নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানের পক্ষে নির্বাচন পরিচালনায় সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পেয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সমন্বয় কমিটি ঘোষণা করেন। তিনি জানান, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলনকে কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও খায়রুল কবির খোকন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ ও শহীদুল ইসলাম বাবুল। এ ছাড়া সব অঙ্গ-সংগঠন ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা এই কমিটিতে থাকবেন। খালেদা জিয়ার নারায়ণগঞ্জে সম্ভাব্য সফরকে কেন্দ্র করে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। এনসিসিতে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে চাঙ্গা ভাব লক্ষ্য করা গেছে। ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, চেয়ারপারসনের প্রচারে আইনগত কোনো বাধা নেই। শরীর-স্বাস্থ্য ঠিক থাকলে তিনি নারায়ণগঞ্জে আসবেন। আশা করছি, এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হবে। নেতা-কর্মীরা আরও সুসংহতভাবে কাজ করতে পারবে। জানা যায়, রাতে গুলশানে চেয়ারপারসন কার্যালয়ে গঠিত কমিটি ও নারায়ণগঞ্জ জেলা নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। নারায়ণগঞ্জে দলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশ দেন তিনি। আগামী ৫ ডিসেম্বরের পর থেকে নিয়মিতভাবে কেন্দ্র গঠিত কমিটি নারায়ণগঞ্জে মাঠে থাকবে।
জোটবদ্ধ ভোট : বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের বৈঠকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (এনসিসি) নির্বাচনসহ দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জোটের শরিক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা বিএনপির মেয়র প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেনের পক্ষে কাজ করার ব্যাপারে জোটনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীর প্রধান সমন্বয়ক গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের সঙ্গে তারা সমন্বয় করে কাজ করবেন বলেও অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। গতকাল রাত সাড়ে ৮টায় বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। খালেদা জিয়া শরিক দলের নেতাদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আল্লাহ পাক আমাকে অনেক সম্মান দিয়েছেন। আমি জনগণের জন্য রাজনীতি করি, দেশের স্বার্থে রাজনীতি করি, ব্যক্তিস্বার্থে নয়।’ তিনি বলেন, ‘এক-এগারো সরকার অনেক লোভনীয় প্রস্তাব দিয়েছিল আমাকে। তবে আমি সেগুলো গ্রহণ করে আপস করিনি। ভবিষ্যতেও অবৈধ প্রস্তাব ও দেশবিরোধী কোনো প্রস্তাবে কারও সঙ্গে আপস করব না।’ জোট ভাঙার ষড়যন্ত্র চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জোট ভাঙার ষড়যন্ত্র অতীতেও হয়েছিল। এই অপচেষ্টা ভবিষ্যতেও থাকবে। অতীতে যেমন আপনারা দুঃসময়ে আমার সঙ্গে ছিলেন, আশা করি ভবিষ্যতেও থাকবেন।’ বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘এক-এগারো যারা তৈরি করেছিল তারা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও আমার বিরুদ্ধে অনেক মামলা দিয়েছিল। সব মিথ্যা মামলা ছিল। একই ধরনের মিথ্যা মামলার শেখ হাসিনার মামলাগুলো প্রত্যাহার হয়েছে, অথচ আমারগুলো হয়নি। জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ধ্বংস করার জন্যই এসব মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছিল। বৈঠকে অন্যদের মধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, বিজেপি চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান প্রার্থ, এলডিপি মহাসচিব ড. রেদওয়ান আহমেদ, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাগ্্পা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, বাংলাদেশ লেবার পার্টির ডা. মুস্তাফিজুর রহমান ইরান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। তবে মামলার কারণে আসতে পারেননি জামায়াতের নবনির্বাচিত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান। গতকালের এ বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তার বিরুদ্ধে আখাউড়া এলাকায় ’৭১-এর মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত শুরু হওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের নাশকতার মামলায় পরোয়ানা থাকার কারণে তিনি এতে উপস্থিত হতে পারেননি। একই কারণে দলের নতুন আমির মাওলানা মকবুল আহমেদও আরও আগে থেকেই পলাতক রয়েছেন। তবে তাদের পরিবর্তে মজলিশে শূরার অপর একজন সদস্য বৈঠকে প্রতিনিধিত্ব করেন বলে জানা যায়।
ভোটের সাত দিন আগে সেনা চায় বিএনপি : এনসিসিতে ভোটের এক সপ্তাহ আগেই সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) চিঠি দিয়েছে বিএনপি। গতকাল দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এ চিঠি ইসি সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহর কাছে পৌঁছে দেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।বন্দরে সাখাওয়াতের গণসংযোগ : গতকাল দিনব্যাপী বন্দর এলাকায় গণসংযোগ করেছেন সাখাওয়াত হোসেন খান। এ সময় তিনি বলেন, যেখানেই যাচ্ছি সেখানেই মানুষের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। মানুষ খুবই উচ্ছ্বসিত। ধানের শীষে ভোট দিয়ে গণতন্ত্রের বিপ্লবের জন্য মানুষ মুখিয়ে রয়েছে।
বিভিন্ন এলাকায় বাজারের দোকান ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে দোয়া ও ভোট প্রার্থনা করেন তিনি।
শীতলক্ষ্যা নদীর পাড় এলাকায় প্রচারকালে সাখাওয়াত বলেন, স্থানীয় এমপি ও মেয়রের কূটকৌশলের কারণেই আপনাদের শীতলক্ষ্যা সেতু হয়নি। আমি বিজয়ী হলে কষ্ট করে হলেও একটি সেতু নির্মাণ করব।