শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

এবার মিয়ানমারের অর্ধেক পথ গিয়ে ফিরে এলো বিমান

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রীর ফ্লাইটে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণ জানার আগেই আবারও ত্রুটির কবলে পড়েছে আরও একটি ফ্লাইট। এবার এয়ার প্রেসার কমে যাওয়ায় মিয়ানমারে নামতে পারেনি বাংলাদেশ বিমানের এ ফ্লাইট। আকাশে এক ঘণ্টা ওড়ার পর সেটি ফিরে এসেছে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। গতকাল দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, এ ঘটনার সময় প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের অভাবে ফ্লাইটের ভিতর অসুস্থ হয়ে পড়েন বেশ কয়েকজন যাত্রী। ফলে উড়োজাহাজ থেকে নামানোর সময় বেশ কয়েকজন যাত্রীকে মাস্ক পরা অবস্থায় দেখা যায়। এদিকে একের পর এক কেন যান্ত্রিক ত্রুটির ঘটনা ঘটছে—সে সম্পর্কে বিমানের কোনো কর্মকর্তাই মুখ খুলছেন না। এসব ঘটনার দায়-দায়িত্ব রক্ষণাবেক্ষণ শাখার হলেও প্রকৌশল বিভাগ বলছে, ‘এমনটি ঘটতেই পারে’। বিমানের প্রকৌশল শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার আসাদুজ্জামান বলেন, গতকাল দুপুর দেড়টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইয়াঙ্গুনের উদ্দেশে ছেড়ে যায় ফ্লাইটটি। আধা ঘণ্টা উড়ার পর এতে কেবিন এয়ার প্রেসার কমে যাওয়ায় ঢাকায় ফিরতে হয়। সন্ধ্যার দিকে ওই ত্রুটি মেরামতের পর সেটি আবার ইয়াঙ্গুনের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে যায়।

বিমানের জনসংযোগ শাখার মহাব্যবস্থাপক শাকিল মেরাজ জানান, দুপুর দেড়টায় ৩৮ জন যাত্রী নিয়ে বিজি-০৬০ (ড্যাশ এইট উড়োজাহাজটি) শাহজালাল বিমানবন্দর ছেড়ে যাওয়ার পর চট্টগ্রামে পৌঁছার আগেই ক্যাপ্টেন হাতিম দেখতে পান কেবিন এয়ার প্রেসার কমে যাচ্ছে। এ অবস্থায় আর সামনে যাওয়া নিরাপদ নয় ভেবে ক্যাপ্টেন এক ঘণ্টা পর বেলা আড়াইটায় ঢাকায় ফিরে আসেন। বিমানের এয়ার সার্ভিস শাখার মহাব্যবস্থাপক নুরুল ইসলাম হাওলাদার জানান, যাত্রীদের শাহজালালের লাউঞ্জে নিয়ে গিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। পরে তাদের সন্ধ্যার দিকে আবার ওই ফ্লাইটেই ইয়াঙ্গুন নিয়ে যাওয়া হয়। তবে যাত্রীরা অসুস্থ হয়েছিলেন কিনা—সে বিষয়ে তিনি কিছু জানাতে পারেননি। বিমান সূত্র জানায়, বিমানের এই ড্যাশ এইট উড়োজাহাজটি মিসর থেকে লিজে আনা। এর ক্যাপ্টেন হাতিমও মিসরের নাগরিক। তিনি পেশাদার হলেও ওয়ার্ক পারমিট ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে বিমানে চাকরি করছেন। কেবিন এয়ার প্রেসারাইজেশন সিস্টেম নষ্ট হওয়ায় কি ধরনের বিপদ ঘটার আশঙ্কা থাকে—জানতে চাইলে বিমানের একজন প্রকৌশলী বলেন, আকাশে ওড়ার পর যতই উপরের দিকে ওঠে ততই অক্সিজেন ও বাতাসের চাপ কমে যায়। উড়োজাহাজের ভিতর ও বাইরের বাতাসের চাপের মধ্যে ব্যাপক ব্যবধান ঘটে। কেবিন এয়ার প্রেসারাইজেশন সিস্টেম এই ব্যবধানের মধ্যে প্রয়োজনীয় ভারসাম্য রক্ষা করে। এয়ারকন্ডিশনিং সিস্টেম ও কেবিন এয়ার প্রেসারাইজেশন সিস্টেমের মধ্যেও ভারসাম্য থাকে বলেই যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যে থাকেন। এই সিস্টেম নষ্ট হয়ে গেলে ভিতরে অক্সিজেন সংকটের শিকার হবেন যাত্রীরা। এজন্য বাধ্য হয়েই তাত্ক্ষণিক সামনের সিটে থাকা অক্সিজেন মাস্ক স্বয়ংক্রিয়ভাবে উপরের কেবিন থেকে নিচে পড়ে যায় এবং যাত্রীরা সেটা মুখে লাগাতে বাধ্য হন। এমন পরিস্থিতির মুখে ক্যাপ্টেন হাতিম চট্টগ্রামের আকাশসীমা থেকে ঢাকায় ফিরে আসতে বাধ্য হন। এ সম্পর্কে বিমানের একজন সাবেক পরিচালক বলেন, ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ হাজার ফুট উপরে উঠলেই অক্সিজেন ও বাতাসের চাপ কমতে থাকে। ৪০ হাজার ফুট উপরে উঠলে সেটা আরও কমে যাওয়ার পরও ভিতরের যাত্রীরা স্বাভাবিকভাবে অক্সিজেন পান—তা এই প্রেসারাইজেশন সিস্টেমের কারণে। এই প্রেসার সিস্টেম নষ্ট হওয়ার পর আধা ঘণ্টার মধ্যেই ফ্লাইট জরুরি অবতরণ আবশ্যক হয়ে পড়ে। নইলে শ্বাসকষ্টে যাত্রীদের মৃত্যুও ঘটতে পারে।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর