বুধবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন

লঙ্ঘনের হিড়িক আচরণবিধি

রোমান চৌধুরী সুমন ও এম এ শাহীন, নারায়ণগঞ্জ থেকে

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে (এনসিসি) ১৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী মো. আকরাম হোসেন। নির্বাচনী প্রতীক বরাদ্দের আগেই প্রচারপত্র তৈরি করে গণসংযোগ শুরু করে দিয়েছেন তিনি। নিজেকে জনদরদি, গরিবের বন্ধু, ধর্মানুরাগী ও বিশিষ্ট সমাজ সেবক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত এলাকা গড়ার প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরিও দিচ্ছেন তিনি। আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে নৌকা প্রতীকে মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিরুদ্ধে। গতকাল নগরীর শহীদনগর এলাকায় এক গণসংযোগ অনুষ্ঠানে নেতা-কর্মীরা আইভীর পক্ষে নৌকা প্রতীকের স্লোগান দিয়ে ভোট চান। এমন কি মেয়র প্রার্থী আইভীও রাস্তায় বেরিয়ে আসা নারীদের কাছে ভোট প্রার্থনা করেন। মেয়র পদে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান। গতকাল তিনি বন্দর এলাকায় নিজের ছবি সংবলিত প্রচারপত্র বিলি করেন। নির্বাচনে বিজয়ী হলে শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণের প্রতিশ্রুতিও দেন। শুধু এই দুই প্রার্থীই নয়, আগামী ২২ ডিসেম্বর এনসিসি নির্বাচনকে ঘিরে প্রতীক বরাদ্দের আগেই প্রায় সব প্রার্থীই আচরণবিধি লঙ্ঘন করে গণসংযোগ চালাচ্ছেন। পোস্টার-লিফলেট বিতরণ করছেন। উন্নয়নমূলক নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। নির্বাচনে আটজন মেয়র প্রার্থীর পাশাপাশি শতাধিক ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষে কোনো রাজনৈতিক দল, অন্য কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান প্রতীক বরাদ্দের আগে কোনো প্রকার নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে বিধি অনুযায়ী ওই প্রার্থীকে জেল-জরিমানার পাশাপাশি সর্বোচ্চ প্রার্থিতা বাতিল করতে পারে নির্বাচন কমিশন। নারায়ণগঞ্জ জেলা নির্বাচন অফিসার তারিফুজ্জামান বলেন, ‘প্রতীক বরাদ্দের আগে যে কোনো প্রকার প্রচারই আচরণবিধি লঙ্ঘন। লিফলেট দিয়ে দোয়া চাওয়াও আচরণ বিধি লঙ্ঘন। কোনো প্রার্থীই প্রতীক বরাদ্দের আগে এসব প্রচারণা করতে পারেন না। এ বিষয়ে তাদের একটি নির্দেশিকাও দেওয়া হয়েছে। যারা লঙ্ঘন করবেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ জানা যায়, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের আহ্বায়ক মতিউর রহমান মতির বিরুদ্ধেও আচরণবিধি লঙ্ঘন করে ঘুড়ি প্রতীক নিয়ে গণসংযোগ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি সুমিলপাড়া এলাকায় মতবিনিময় সভার ব্যানারে ঘুড়ি প্রতীক নিয়ে উঠান বৈঠক করেন। পরে মতিউর রহমানের পক্ষে কয়েকশ নারী বিভিন্ন সড়ক ঘুরে ‘মতি ভাইয়ের মার্কা, ঘুড়ি মার্কা’ বলে স্লোগান দেন। এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের আহ্বায়ক মতিউর রহমান বলেন, সভায় কয়েকজন ঘুড়ি প্রতীক নিয়ে এসেছিলেন। তাদের একজন একটি ঘুড়ি আমার হাতে দিয়েছেন। এর বেশি কিছু নয়। রবিবার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী মিনহাজুল কাদিরের একটি দোয়ার অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তারা। ওই অনুষ্ঠানের আয়োজকরা বলছেন, এটা কোনো নির্বাচনী প্রচারণা কিংবা এ সংক্রান্ত ছিল না। নিছক দোয়া কিন্তু সেটাও বন্ধ করে দিয়েছে। তবে নির্বাচন কর্মকর্তারা বলছেন, একজন প্রার্থীর পক্ষে দোয়া করায় সেটা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে সহকারী রিটার্নিং অফিসার ওমর ফারুক জানান, একজন প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণার অংশ হিসেবে দোয়ার সময়ে আমরা সেখানে গিয়ে প্রথমে বক্তব্য শুনে নিশ্চিত হই। পরে সেটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

১৩ নম্বর ওয়ার্ডে মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রবিউল হোসেন প্রথম থেকেই নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে চলেছেন। প্রতীক বরাদ্দের আগে নির্বাচনী ব্যানার, ফেস্টুন এসব নিষিদ্ধ ঘোষণা করে খুলে ফেলতে বললেও ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় এখনো রবিউলের ব্যানার ফেস্টুন সাঁটানো রয়েছে। এ ছাড়া রবিউলও প্রতিদিন মিছিল করে গণসংযোগ করছেন। সন্ধ্যার পর মিছিল নিয়ে ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় ভোট চাইছেন তিনি। ২১ নম্বর ওয়ার্ডে সোমবার সন্ধ্যায় বন্দরের নোয়াদ্দা এলাকায় আওয়ামী লীগ সমর্থক কাউন্সিলর প্রার্থী খোরশেদ আলম মতবিনিময় সভা করেন। তিনি ওই মতবিনিময় সভা ও উঠান বৈঠকে এলাকাবাসীর কাছে ভোট ও দোয়া প্রার্থনা করেন। বৈঠক শেষে কর্মী সমর্থকদের নিয়ে এলাকায় মিছিল করেন কাউন্সিলর প্রার্থী খোরশেদ আলম। এ ছাড়াও অপর প্রার্থী আবদুল হান্নান সরকারও সমানতালে মতবিনিময় সভা ও উঠান বৈঠকে এলাকাবাসীর কাছে ভোট ও দোয়া প্রার্থনা করেন। ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কোটপাড়া, ঠাকুরবাড়ি, কলোনি, স্বল্পের চক, উইলসন রোড, এইচ এম সেন রোড এলাকায় কাউন্সিলর প্রার্থী শাহ আলম দোয়া অনুষ্ঠানের নামে বিশাল গণসংযোগ করেন। ২ নম্বর ওয়ার্ডে সাত খুনের আসামি নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটির পক্ষে দোয়া ও ভোট চেয়েছেন তার পুত্র তারিকুল ইসলাম নাঈম। সোমবার সন্ধ্যায় মিজমিজি পশ্চিমপাড়া ও সাহেবপাড়া এলাকায় গণসংযোগ করেন। ৩ নম্বর ওয়ার্ডে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকায় মতবিনিময় সভার নামে গণসংযোগ চালাচ্ছেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক শাহজালাল বাদল। তিনি ৩ নম্বর ওয়ার্ড মুক্তিনগর এলাকার বিভিন্ন মার্কেটে দোকান মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে নির্বাচনী মতবিনিময় সভা করেছেন। এ ছাড়াও তিনি রসুলবাগ এলাকার ভোটারদের সঙ্গে মুরব্বিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করছেন। বসে নেই ৭ নম্বর কাউন্সিলর প্রার্থী থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক বর্তমান কাউন্সিলর আলী হোসেন আলাও। তিনি কদমতলী, নয়াপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট ও দোয়া প্রার্থনা করছেন বলে এলাকাবাসী জানায়। ৮ নম্বর ওয়ার্ডে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের কাছে ভোট ও দোয়া চাইছেন কাউন্সিলর প্রার্থী রুহুল আমিন মোল্লা। এ সময় তিনি এলাকাবাসীর কাছে তাদের উন্নয়নের ফিরিস্থি তুলে ধরছেন। এ ছাড়া ২৭ নম্বর ওয়ার্ডেও বর্তমান কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম প্রতিদিনই মুরাদপুর, বঙ্গশাসন, কুড়িপাড়া ও ফুলহর এলাকায় উঠান বৈঠক ও গণসংযোগ করে দোয়া ও ভোট চাইছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর