শুক্রবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
নারায়ণগঞ্জ নির্বাচন

পাল্টাপাল্টি অভিযোগ সাখাওয়াত-আইভীর

রোমান চৌধুরী সুমন ও এম এ শাহীন, নারায়ণগঞ্জ

নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগে মতবিনিময় সভায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে (নাসিক) আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। নির্বাচন কমিশনার (ইসি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাবেদ আলীর সঙ্গে সাত মেয়র প্রার্থী মতবিনিময় সভায় অংশ নেন। তবে আইভী ও সাখাওয়াত পাশাপাশি বসলেও পাল্টাপাল্টি অভিযোগে কিছুক্ষণের মধ্যেই পাল্টে যায় দৃশ্যপট। পাশাপাশি বসলেও একপর্যায়ে আইভী ও সাখাওয়াত একে অন্যের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। গতকাল বেলা ১১টায় জেলা প্রশাসনের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় এ ঘটনা ঘটে। জেলা প্রশাসক রাব্বী মিয়ার সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন নির্বাচন কমিশনার জাবেদ আলী। মতবিনিময়ে অংশ নেন পুলিশ সুপার মইনুল হক, রিটার্নিং কর্মকর্তা নুরুজ্জামান তালুকদার, নির্বাচন কর্মকর্তা তারিফুজ্জামানসহ নির্বাচনসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্মকর্তা। প্রায় আড়াই ঘণ্টা মতবিনিময়ে প্রার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবও দেন জাবেদ আলী। একে অন্যের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগের একপর্যায়ে আইভী রসিকতার সঙ্গে বিএনপির সাখাওয়াতকে বলেন, ‘আপনি কি সাঁতার জানেন? নির্বাচনে হাত-পা বেঁধে ছেড়ে দিলে সাঁতরাতে পারব না। ডুবে মরতে হবে।’ আইভীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে শুরুতেই বিএনপি প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, ‘সরকারদলীয় মেয়র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা শহরের ২ নম্বর ব্যস্ততম সড়ক বন্ধ করে মিছিল করেছেন। প্রতীক বরাদ্দের দিনও মিছিল করেছেন। আমার পোস্টার ছিঁড়ে নৌকার পোস্টার সাঁটানো হচ্ছে। ভিডিওসহ এর প্রমাণ রয়েছে। ইউটিউবে এ ভিডিও আপলোড হয়েছে। গণভবনে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে এমপিকে নির্দেশ দিয়েছেন। এটা আচরণবিধিরও লঙ্ঘন। এ ছাড়া এমপির কার্যালয়ে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে সভা হচ্ছে। এসব বিষয়ে ইসিকে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। এ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সেনাবাহিনী প্রয়োজন বলে মনে করছি। দলবাজ কিছু পুলিশ কর্মকর্তাকে সরাতে হবে।’ জবাবে সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের মতো দোষ না ধরে আসুন সবাই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিই। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করি। আমি কারও দান, দাক্ষিণ্য ও আশীর্বাদ নিয়ে পাস করতে চাই না। আপনারা জানেন আমি কত চাপের মুখে থাকি। ২০১১ সালে কত শঙ্কার মধ্যে থেকেও সুষ্ঠু ভোটে জনগণের রায়ে নির্বাচিত হয়েছি। ভোটাররা যাকে খুশি ভোট দেবেন। তিনিই মেয়র হবেন। আমি সরকারি দলের সুবিধা চাইও না, নিইও না। দিলেও নেব না। আর আমার কর্মীদের মধ্যে পোস্টার ছেঁড়ার মতো কোনো লোক নই। সবাই জানেন আমি কেমন। নির্বাচনে আছেন বলে মিথ্যা বলতে হবে এটা ঠিক নয়।’ এ সময় বিএনপি প্রার্থী সাখাওয়াত আসন ছেড়ে দাঁড়িয়ে যান। প্রতিবাদ জানিয়ে ইসির দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘আমাকে মিথ্যাবাদী বলা হয়েছে। আমি এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমার কাছে ভিডিও ফুটেজ আছে যে ওনার কর্মীরা পোস্টার ছিঁড়েছেন ও আচরণবিধি লঙ্ঘন করে মিছিল করছেন।’ জবাবে ইসি বলেন, ‘বিএনপি প্রার্থী আপনি একজন আইনজীবী। আপনি ভালো আইন জানেন, বসেন।’ এ সময় নিজ আসনে বসে পড়েন সাখাওয়াত। এরপর আইভী বলেন, ‘আমরাও সবাই সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। কেন্দ্রীয় নেতারা এলে হাজার হাজার কর্মী ভিড় জমান। আর ২ নম্বর রেলগেটে সভা হলেই ভিড় লেগে থাকে। আমি গণসংযোগে গেলে শত শত হাজার হাজার মানুষ মাঠে নেমে আসেন। আমি তো তাদের তাড়িয়ে দিতে পারি না। অস্ত্রধারী যদি আমার ভাইও হয়, তাকে গ্রেফতার করুন। এতে কোনো ছাড় নেই।’

অন্যায় বরদাস্ত করা হবে না : প্রার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে জাবেদ আলী বলেন, ‘নাসিক নির্বাচনে কোনো অন্যায় বরদাস্ত করা হবে না। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হবে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও বৈধ অস্ত্র জমা নেওয়া হবে। আমাদের প্রতিটি কাজ হবে স্বচ্ছ। নাসিক নির্বাচন সারা দেশে মডেল হয়ে থাকবে। আমরা আশাবাদী আপনারা আচরণবিধি মেনে চলে সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করবেন। প্রার্থীদের কেউ কারও শত্রু নন। আপনারা একে অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বী মাত্র। একই এলাকার বাসিন্দাও। তবে নির্বাচনে পথ এখন আলাদা। নির্বাচনের সবচেয়ে বড় নিয়ামক ভোটার। এখন আপনাদের দায়িত্ব তাদের উৎসাহিত করা। আর ভালো ভোটাররা প্রার্থীর অতীত বর্তমান বিবেচনা করে ভোট দেন।’

সিদ্ধিরগঞ্জে ধানের শীষের ব্যাপক শোডাউন : নারায়ণগঞ্জে তিন থানায় তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছে বিএনপি। নাসিক নির্বাচনের সমন্বয়ক ও বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে কয়েক হাজার নেতা-কর্মীর শোডাউন হয় সিদ্ধিরগঞ্জে। এর আগে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সিদ্ধিরগঞ্জের ওমরপুরে থানা এলাকার প্রধান নির্বাচনী অফিস উদ্বোধন করেন তিনি। এরপর সেখান থেকে পায়ে হেঁটে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী নিয়ে ধানের শীষের প্রচারণা শুরু করেন। ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগ করে বিকাল সাড়ে ৪টায় মৌচাক বাসস্ট্যান্ডে প্রচারণা শেষ করেন।

এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আওয়াল মিন্টু, কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, আবুল খায়ের ভুইয়া, হাবিবুর রহমান হাবিব, আবদুস সালাম, শামা ওবায়েদ, হাবিবুর রশিদ হাবিব, নাজিম উদ্দিন আলম, অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া, বাবুল আহমেদ, কাজী মনিরুজ্জামান মনির, মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভূইয়া, অধ্যাপক মামুন মাহমুদসহ জাতীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।

আইভীর গণসংযোগ : বিকালে শহরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের অলিগলিতে প্রচারণা চালিয়েছেন আইভী। এ সময় তিনি উন্নয়নের যাত্রা অব্যাহত রাখতে নৌকায় ভোট দিতে সর্বস্তরের মানুষের প্রতি আহ্বান জানান। বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বন্দর থানার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের মুরাদপুর, নাজিগঞ্জ, হরিপুর, বঙ্গশাসন, লালকারবাগ, কুড়িপাড়া, গকুল দাশের বাগ, চাপাতলী ও ফুলহরে গণসংযোগ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুল হাই, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আরজু রহমান ভূইয়া, মদনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মো. নাজিমউদ্দিন প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর