শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

রাষ্ট্রপতিকে ভুল বোঝানো হয়েছে : আপিল বিভাগ

বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির গেজেট প্রকাশে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশের প্রয়োজন নেই বলে রাষ্ট্রপতি সিদ্ধান্ত দেওয়ার পরদিনই ওই গেজেট দাখিলের জন্য আবারও সময় বেঁধে দিয়েছে আপিল বিভাগ। শুনানিতে আদালত বলেছে, রাষ্ট্রপতিকে এ বিষয়ে ভুল বোঝানো হয়েছে। পরে আগামী ১৫ জানুয়ারি গেজেট দাখিলের নতুন তারিখ ধার্য করা হয়েছে। গতকাল প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হয়।

শুনানিতে আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক এবং লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক

বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হক আদালতের নির্দেশে হাজির হন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানি করেন। তিনি গেজেট-সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে আদালতের কাছে দুই মাস সময়ের আবেদন করলে আদালত ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দেয়। এর আগে ১১ ডিসেম্বর আইন মন্ত্রণালয়ের এক নোটিসে জানানো হয়, নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশের প্রয়োজন নেই বলে রাষ্ট্রপতি সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। গতকালের শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মন্ত্রণালয়ের আদেশ পড়ে শোনান। চিঠিতে বলা হয়েছে, উপর্যুক্ত বিষয়ে নির্দেশিত হয়ে জানানো যাচ্ছে যে, বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের জন্য পৃথক আচরণ বিধিমালা, শৃঙ্খলা বিধিমালা এবং বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (সার্ভিস গঠন, সার্ভিস পদে নিয়োগ ও বরখাস্তকরণ, সাময়িক বরখাস্তকরণ ও অপসারণ) বিধিমালা-২০০৭ সংশোধনকল্পে সুপ্রিমকোর্টের প্রস্তাবিত খসড়া বাংলাদেশ গেজেটে প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা নেই মর্মে মহামান্য রাষ্ট্রপতি সানুগ্রহ সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন। এরপর আদালত বলে, ‘পার্লামেন্টারি সিস্টেমে রাষ্ট্রপতি নামমাত্র। যা আপনারা পাঠিয়েছেন তিনি তা-ই করবেন।’ আদালত বলে, ‘মাসদার হোসেন মামলার ৮০ শতাংশ রায় সরকার মেনে নিয়েছে। নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ-সংক্রান্ত বিধির এই খসড়া সরকার দিয়েছে। এটা ভুল বোঝাবুঝির বিষয় নয়। অনেক সময় দেওয়া হয়েছে। আমরা অনেক সময় দিয়েছি। আমরা এখান থেকে ব্যাক করব না।’ শুনানির একপর্যায়ে আইন সচিব বলেন, আদালত যেভাবে বলবে সেভাবেই হবে। পরে আদালত বিষয়টি ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত মুলতবি করে। গেজেট প্রকাশের ক্ষেত্রে ওই দিন পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়। নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশের ক্ষেত্রে আদালতের কাছ থেকে কয়েক দফা সময় নিয়েছে সরকার। সর্বশেষ ১ ডিসেম্বর আপিল বিভাগ গেজেট প্রকাশ করতে রাষ্ট্রপক্ষকে এক সপ্তাহ সময় দেয়। এরপর নির্ধারিত তারিখেও গেজেট প্রণয়ন না হওয়ায় ৮ ডিসেম্বর আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের এবং লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সচিবকে তলব করে আদালত। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল তারা আদালতে হাজির হন। ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেন মামলায় (বিচার বিভাগ পৃথক্করণ) ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে আপিল বিভাগ যে রায় দেয়, তাতে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বিধিমালা তৈরির নির্দেশনাও ছিল। মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পর ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা হয়ে বিচার বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়। মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর ৭ মে আইন মন্ত্রণালয় একটি খসড়া শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বিধি প্রস্তুত করে সুপ্রিমকোর্টে পাঠায়। সরকারের খসড়াটি ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার অনুরূপ হওয়ায় তা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থী বলে ২৮ আগস্ট শুনানিতে জানায় আপিল বিভাগ। পরে ওই খসড়া সংশোধন করে সুপ্রিমকোর্ট আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। এ ছাড়া ৬ নভেম্বরের মধ্যে তা চূড়ান্ত করে আইন মন্ত্রণালয়কে প্রতিবেদন আকারে আদালতে উপস্থাপন করতে বলা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৬ নভেম্বর মামলাটি কার্যতালিকায় এলে রাষ্ট্রপক্ষ এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি জানাতে না পারায় বিধিমালা চূড়ান্ত করার বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা লিখিতভাবে জানাতে রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দেয় আপিল বিভাগ। ৭ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষের আট সপ্তাহ সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত সময় দেয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর