শুক্রবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

স্কাই ইজ দ্য টার্গেট

ড. আবুল হাসনাৎ মিল্টন

শেখ হাসিনাকে অন্তত উনিশবার হত্যার অপচেষ্টা করা হয়েছে। তার মধ্যে একুশে আগস্টের মতো নির্মম হত্যাযজ্ঞও অন্তর্ভুক্ত। এত কিছুর পর তার বেঁচে থাকার কথা নয়, তবু তিনি বেঁচে আছেন। পরম করুণাময় আল্লাহ নিশ্চয়ই তাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। ‘রাখে আল্লাহ মারে কে?’ প্রবচনটি তার জন্য শতভাগ প্রযোজ্য।         

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার নিরাপত্তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট সবাই সতর্ক। অন্তত জলে-স্থলে দৃশ্যমান নিরাপত্তা তৎপরতায় তাই মনে হয়। নিরাপত্তার ছিদ্র গলে তার ক্ষতি করা তাই দুঃসাধ্যই বটে। তবে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় আকাশপথের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যায় না। ২৭ নভেম্বর ঢাকা থেকে হাঙ্গেরি যাওয়ার পথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের ভিভিআইপি ফ্লাইটে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে তুর্কমেনিস্তানের রাজধানী আশখাবাদে জরুরি অবতরণ করা হয়। পরে তদন্তে জানা গেছে, একটি নাট ঢিলা থাকায় মবিল পড়ে গিয়ে ইঞ্জিনে ওয়েল প্রেসার কমে যাওয়ার দরুন যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ার জন্যই বিমানটির জরুরি অবতরণ করতে হয়েছে। যদি কোনো কারণে জরুরি অবতরণ সম্ভব না হতো, তাহলে হয়তো ভয়াবহ কোনো দুর্ঘটনাও ঘটে যেতে পারত। এখন মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন হলো, এত নিরাপত্তা তল্লাশির পরও একটি বিমানের ভিভিআইপি ফ্লাইটে কী করে ত্রুটি থাকে? এ ত্রুটি কি ইচ্ছাকৃত? বৃহৎ কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ?

আমরা ঘরপোড়া গরু। সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পাই! বিশেষ করে যখন জানতে পারি, পরপর চার দফায় গোয়েন্দা ক্লিয়ারেন্স না পাওয়া সত্ত্বেও বিমানের ম্যানেজমেন্ট জনৈক পাইলটকে এবার প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী ফ্লাইটের ক্যাপ্টেন হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে। সূত্রে আরও প্রকাশ, এই পাইলটের জন্য গোয়েন্দা ক্লিয়ারেন্স পেতে তদবির করেছেন বিমানের একজন জেনারেল ম্যানেজার ও একজন বোর্ড মেম্বার। তারা কারা? তাদের স্বার্থই বা কী? তাদের কোনো অতীত বা বর্তমান রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা?

এবারই প্রথম নয়। গত জুনেও প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানটি ঢাকা বিমানবন্দরে অবতরণের সময় রানওয়েতে ধাতব বস্তু পড়ে থাকায় নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়েছিল। এখন আবার আরেকভাবে বিমানের নিরাপত্তা নিয়ে সমস্যা হলো। এসব হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। আমরা জানি, প্রধানমন্ত্রীর জীবন সর্বক্ষণই নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে। যে কোনোভাবেই তাকে ক্ষমতা, প্রয়োজনে পৃথিবীর বুক থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য শত্রুপক্ষ সক্রিয়। এই শত্রুপক্ষের আন্তর্জাতিক দোসর একটি বিশেষ দেশ অতীতে তার নিজ রাষ্ট্রপতিকেও আকাশপথে বিমান দুর্ঘটনার নামে খুন করতে দ্বিধা করেনি।

আকাশপথে প্রধানমন্ত্রীর চলাচলের জন্য বোয়িং নয়, অত্যাধুনিক সুযোগসংবলিত একটি বিমান কেনা এখন সময়ের দাবি। সেই সঙ্গে বিমানযাত্রায় নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নিশ্ছিদ্র করে গড়ে তুলতে হবে। জলে-স্থলে বার বার ব্যর্থ হয়ে এবার হয়তো আকাশপথই শত্রুদের টার্গেট। লেখক : অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী কবি ও চিকিৎসক।

সর্বশেষ খবর