শুক্রবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

আদালতে নিজেকে নির্দোষ দাবি খালেদা জিয়ার

নিজস্ব প্রতিবেদক

আদালতে নিজেকে নির্দোষ  দাবি খালেদা জিয়ার

আদালতে খালেদা জিয়া

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আদালতে বলেছেন, ‘আমি নির্দোষ। আদালতের কাছে ন্যায়বিচার চাই। মিথ্যা ও সাজানো মামলায় বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মী এখন কারাগারে বন্দী। বিএনপির চার লাখের বেশি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ২৫ হাজারের মতো     মামলা দেওয়া হয়েছে। নেতা-কর্মীরা নির্যাতন ও হয়রানির ভয়ে ঘরে থাকতে পারছেন না। ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।’ গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকার বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা-সংলগ্ন মাঠে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালত-৩-এর অস্থায়ী এজলাসে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে গিয়ে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন এবং এই ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেন খালেদা জিয়া। আদালতে বিচার কার্যক্রমের শুরুতেই এ মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ও ৩২ জন সাক্ষীর দেওয়া সাক্ষ্যের সারসংক্ষেপ পড়ে শোনান বিচারক। বিচারক খালেদা জিয়ার কাছে সাক্ষীদের সাক্ষ্য ও অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার কামনা করেন। বিচারক মামলায় সাফাই সাক্ষীর বিষয়ে জানতে চাইলে খালেদা জিয়া বলেন, মামলায় সাফাই সাক্ষী দেওয়া হবে। পরে বিচারক আরও বলেন, ‘আপনি (খালেদা জিয়া) কি এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেবেন?’ জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি বক্তব্য দেব।’ এ সময় তিনি আদালতকে জানান, তিনি লিখিত কোনো বক্তব্য দেবেন না। নিজেই আদালতে মৌখিক বক্তব্য দেবেন। এর জবাবে আদালত জানান, বেগম খালেদা জিয়া যত ঘণ্টা বক্তব্য দিতে চান, দিতে পারবেন। সব বক্তব্য লিখে নেওয়া হবে। এরপর আত্মপক্ষ সমর্থন করে খালেদা জিয়া তার বক্তব্য প্রদান শুরু করেন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট বক্তব্য দেন বিএনপিপ্রধান। পরে আদালত ৮ ডিসেম্বর আত্মপক্ষ সমর্থনের পরবর্তী শুনানির তারিখ ধার্য করেন।

আদালতে দেওয়া বক্তব্যে খালেদা জিয়া বলেন, ‘সারা জাতি আজ লাঞ্ছিত, নির্যাতিত। সমগ্র বাংলাদেশকে আজ এক বিশাল কারাগার বানানো হয়েছে। সবখানে চলছে অস্থিরতা ও গভীর অনিরাপত্তা বোধ। নির্যাতন, হয়রানি ও গ্রেফতারের ভয়ে বহু নেতা-কর্মী ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। গুম, খুন, অপহরণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বিরোধী দলের অসংখ্য নেতা-কর্মী। এখন সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বড় বেশি বলা হয়। কিন্তু কোথায় আজ সাংবিধানিক শাসন? সংবিধান নাগরিকদের যে অধিকার দিয়েছে কোথায় আজ সে অধিকার? কোথায় আজ সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার?’ বক্তব্যের পর বেগম জিয়া বিচারকের উদ্দেশে বলেন, ‘আজ আর বক্তব্য দিতে চাই না। আত্মপক্ষ সমর্থনের কপিটা চাই।’ তখন বিচারক খালেদা জিয়ার আবেদন মঞ্জুর করে পরবর্তী বক্তব্যের জন্য আগামী ৮ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেন।

১০ মামলায় হাজিরের নির্দেশ : রাষ্ট্রদ্রোহের একটি ও নাশকতার নয়টি— মোট ১০টি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে আগামী ৯ জানুয়ারি আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। গতকাল ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লার আদালতে এই ১০ মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন ধার্য ছিল। খালেদা জিয়া আদালতে হাজির না হওয়ায় সময়ের আবেদন করেন তার আইনজীবী জয়নাল আবেদীন মেজবাহ। আদালত সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে বলেন, ৯ জানুয়ারি খালেদা জিয়াকে আদালতে উপস্থিত হতে হবে। যদি তিনি উপস্থিত না হন তাহলে তার জামিন বাতিল করা হবে। খালেদার বিরুদ্ধে মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে— দারুসসালাম থানায় নাশকতার আটটি, রাষ্ট্রদ্রোহের একটি ও যাত্রাবাড়ী থানার বিস্ফোরক আইনে একটি। রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আজকে বলা হয় এত লাখ শহীদ হয়েছে, এটা নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে।

তিনি বলেন, ‘তিনি (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাননি। তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা না দিলে মুক্তিযুদ্ধ হতো না।’ সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ড. মোমতাজ উদ্দিন আহমদ মেহেদী ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৬ ধারা মোতাবেক রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার অনুমোদনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানান। ২০১৬ সালের ২১ জানুয়ারি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার অনুমোদন দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরপর ২৫ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর হাকিম রাশেদ তালুকদারের আদালতে আইনজীবী ড. মোমতাজ উদ্দিন আহমদ মেহেদী ১২৩(ক), ১২৪(ক) ও ৫০৫ ধারায় নালিশি মামলা করেন। ৩ মার্চ আদালতে হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করে আদালত এবং ৫ এপ্রিল এ মামলায় খালেদা জিয়া আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন।

সর্বশেষ খবর