রবিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন এম জে আকবর

ভারত সফর ফেব্রুয়ারিতে

অভিবাসীদের দুর্দশা লাঘবে আন্তর্জাতিক মহলকে সচেষ্ট হওয়ার তাগিদ শেখ হাসিনার

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

ভারত সফর ফেব্রুয়ারিতে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গতকাল গণভবনে সাক্ষাৎ করেন ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর —বাসস

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে দ্বিপক্ষীয় সফরে নয়াদিল্লি যাচ্ছেন। সফররত ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর গতকাল সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের জানান, ‘আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এখন দুই দেশের কর্মকর্তারা বসে তা ঠিক করবেন।’ জানা যায়, আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা না এলেও আগামী ১৮ ডিসেম্বর তিন দিনের সফরে নয়াদিল্লি যাওয়ার কথা ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। কিন্তু তা শেষ মুহূর্তে স্থগিত হয়ে যায়। গত বুধবার প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর পিছিয়ে ফেব্রুয়ারিতে করার জন্য নয়াদিল্লিকে অনুরোধ জানায় ঢাকা। সম্ভাব্য নতুন সময়সূচি বের করতে ভারত কাজ করছে। সেই সময়টা খুঁজে পাওয়ার পর তা নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে শেখ হাসিনার এই সফর হবে। গত বছরের জুনে নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের ফিরতি হিসেবে এ সফরের আয়োজন করা হচ্ছে। এসময় দুই দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ নানান চুক্তি স্বাক্ষর হবে বলে জানা গেছে।

প্রধানমন্ত্রীর বিমানের জরুরি অবতরণে উদ্বেগের কথা জানালেন এম জে আকরর : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবরের সৌজন্য সাক্ষাতে দ্বিপক্ষীয় নানান বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান প্রেস সচিব ইহসানুল করিম। তিনি বলেন, ‘আলোচনায় শেখ হাসিনার হাঙ্গেরি সফরের সময় তুর্কমেনিস্তানে বিমানের জরুরি অবতরণের বিষয়টিও আসে। এমজে আকবর এ ব্যাপারে ভারতের উদ্বেগ-উত্কণ্ঠার কথা জানান। তুর্কমেনিস্তানে বিমানের জরুরি অবতরণের খবর পেয়ে সেদেশে ভারতের রাষ্ট্রদূত এবং সফররত ভারতীয় মন্ত্রীর তাত্ক্ষণিক বিমানবন্দরে গিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সে কথা স্মরণ করেন।

এদিকে, গত শুক্রবার বিকালে তিন দিনের সফরে ঢাকা পৌঁছান ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর। গতকাল তিনি নানান কর্মসূচিতে ব্যস্ত দিন কাটান। তিনি গ্লোবাল ফোরাম অন মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (জিএফএমডি) এর সম্মেলনে যোগ দেয়া ছাড়া প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলীর সঙ্গে সাক্ষা, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে বৈঠক ও বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে আলোচনা করেন। আজ সকালে নয়াদিল্লীর উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করার কথা রয়েছে এমজে আকবরের।

প্রত্যেক অভিবাসীর মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে : অভিবাসীদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করে তাদের মর্যাদা সুনিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, প্রত্যেক অভিবাসী যেন মর্যাদা পায় এবং নিরাপদে চলাফেরা ও কাজ করতে পারে সে বিষয়টি নিশ্চিত করা দরকার। গতকাল সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘নবম গ্লোবাল ফোরাম অন মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (জিএফএমডি)’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন তিনি। গত বছর তুরস্কের কাছ থেকে বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান পদ লাভ করে। প্রধানমন্ত্রী জিএফএমডির সভাপতি পদে বাংলাদেশকে সমর্থনদানের জন্য সব বন্ধু এবং সহযোগীদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একজন অভিবাসী শুধু একজন শ্রমিক নন। প্রত্যেক অভিবাসীর বলার মতো একটি অসাধারণ গল্প আছে। একজন অভিবাসী যখন তার পরিবার এবং দেশ ত্যাগ করেন, তখন তাকে অনেক কিছু বিসর্জন দিতে হয়। অভিবাসীরা তাদের উদ্ভাবনী শক্তি, শ্রম এবং সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে স্বাগতিক দেশের সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখে। তারা নিজের জীবনের সবচেয়ে মূলবান সময় অন্যের জন্য ব্যয় করে। আমরা অনেক সময় তাদের মানবিক বিষয়গুলো এবং মানুষ হিসেবে ন্যূনতম অধিকারগুলোর প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করি।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অভিবাসী সংক্রান্ত বিষয়গুলো বিশ্ব সম্প্রদায়ের গভীর মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। এ ব্যাপারে কিছু অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। আমরা এখন স্বীকার করি যে, অভিবাসন বিভিন্ন সম্প্রদায়, অর্থনীতি এবং সমাজের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে। শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং প্রবৃদ্ধির জন্যও অভিবাসন সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আগামী ২০১৭ সালে জিএফএমডি বৈশ্বিক পর্যালোচনায় প্রবেশ করছে। তাই আমাদের অবশ্যই অভিবাসীদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে এবং কাজ করতে হবে। অভিবাসন আর কোনোভাবেই ‘আমাদের’ এবং ‘তাদের’ মধ্যেকার বিষয় নয়, এটা সব মানুষের এবং সব রাষ্ট্রের সমৃদ্ধি ও কল্যাণ সম্পর্কিত বিষয়। শেখ হাসিনা বলেন, মানুষ শুধু কাজের জন্য নয়, বহুবিধ কারণে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বিচরণ করে। বিশ্বায়নের এ যুগে বিপুলসংখ্যক মানুষের বিচরণ অব্যাহত থাকবে। সুতরাং আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, আমরা কীভাবে মানুষের চলাফেরা আরও নিরাপদ, নিয়মিত ও সুশৃঙ্খল করতে পারি। পাশাপাশি নিশ্চিত করা প্রয়োজন যে, একজন ব্যক্তি যেন তার ইচ্ছানুযায়ী চলাফেরা করতে পারেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অভিবাসন এবং অভিবাসীকে ভয় পাওয়ার বা তাদের এড়ানোর কোনো কারণ নেই। বরং অভিবাসন সুশাসনে উপযুক্ত পরিকাঠামো প্রণয়নের মাধ্যমে অভিবাসনের রূপান্তরমূলক সম্ভাবনাকে কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায় তা আমাদের ভেবে দেখা প্রয়োজন। অভিবাসন একটি জটিল মানবিক ব্যাপার। তিনি বলেন, গত এপ্রিলে বাংলাদেশ একটি ব্যাপকভিত্তিক ‘গ্লোবাল কমপ্যাক্ট ফর মাইগ্রেশন গভর্নেন্স’ প্রস্তাব জাতিসংঘে পেশ করেছে। গত সেপ্টেম্বরে অভিবাসন ও উদ্বাস্তু সংক্রান্ত জাতিসংঘ শীর্ষ সম্মেলনে আমি এটা দেখে আনন্দিত হয়েছি যে, বিশ্ব আমাদের মাইগ্রেশন কমপ্যাক্ট প্রস্তাবটি গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, বর্তমানে আমরা বিভিন্ন রাষ্ট্র এবং নাগরিক সমাজের সঙ্গে অভিবাসী এবং উদ্বাস্তু সংক্রান্ত একটি ব্যাপকভিত্তিক বৈশ্বিক চুক্তি বা কমপ্যাক্টে উপনীত হওয়ার জন্য কাজ করছি, যাতে তা ২০১৮ সাল নাগাদ জাতিসংঘ কর্তৃক অনুমোদিত হয়। ১২৫টি দেশের প্রতিনিধি এবং জাতিসংঘের ৩০টিরও অধিক সংস্থা, আন্তর্জাতিক সংস্থা, গ্লোবাল সিভিল সোসাইটি এবং ব্যবসায়ী সংস্থার প্রতিনিধি তিন দিনব্যাপী জিএফএমডি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করছেন। অভিবাসন ও বৈশ্বিক শরণার্থী পরিস্থিতির করণীয় নানা বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে এই সম্মেলনে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন জাতিসংঘের ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্স সম্পর্কিত আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল উ হংবো, আইওএমের মহাপরিচালক রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম লেসি সুইং, আইএলওর মহাপরিচালক গাই রাইডার, জাতিসংঘের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল লক্ষীপুরী এবং জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসনবিষয়ক সিনিয়র অ্যাডভাইজর ফ্রাংকোয়িস ফৌনাট, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, এলজিআরডি ও সমবায় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম। 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর