মঙ্গলবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

থমথমে ফুলবাড়িয়া

মামলায় আসামি ৫০০ জন, ১৪৪ ধারা

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

থমথমে ফুলবাড়িয়া

ফুলবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সামনে গতকাল পুলিশের পাহারা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

স্বাভাবিক হয়নি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া। এখনো সেখানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। রবিবারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সরকারি কাজে বাধাদান ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে অজ্ঞাতনামা ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। অন্যদিকে জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে স্থানীয় পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে উপজেলা প্রশাসন। এ ছাড়া শিক্ষকসহ দুজন নিহতের ঘটনায় পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা ও পুলিশ প্রশাসন। ফুলবাড়িয়ায় সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, রবিবারের ঘটনার পর থেকে এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগে ফুলবাড়িয়া থানার উপ-পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাত ৫০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন। এ ছাড়া পথচারী সফর আলীর মৃত্যুর ঘটনায় তার ভাই মুক্তিযোদ্ধা হজরত আলী বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা করেছেন। পুলিশ ঘটনায় জড়িত কাজী গোলাম ফারুক, জুয়েল, নাজমুল হক ও শরীফুল হককে রবিবার রাতে আটকের পর গতকাল বিকালে আদালতে পাঠিয়েছে। ফুলবাড়িয়া পৌর এলাকায় র‌্যাব-পুলিশ টহল দিচ্ছে। তবে থমথমে পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হতে শুরু করেনি। ফুলবাড়িয়া থেকে দূরপাল্লার বাস ও ছোট ছোট যানবাহন জেলা শহরে যাতায়াত করতে দেখা গেছে। রবিবারের ঘটনায় উপজেলাজুড়ে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। এদিকে শিক্ষকসহ দুজন নিহতের ঘটনায় পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা ও পুলিশ প্রশাসন। ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আরিফ আহমেদকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূরে আলমকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পুলিশ প্রশাসন। এ কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য বলা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ময়মনসিংহ অঞ্চলের পরিচালক অধ্যাপক আবদুল মোতালেব, সহকারী পরিচালক মোজ্জাম্মেল হক ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম গতকাল বিকালে ফুলবাড়িয়া পৌঁছে তদন্তকাজ শুরু করেন। তারা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। তদন্ত কমিটির প্রধান অধ্যাপক আবদুল মোতালেব জানান, তারা একটি প্রতিবেদন তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন।

ফুলবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লীরা তরফদার জানান, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের জন্য গতকাল সকাল ৯টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ফুলবাড়িয়া পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। ফুলবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদের লাশ রবিবার রাতে ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। গতকাল ফজরের নামাজের পর শহরে জানাজা শেষে ভোরেই কড়া পুলিশি পাহারায় নান্দাইল উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের কাদিরপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামে লাশ নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখানে স্থানীয় ফুরকানিয়া মাদ্রাসা মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়। এদিকে ফুলবাড়িয়া পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারির ফলে আন্দোলনরতরা তাদের প্রিয় শিক্ষক নিহত আবুল কালাম আজাদের জানাজা কলেজ মাঠে পড়তে পারেননি। পরে তারা পৌর এলাকার বাইরে জোরবাড়িয়া কাচারি মাঠে গায়েবানা জানাজায় অংশ নেন। প্রসঙ্গত, ফুলবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজ সরকারিকরণের দাবিতে রবিবার দুপুরে কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশের লাঠিচার্জে কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ ও পথচারী সফর আলী নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হন অর্ধশতাধিক ব্যক্তি।

শিক্ষকের মৃত্যুতে ঢাকায় বিক্ষোভ : ফুলবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ নিহতের ঘটনায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি। গতকাল বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ কর্মসূচি পালন করে তারা। এ ছাড়া জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শিক্ষক-জনতার হত্যার বিচার ও কলেজ জাতীয়করণের দাবিতে সমাবেশ করেছে ছাত্র ইউনিয়ন। ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লাকী আক্তার অভিযোগ করে বলেন, ক্ষমতাসীনদের ছত্রচ্ছায়ায় এসব ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের নির্যাতন বন্ধে প্রত্যেককে দ্বিদলের চক্র থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অন্যদিকে শিক্ষক সমিতির সমাবেশে নেতারা বলেন, এটি অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ঘটনা, যা কখনো মেনে নেওয়া যায় না। এ দেশে শিক্ষকদের জীবনের কোনো মূল্য নেই। অবিলম্বে দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল করে শিক্ষক সমিতি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর