্বর। ওইদিন বিমানের একটি ফকার এফ-২৭ উড়োজাহাজ উড্ডয়নের পর সাভার বাজারের কাছাকাছি থাকা অবস্থায় দুটি ইঞ্জিনেই আগুন ধরে যায়। পরে বৈমানিক উড়োজাহাজটি কাছাকাছি একটি মাঠে জরুরি অবতরণ করে। এ দুর্ঘটনায় মেরামতের অযোগ্য হয়ে পড়েছিল উড়োজাহাজটি। তৃতীয় দুর্ঘটনাটি ঘটে ১৯৮০ সালের ৩ এপ্রিল। বিমানের বোয়িং-৭০৭-৩৭৩সি উড়োজাহাজটি সিঙ্গাপুরের পায়া লেবার বিমানবন্দও থেকে উড্ডয়নের পর ১০০ মিটার উচ্চতায় ইঞ্জিন বিকল হয়ে গেলে পুনরায় রানওয়ের দিকে ফিরে আসে। অবতরণের সময় রানওয়ে থেকে প্রায় দুই হাজার ফুট দূরত্বে পিছলে যায়। এ দুর্ঘটনায়ও মেরামতের অযোগ্য হয়ে পড়েছিল উড়োজাহাজটি।
সূত্র জানায়, চলতি বছর ৩ মার্চ ৩৭৪ যাত্রী নিয়ে ঢাকা জেদ্দাগামী ০৩৫ ফ্লাইটটি রানওয়ের নির্ধারিত সীমারেখা থেকে টেকঅফ করতে পারেনি। শাহজালালের রানওয়ের শেষ প্রান্তের ব্যারিয়ার ভেঙে উড্ডয়ন করে জেদ্দাগামী ব্র্যান্ড নিউ এয়ারক্রাফট। ওই দিন এয়ারক্রাফটের মোট ওজনের (এয়ারক্রাফট ও পণ্যসহ ওজন) সঙ্গে ইঞ্জিনের শক্তির সমন্বয় না করায় নির্ধারিত সীমারেখা থেকে টেকঅফ করার মতো গতি সঞ্চয় করতে পারেনি ফ্লাইটটি। এতে ভয়াবহ দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হয়। কিন্তু রানওয়ের শেষ প্রান্তে এসে ব্যারিয়ার (উড়োজাহাজ থামানোর জাল) ভেঙে অলৌকিকভাবে বিমানটি টেকঅফ করে। রক্ষা পায় সবকিছু। ভয়াবহ এ ঘটনাটি বিমান কর্তৃপক্ষ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালায় বলে অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। সিভিল এভিয়েশনের টাওয়ার পয়েন্ট থেকে তথ্য ফাঁস হলে তোলপাড় শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত বিমানের সিনিয়র পাইলট জামিল আহমদেও নেতৃত্বে তিন সদস্যের উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি বিমানের ব্ল্যাক বক্স ও এফডিএম (ফ্লাইট ডাটা মনিটরিং) বক্স নিয়ন্ত্রণে নিয়ে পরীক্ষা শুরু করেছে। এ বিষয়ে বিমানের কাছে লিখিত ব্যাখ্যা চেয়েছে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ। তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে, বিমানের এফডিএম বক্স থেকে উড়োজাহাজের ইঞ্জিনের সব তথ্য উদ্ধার করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, সেদিন এয়ারক্রাফটটির মোট ওজন ছিল ২৯৭.৯৪ টন। এই ওজনের একটি ফ্লাইট টেকঅফ করতে ইঞ্জিনের শক্তির প্রয়োজন ৯৭ শতাংশ। কিন্তু পাইলটরা ইঞ্জিনে পাওয়ার (শক্তি) দিয়েছিলেন ৮৭.৪ শতাংশ। যা প্রয়োজনীয় শক্তির চেয়ে ১১ শতাংশ কম ছিল। ফলে এয়ারক্রাফটি প্রয়োজনীয় শক্তি পায়নি। এতে টেকঅফ (আকাশে ওড়া) করতে বেশি সময় নিয়েছিল। বিমানের বহরে থাকা বর্তমান বোয়িং ৭৭৭-৩০০ উড়োজাহাজগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে উড্ডয়ন ও অবতরণ করে। পাইলট ও ফার্স্ট অফিসাররা শুধু প্রয়োজনীয় ডাটা পুশ ও মনিটরিং করে থাকেন। সে অনুযায়ী ইঞ্জিন কাজ করে। এতে কোনো ধরনের ভুল হলেই দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। সেদিনও ভুলের কারণেই বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ৩০ মার্চ সিঙ্গাপুর থেকে ছেড়ে আসা বিমান দুর্ঘটনার হাত থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সেই ফ্লাইটে যাত্রী ও ক্রু মিলে ২০৬ জন ছিলেন। সিঙ্গাপুর থেকে উড্ডয়নের পরপরই সেখানে আগুন ধরে যায়। প্রায় ৫ ঘণ্টা আকাশে কাটানোর পর শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করে ফ্লাইটটি। তবে অল্পের জন্য রক্ষা পান সেই যাত্রীরা। ওই ফ্লাইটে আরও ছিলেন পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। চলতি বছরের ৭ আগস্ট ওমানের রাজধানী মাস্কাটগামী বিমানের ফ্লাইট জরুরি অবতরণ করে ভারতের রায়পুর বিমানবন্দরে। অল্পের জন্য রক্ষা পান ১৭৩ যাত্রী। সম্প্রতি বিমানের আরেকটি ফ্লাইট হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ১৩৬ যাত্রী নিয়ে সিঙ্গাপুর যাত্রা করেছিল। বিমানটি রানওয়ে থেকে উড্ডয়নের পরপরই বড় ধরনের ত্রুটি ধরা পড়ে। অবস্থা বেগতিক দেখে পাইলট জরুরি অবতরণ করতে বাধ্য হন। পরে মেরামতের ৩ ঘণ্টা পর ফ্লাইটটি শাহজালাল বিমানবন্দর ছাড়ে।
সূত্র জানায়, গত ৭ জুন হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের মুহূর্তে দুর্ঘটনায় পড়ে বিমানের বোয়িং-৭৭৭-৩০০ ইআর উড়োজাহাজ। বিমানের বিজি ০৪৯ ফ্লাইটটির বৈমানিক ছিলেন ক্যাপ্টেন শোয়েব আলী। রানওয়ে থেকে উড্ডয়নের আগেই উড়োজাহাজের ২ নম্বর ইঞ্জিনটি গরম হয়ে বিকল হয়ে যায়, যার সংকেত বৈমানিক ডিসপ্লে থেকে দেখতে পান এবং উড্ডয়ন বাতিল করেন। একইভাবে ২০১৫ সালের ২৮ মার্চ সিঙ্গাপুর থেকে ঢাকায় আসার পথে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় পড়ে বিমানের একটি এয়ারবাস এ-৩১০ উড়োজাহাজ। ফ্লাইট নম্বর বিজি ০৮৫ সিঙ্গাপুরের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে বাংলাদেশের আকাশসীমায় প্রবেশের পর চট্টগ্রামের শাহ আমানত (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৭০ নটিক্যাল মাইল দূরে উড়োজাহাজের দ্বিতীয় ইঞ্জিনে আগুনের সংকেত পান বৈমানিক। সে যাত্রায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণ করে উড়োজাহাজটি। ওই সময় পুরো বিমানবন্দরে জারি করা হয় সতর্কতা সংকেত। বিমানবন্দর ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটগুলো নেওয়া হয় রানওয়েতে। এয়ারবাসটির ওই ফ্লাইটে বৈমানিক ছিলেন ক্যাপ্টেন আবদুল আজিজ ও ক্যাপ্টেন ইয়ামেনী।
এর আগে ২০১৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের পর দুর্ঘটনার মুখোমুখি হয় বিমানের বোয়িং-৭৭৭-২০০ ইআর উড়োজাহাজ। দুই ইঞ্জিনবিশিষ্ট ৭৭৭-২০০ ইআর (বিজি ০৪৭) উড়োজাহাজটি চট্টগ্রাম থেকে ওইদিন রাত ১২টা ৩৩ মিনিটে দুবাইয়ের উদ্দেশে রওনা হয়। এতে যাত্রী ছিলেন ২৪১ জন। উড্ডয়নের মাত্র ৮ মিনিটের মাথায় হঠাৎ বিকট শব্দ হয়। তাতে সব যাত্রী আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পর ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলাম ঘোষণা দেন, একটি ইঞ্জিন বিকল হয়ে গেছে। অন্য ইঞ্জিনটি দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করে উড়োজাহাজটি নিয়ে নিরাপদে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন বৈমানিক। একইভাবে ২০১৪ সালের ২৮ মার্চ সিঙ্গাপুর থেকে ঢাকায় আসার পথে দুর্ঘটনার মুখোমুখি হয় বিমানের এয়ারবাস এ-৩১০ উড়োজাহাজ। ওই ফ্লাইটের বৈমানিক ছিলেন ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ সালেহ ও ক্যাপ্টেন ইয়ামেনী। উড্ডয়নের পর বৈমানিক দুই নম্বর ইঞ্জিনে আগুনের সতর্কতা সংকেত পান। তবে এতে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
১৯৯৭ সালের ২২ ডিসেম্বর কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় ঢাকা থেকে সিলেট যাওয়ার সময় সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে বেলি ল্যান্ডিং বা চাকা ছাড়াই অবতরণ করে বিমানের একটি ফকার এফ-২৮ উড়োজাহাজ। এ দুর্ঘটনায়ও মেরামতের অযোগ্য হয়ে পড়ে উড়োজাহাজটি। একইভাবে ২০০৪ সালের ৮ অক্টোবর ঢাকা থেকে যাওয়ার সময় ওসমানী বিমানবন্দরের রানওয়ে পার হয়ে ১৫০ ফুট দূরে ১৫ ফুট গর্তে ঢুকে পড়ে বিমানের একটি ফকার এফ-২৮ উড়োজাহাজ। অন্যদিকে ২০০৫ সালের ১ জুলাই দুর্ঘটনায় পড়ে বিমানের ডিসি-১০-৩০ ইআর উড়োজাহাজ। উড়োজাহাজটি ঢাকা-চট্টগ্রাম-দুবাই আন্তর্জাতিক রুটে চলাচল করত। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার সময় দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় অবতরণের সময় উড়োজাহাজের ডানদিক হেলে যায় ও একটি ইঞ্জিনে আগুন ধরে যায়। নিরাপদে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন উড়োজাহাজের সব যাত্রী। পরবর্তীতে তদন্ত প্রতিবেদনে পাওয়া যায়, উড়োজাহাজে কোনো যান্ত্রিক গোলযোগ ছিল না। এ দুর্ঘটনার জন্য বিমানের পাইলটকে দায়ী করা হয়। পরে তিনি চাকরিচ্যুত হন। এ ছাড়া ২০০৭ সালের ১২ মার্চ দুর্ঘটনায় পড়ে বিমানের এয়ারবাস এ-৩১০-৩০০ উড়োজাহাজ। দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের সময় উড়োজাহাজের সামনের দিককার ল্যান্ডিং গিয়ার অকেজো হয়ে যাওয়ায় উড়োজাহাজটি বিমানবন্দরের রানওয়ের শেষ দিকে গিয়ে থেমে যায়। উড়োজাহাজে ২৩৬ জন যাত্রীর অধিকাংশই অক্ষত ছিলেন।
কলকাতা ফ্লাইটেও ত্রুটি : বিমানের মহাব্যবস্থাপক শাকিল মেরাজ জানান, বিজি-০৯১ ফ্লাইট সকাল সাড়ে ৮টায় ৫৫ জন যাত্রী নিয়ে কলকাতার উদ্দেশে শাহজালাল বিমানবন্দর ছেড়ে যাওয়ার পরপরই যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয় এবং ক্যাপ্টেন জরুরি অবতরণে বাধ্য হন। পরে সেটা তিন ঘণ্টা ধরে মেরামত করার পর বেলা সাড়ে ১১টায় আবারও কলকাতার উদ্দেশে রওনা হয়। কিন্তু যশোর সীমান্তের কাছাকাছি পৌঁছতেই আবারও যান্ত্রিক ত্রুটির কবলে পড়ে। পাইলট যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা না করে সেটা নিয়ে কলকাতা না গিয়ে ফের ঢাকায় ফিরে আসেন। এরপর বেলা দেড়টায় ৭৩৭ উড়োজাহাজ দিয়ে ওই যাত্রীদের কলকাতায় পাঠানো হয়। এ ঘটনায়ও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
১৯৭২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি অভ্যন্তরীণ সেবার মাধ্যমে যাত্রা করে বিমান। ভারত থেকে নিয়ে আসা ম্যাকডনেল ডগলাস ডিসি-৩ ছিল প্রথম সংযোজন। অল্প সময়ের ব্যবধানে বাংলাদেশ বিমানের ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিশ্ব চার্চ কাউন্সিলের কাছ থেকে নিয়ে ডগলাস ডিসি-৬ সংযোজন করা হয়। পরবর্তীতে ডগলাস ডিসি-৬ এর পরিবর্তে ডগলাস ডিসি-৬বি নিয়ে আসা হয়, যা টোল এয়ারের কাছ থেকে লিজ নেওয়া হয়েছিল। ডগলাস ডিসি-৬বি ঢাকা-কলকাতা রুটে চলাচল করত। ১৯৭২ সালের ৪ মার্চ বিমান বাংলাদেশ ব্রিটিশ সরকার থেকে পাওয়া একটি বোয়িং ৭০৭ চার্টার্ড উড়োজাহাজ নিয়ে ঢাক-লন্ডন রুটে প্রথম সাপ্তাহিক আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে। ঢাকা-কলকাতা রুটে নিয়মিত সেবা প্রদানের জন্য ১৯৭২ সালের ৩ মার্চ ভারত থেকে একটি ফকার এফ-২৭ আনা হয়। বর্তমানে বিমানের বহরে ১৪টি উড়োজাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে বোয়িং-৭৭৭-৩০০ ইআর চারটি, বোয়িং-৭৭৭-২০০ ইআর দুটি, এয়ারবাস এ-৩১০ দুটি, বোয়িং-৭৩৭-৮০০ চারটি ও ড্যাশ-৮-কিউ-৪০০ দুটি।