মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

বাংলাদেশি ডেনিমের বিশ্বজয়

জিন্নাতুন নূর

বাংলাদেশি ডেনিমের বিশ্বজয়

ইউরোপের বাজারে প্রথম স্থান দখল করেছে বাংলাদেশের তৈরি ডেনিম (জিন্সপণ্য)। এমনকি খুব কম সময়ে এটি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেও তৃতীয় স্থান দখল করে নিয়েছে। বাংলাদেশসহ দুনিয়া জুড়ে ফ্যাশনসচেতন মানুষের প্রিয় পোশাকের তালিকায় এখন অন্যতম পছন্দ ডেনিম কাপড়ের তৈরি জিন্স, শার্টসহ অন্যান্য পোশাক। আর সাশ্রয়ী দাম ও গুণগত মানে সেরা বলে বাংলাদেশে তৈনি ডেনিম এখন বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়। আর চাহিদার কারণে বিশ্বে প্রতি বছর ৮ হাজার কোটি ডলারের ডেনিম পণ্যের বাজারে বাংলাদেশ থেকেই রপ্তানি করা হয় ৩৫০ কোটি ডলারের পণ্য। বাংলাদেশ ২০২১ সালে ৫০ বিলিয়ন ডেনিম পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রাও ঠিক করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অফিশিয়াল ওয়েবসাইট ইউরো স্টেটের তথ্যে, ২০১৪ সালে তুরস্ককে পেছনে ফেলে ইইউতে ডেনিম পোশাক রপ্তানিতে শীর্ষে পৌঁছায় বাংলাদেশ। সে বছর ৯৩ কোটি ৯০ লাখ ইউরোর ডেনিম রপ্তানি করে বাংলাদেশ। পরের বছর তা ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায় আর চলতি জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৫৬ কোটি ইউরোর ডেনিম রপ্তানি হয়েছে। ২০১৫ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ৪ হাজার ৬৫১ মিলিয়ন ইউরোর ডেনিম পণ্য আমদানি করে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ১ হাজার ১৭৬ মিলিয়ন ইউরোর ডেনিম পণ্য রপ্তানি হয়েছ। আর ইইউতে বাংলাদেশের পরই ডেনিম রপ্তানির তালিকায় থাকা দেশগুলো হচ্ছে তুরস্ক, পাকিস্তান ও চীন। ইউনাইটেড স্টেটস ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড কমিশনের তথ্যমতে, মূলত উন্নতমানের বৈচিত্র্যময় ডেনিম পোশাক উৎপাদন করায় বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি ডেনিমের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ আছে। এর বাইরে বাংলাদেশি ডেনিমের জন্য ব্রাজিল, চিলি, চীন, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও সাউথ আফ্রিকা হতে পারে নতুন বাজার। ১৯৮৯ সালে প্রথম দেশে ডেনিম কারখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়। আর ১৯৯২ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ বিশ্বের ১১তম ডেনিম সরবরাহকারী দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

গত নভেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ডেনিম পণ্য প্রদর্শনকারী আন্তর্জাতিক মানের প্রদর্শনী ডেনিম এক্সপোর ষষ্ঠ আয়োজনে ডেনিম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে, বিগত এক দশকে দেশে ২৭টির অধিক আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন ডেনিম কারখানা স্থাপিত হয়েছে। আরও বেশকিছু কারখানা তৈরি হচ্ছে। ডেনিম উৎপাদনকারী ও আমদানিকারকরা এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশকে অন্যতম ডেনিম রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বিবেচনা করছেন। বর্তমানে দেশের ডেনিম উৎপাদনকারী কারখানাগুলোর ডেনিম দিয়ে ৫৫০টির মতো পোশাক কারখানা স্থানীয় ৬০ শতাংশ ডেনিম পণ্যের চাহিদা পূরণ করছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ডেনিমে বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের বাজারে ডেনিম পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশ্ববাজারে আগামীতে বাংলাদেশের ডেনিমই নেতৃত্ব দেবে। ডেনিম অ্যান্ড জিন্স বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সন্দ্বীপ আগরওয়াল জানান, বর্তমানে সারা দুনিয়ার ডেনিম ক্রেতাদের চাহিদা মেটানোর জন্য যে পর্যায়ের অবকাঠামো, জনবল ও আর্থিক সূচক থাকা দরকার তার বিচারে বাংলাদেশ অনন্য অবস্থানে আছে।

বাংলাদেশে সাম্প্রতিককালে স্থাপিত ডেনিম কারখানাগুলোও আধুনিক মেশিন বসিয়ে আধুনিক ও উচ্চমানের ডেনিম উৎপাদন করছে। চীনের পরই ভারত ও ইন্দোনেশিয়া বাংলাদেশের প্রধান প্রতিযোগী। যমুনা, হা-মীম, বেক্সিমকো, প্যাসিফিক, এনভয়, শাসা ও পারটেক্সের বিভিন্ন কারখানায় ডেনিমে উৎপাদিত পণ্য তৈরি হচ্ছে।

পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি ও ডেনিম পোশাক তৈরির সঙ্গে জড়িত স্টারলিংক গ্রুপের চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ডেনিম খাত নিয়ে আমাদের সম্ভাবনা প্রচুর। বাংলাদেশে এ শিল্পের ভবিষ্যৎও উজ্বল।

সর্বশেষ খবর