মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

তিন বাহিনী প্রধানদের মেয়াদ ৪ বছর

মন্ত্রিসভায় আইনের খসড়া অনুমোদন

নিজস্ব প্রতিবেদক

সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী প্রধানদের চাকরির মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ চার বছর। এমন সুযোগ রেখে প্রতিরক্ষা বাহিনী প্রধান (নিয়োগ, অবসর এবং বেতন ও ভাতাদি) আইন-২০১৬ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ আইন পাস হলে বাহিনীর প্রধান তার অবসরের বয়স ৫৯ বছর পার হওয়ার পরও সরকার চাইলে সর্বোচ্চ চার বছর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে আইনের খসড়াটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। 

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, সংবিধানের ৬১ থেকে ৬৩ অনুচ্ছেদে বলা আছে, আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সংসদ প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোর প্রধানদের নিয়োগ ও বেতন-ভাতা নির্ধারণ করবে। যেহেতু সংবিধানে বলা আছে, কিন্তু ৪৪ বছরে কোনো আইন হয়নি, এজন্য আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতদিন জয়েন্ট সার্ভিসেস ইন্সট্রাকশনস (জেএসআই) নামে একটি ‘নির্দেশাবলির’ মাধ?্যমে এ বিষয়টি ঠিক করা হতো। সেখানে বাহিনী প্রধান পদে চাকরির সময় নির্ধারণ করা ছিল না। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, রাষ্ট্রপতি তিন বাহিনীর প্রধানদের নিয়োগ দেবেন। জনস্বার্থে অবসর না দেওয়া হলে বা বাহিনী প্রধান স্বেচ্ছায় অবসরে না গেলে একসঙ্গে বা বর্ধিতকরণসহ সর্বোচ্চ চার বছর ওই পদে থাকতে পারবেন।

তিনি বলেন, চাকরির বয়স থাকুক আর নাই থাকুক, যোগ দেওয়ার পর মেয়াদ চার বছর থাকবে। চাকরি থাকলে মাইনাস ধরে, সব মিলিয়ে চার বছর। এর ব্যাখ্যা দিয়ে সচিব বলেন, চাকরি এক বছর থাকা অবস্থায় কেউ কোনো বাহিনীর প্রধান পদে নিয়োগ পেলে তিনি ‘সরকারের ইচ্ছায়’ আরও তিন বছর সময় থাকতে পারেন। জনস্বার্থে অবসরের আদেশ প্রদান না করলে বা বাহিনী প্রধান স্বেচ্ছায় মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার আগেই অবসর না নিলে বাহিনী প্রধানের নিয়োগের মেয়াদ একসঙ্গে বা বর্ধিতকরণসহ নিয়োগের তারিখ থেকে অনূর্ধ্ব চার বছর হবে। উদাহরণ দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যেমন ধরুন, জেনারেল হিসেবে অবসরে যাওয়ার কথা ফিফটি নাইনে (বছরে), ওই সময় উনি আর্মি চিফ হলেন। তখন থেকেই উনার (চাকরির মেয়াদ) চার বছর যুক্ত হবে। শফিউল আলম বলেন, অবসরের বয়সসীমা ৫৯ বছর এক্ষেত্রে কার্যকর হবে না। যেদিন নিয়োগ পাবেন সেদিন থেকে সর্বোচ্চ চার বছর ওই পদে চাকরি করতে পারবেন। চাকরি কত বছর আছে না আছে এটি ইমপরটেন্ট নয়। চাকরি থাকতে থাকতে যোগ দিলে তারপরে উনার চার বছর শুরু হয়ে যাবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, নতুন আইনে তিন বাহিনীর প্রধানদের জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সমান, অর্থাৎ ৮৬ হাজার টাকা মূল বেতন রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। অন্যান্য ভাতাও তারা পাবেন। এককালীন আউটফিট ভাতা পাবেন। বিধি মোতাবেক ভ্রমণ ভাতা পাবেন। দুটি উৎসব ভাতা পাবেন। নববর্ষ ভাতা, বিনোদন ভাতা পাবেন। এর বাইরেও তিন বাহিনীর প্রধানরা বিশেষ আবাসিক সুবিধা, আবাসিক সংশ্লিষ্ট সুবিধা, সার্বক্ষণিক গাড়ি, সামরিক হাসপাতালে বিনা খরচে নিজে ও পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা, রেশন, ভবিষ্যৎ তহবিল ও সহায়ক জনবল সুবিধা পাবেন। বাহিনী প্রধান পদ থেকে অবসর নেওয়ার দিন থেকেই তিনি অবসরপ্রাপ্ত বলে গণ্য হবেন। বেসামরিক কর্মকর্তাদের মতো এক বছরের অবসরোত্তর ছুটিও (পিআরএল) পাবেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, নতুন আইন অনুযায়ী কোনো বাহিনী প্রধান অবসর নেওয়ার পর কোনো সামরিক বা অসামরিক পদে পুনঃনিয়োগ লাভে যোগ্য হবেন না। তবে চুক্তিভিত্তিতে কোনো অসামরিক পদে নিয়োগ পেতে পারেন। তিনি বলেন, অবসরপ্রাপ্ত তিন বাহিনী প্রধানরা প্রজাতন্ত্রের কোনো কাজে সামরিক বা বেসামরিক নিয়োগের অযোগ্য বিবেচিত হলেও সাংবিধানিক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বাধা থাকবে না। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, গতকালের বৈঠকে বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তে ‘সীমান্ত হাট’ স্থাপন ও পরিচালনা সংক্রান্ত নবায়ন ও পুনঃ স্বাক্ষরের জন্য খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ২০১০ সালে এই সীমান্ত হাট শুরু হয়েছিল। বর্তমানে চারটি স্থানে এই হাট বসে। এগুলোর মেয়াদ ছিল তিন বছরের জন্য। কিন্তু সেই সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, খসড়ায় তিন বছরের স্থানে পাঁচ বছর করা হয়েছে হাটের মেয়াদ। হাটে বিক্রেতার সংখ্যা বিদ্যমান ২৫-এর স্থলে ৫০ করা হয়েছে। আর বর্তমানের পণ্য ক্রয়সীমা ১০০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ২০০ ডলার করা হয়েছে। এই চার হাটের পাশাপাশি আরও ছয়টি হাট স্থাপনের বিষয় প্রক্রিয়াধীন আছে বলে তিনি জানান। এ ছাড়াও বৈঠকে ভারতের তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিলের মৃত্যুতে শোকপ্রস্তাব পাস হয়।

সর্বশেষ খবর