রবিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
বাংলাদেশ প্রতিদিন’র বিশেষ অনুষ্ঠান

গাফ্‌ফার চৌধুরীকে আজীবন সম্মাননা

নিজস্ব প্রতিবেদক

গাফ্‌ফার চৌধুরীকে আজীবন সম্মাননা

সম্মাননা জানাচ্ছেন বসুন্ধরা ও ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান —বাংলাদেশ প্রতিদিন

‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ গানের রচয়িতা, সাংবাদিকতার পথিকৃৎ আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীকে আজীবন সম্মাননা জানিয়েছে বাংলাদেশ প্রতিদিন। গতকাল তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ সম্মাননা জানানো হয়। সকালে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় পত্রিকার কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে তাকে উত্তরীয় পরিয়ে দেওয়া হয়; হাতে অর্পণ করা হয় সম্মাননা ক্রেস্ট ও দুই লাখ টাকার একটি চেক। এই ভাষাসংগ্রামীর হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন বসুন্ধরা গ্রুপ ও ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন ও ডেইলি সানের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আমির হোসেন। সম্মাননা গ্রহণ করে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সাংবাদিকতা এখন একটি সম্মানীয় পেশা। সংবাদপত্রশিল্প বিকশিত হচ্ছে। তিনি বাংলাদেশের মিডিয়ার বর্তমান বিকাশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। প্রবীণ এই কলাম লেখক বলেন, ‘সারা জীবন সাংবাদিকতা করেছি। ইচ্ছে ছিল সাহিত্যিক হব, কিন্তু হইনি। কথায় বলে, দশ চক্রে ভগবান ভূত। হয়ে গেলাম সাংবাদিক।’ তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিন ও ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের সবগুলো সংবাদমাধ্যমের প্রশংসা করে বলেন, ‘এই গ্রুপের সবগুলো সংবাদপত্র নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পেরেছে। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান দেশের সাংবাদিকতাকে দলতন্ত্র থেকে মুক্তি দিয়েছেন।’ বিশিষ্ট এই কলামিস্ট বলেন, ‘আহমেদ আকবর সোবহান দুটি জাতীয় বাংলা দৈনিক, একটি ইংরেজি দৈনিক, একটি নিউজ পোর্টাল, একটি টেলিভিশন এবং একটি রেডিওর প্রতিষ্ঠাতা। এ এক অসম্ভব ব্যাপার! একটা হাউসে এতগুলো প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা ও ব্যবস্থাপনা করা খুবই কঠিন কাজ। কিন্তু তা তিনি করেছেন। বিস্ময়কর হলো, তিনি মিডিয়া সাম্রাজ্য গড়েছেন। কিন্তু সাম্রাজ্যের অধিপতি হননি। তিনি বেশ কয়েকজন নিষ্ঠাবান পেশাদার কর্মীকে দিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো চালাচ্ছেন।’ গাফ্ফার চৌধুরী বলেন, এ রকম বড় আয়োজন তিনি লন্ডনে টাইমস গ্রুপ অব পাবলিকেশন্সে দেখেছেন। তবে লন্ডনের চেয়েও ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের প্রাতিষ্ঠানিক রূপটি দৃঢ়তর। এই প্রতিষ্ঠানের কাগজগুলোর মান অনেক উন্নত। তিনি বলেন, ‘আজ এই গ্রুপে এসে মনে হচ্ছে, যেন নিউইয়র্ক টাইমসে বসে আছি। সংবাদপত্র-জগতে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত স্থাপন করছে বসুন্ধরা গ্রুপ।’ তিনি গ্রুপের সাফল্য কামনা করে বলেন, তিনি চান এরা স্বাধীনতার পক্ষের সাংবাদিকতার নেতৃত্ব দিক।

অতীতের সঙ্গে বর্তমানের তুলনা করে গাফ্ফার চৌধুরী জানান, তাদের সময়ে প্রকাশনাশিল্প ছিল অত্যন্ত দরিদ্র। তখন যদি ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের মতো প্রতিষ্ঠান থাকত, তাহলে হয়তো তিনি সাহিত্যিকই হয়ে যেতেন। দুর্ভাগ্য, তখন সে রকম কিছু ছিল না। তিনি বলেন, ‘জীবনে দেখে গেলাম সেই ভাঙা টেবিলে বসে সম্পাদকীয় লেখা, ভাগ করে একবার সম্পাদক বসেন, একবার আমরা বসি। ছোট্ট একটি ঘরের মধ্যে ইত্তেফাক পত্রিকার জন্ম। বেতন নেওয়ার জন্য অনেক কষ্ট করতে হতো। এমন দিন ছিল, যখন পাঁচ টাকা নিয়ে বাড়ি যেতে হতো।’ বসুন্ধরা ও ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর কলম কখনোই কাউকে ভয় পায়নি। কোনো সরকারের আমলেই তার কলম থামেনি। তিনি নির্ভয়ে দেশ ও মানুষের পক্ষে, স্বাধীনতার পক্ষে ও সপক্ষ শক্তির পক্ষে লিখেছেন এবং লিখে চলেছেন। গাফ্ফার চৌধুরীর মতো নির্ভীক অবস্থানে থেকে কাজ করার জন্য ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের সংবাদকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, ‘কোনো অসত্য সংবাদ আপনারা প্রকাশ করবেন না। যা সত্য তা-ই তুলে ধরবেন।’ তিনি বলেন, ‘যে সম্মাননা আজ গাফ্ফার ভাইকে দেওয়া হলো, তা যথেষ্ট নয়।’ তিনি আশা করেন, গাফ্ফার চৌধুরীর লেখাগুলো সংকলিত করে বাংলাদেশ প্রতিদিন একটা বই ছাপানোর উদ্যোগ নেবে, যে বই হবে চিরস্মরণীয়, যে বই পৌঁছে যাবে দেশ-বিদেশে সর্বত্র। ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীকে যে সম্মাননা জানিয়েছে, তা সারা দেশের ১৬ কোটি মানুষের কাছ থেকেই পাওয়া উচিত। আমি তার দীর্ঘায়ু কামনা করি, যাতে তিনি দেশের পক্ষে, স্বাধীনতার পক্ষে আজীবন লিখে যেতে পারেন।’

বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, ‘আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীকে সম্মাননা জানাতে পেরে বাংলাদেশ প্রতিদিন পরিবার আজ আনন্দিত ও গর্বিত। বরেণ্য একজন মানুষকে সম্মাননা জানানোর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনসহ ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপে নতুন মাত্রা যোগ হবে।’ নঈম নিজাম বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ এবং দেশের বিভিন্ন ক্রান্তিকালে গাফ্ফার চৌধুরী দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য নিরলস প্রেরণা জুগিয়েছেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর চিন্তা-চেতনাকে জাগ্রত করতে তিনি ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখেছেন। তাকে সামনে রেখে আমরাও অনুপ্রাণিত হই। বাংলাদেশ প্রতিদিন যত দিন থাকবে, তত দিন তাকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।’ কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ‘বাঙালির জীবনে দুটি শ্রেষ্ঠ সংগীত রয়েছে, একটি লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আরেকটি আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। বাঙালি জাতি যত দিন থাকবে, তত দিন এ দুটি সংগীত থাকবে। গাফ্ফার ভাইয়ের প্রতিভা নানা দিকে বিকশিত। এখনো কালের কণ্ঠে নিয়মিত লেখেন গাফ্ফার ভাই। এটা সর্বাধিক জনপ্রিয়। তার কলামটি যেদিন থাকে, আমাদের সার্কুলেশন বেড়ে যায়।’

ডেইলি সানের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আমির হোসেন বলেন, ‘সত্যিকারার্থে যদি সাংবাদিক কাউকে বোঝায়, তাদের মধ্যে গাফ্ফার চৌধুরী একজন। জাতির প্রয়োজনে সব সময়ই তিনি অসীম সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন।’ উল্লেখ্য, এর আগে প্রবীণ সাংবাদিক এবিএম মূসা, ভাষাসৈনিক আবদুল মতিন, নায়করাজ রাজ্জাক, অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত, লেখক সমরেশ মজুমদার ও কবি রফিক আজাদকে সম্মাননা জানায় বাংলাদেশ প্রতিদিন।

সর্বশেষ খবর