শিরোনাম
বুধবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

সম্পদের শেষ নেই ইকবালের

নিজস্ব প্রতিবেদক

সম্পদের শেষ নেই ইকবালের

সম্পদের শেষ নেই রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সাবেক সহকারী পরিচালক ইকবাল পারভেজের। দুদকের প্রাথমিক তদন্তে ২০০ কোটি টাকার সম্পদের খোঁজ মিলেছে। দুদকের তদন্ত দল ধারণা করছে, রাজউকের এই কর্মকর্তার সম্পদের পরিমাণ আরও কয়েক গুণ হতে পারে। গত রবিবার রাজধানীর ওয়ারী থানায় মামলার পর তাকে গ্রেফতার করে দুদক। সোমবার আদালতে হাজির করা হলে জামিন মঞ্জুর না করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। দুদক সূত্র জানায়, সাবেক গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খানের মুহুরি ইকবাল পারভেজ রাজউকে সহকারী পরিচালক (আইন) পদে চাকরি পান। চাকরিকালীন পাঁচ বছরে অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিস্তারিত বর্ণনাসহ ১৫৫ পৃষ্ঠার অভিযোগ পেয়ে গত বছরের শেষ দিকে তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামে দুদক। তার বাবা জাভেদ আলী একদা গ্রামে বাদাম বিক্রি করে সংসার চালাতেন। জমি-জিরাত তেমন ছিল না। পরিবারের সদস্যদের দিন কাটত অর্ধাহারে-অনাহারে। ইকবাল পারভেজ রাজউকে যোগদানের পর তার মালিকানায় রয়েছে দামি গাড়ি, অভিজাত এলাকায় একাধিক ফ্ল্যাট। আরও রয়েছে নামে-বেনামে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি। বোনজামাই আনোয়ার হোসেন ওরফে আন্না মিস্ত্রির নামে গণপূর্ত অধিদফতরে রয়েছে ঠিকাদারি ব্যবসা। ঠিকাদারি লাইসেন্স আন্না মিস্ত্রির নামে থাকলেও সবকিছু দেখভাল করতেন ইকবাল পারভেজ। এভাবেই দুর্নীতি দমন কমিশন—দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে ইকবালের বিশাল সম্পদভাণ্ডারের খোঁজ। মাত্র পাঁচ বছরে তিনি প্রায় ৬০০ শতাংশ জমি কিনেছেন। এর বাইরেও তার বিপুল সম্পদ রয়েছে বলে অভিযোগ। দুদক সূত্র অভিযোগ প্রসঙ্গে জানায়, গুলশান, বনানী ও মতিঝিলে সরকারের পরিত্যক্ত সম্পত্তি বিভিন্ন সিন্ডিকেটের যোগসাজশে ভুয়া মালিক সাজিয়ে বিক্রি করে দেন তিনি। পাঁচ বছরে রাজধানী ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় তিনি বিপুল পরিমাণ জমি কিনেছেন। ওয়ারী থানায় করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, দুদকের অনুসন্ধানেই ইকবাল পারভেজের প্রায় ৬০০ শতাংশ জমি কেনার প্রমাণ পাওয়া গেছে। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার সাবরেজিস্ট্রি অফিসে করা ওইসব জমির দলিলমূল্য দেখানো হয়েছে ৩ কোটি টাকার কিছু বেশি। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, বাস্তবে এসব জমির মূল্য কমপক্ষে ১০ কোটি টাকা। এ ছাড়া রাজধানীর টিকাটুলীর কিংস প্লাজায় ইকবাল পারভেজের নামে ১ হাজার ৪০০ বর্গফুটের একটি অফিস রয়েছে, যার বাজারমূল্য কয়েক কোটি টাকা। তার দুটি গাড়ি ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্যও তুলে ধরা হয়েছে এজাহারে। দুদকের উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে যে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে তা দিয়েই মামলা করা হয়েছে। তবে ইকবাল পারভেজের সম্পদের পরিমাণ আরও বেশি। তদন্ত পর্যায়ে ওইসব সম্পদের তথ্য-প্রমাণ হাজির করা হবে। তাদের ধারণা, সব মিলিয়ে ইকবাল পারভেজের সম্পদের পরিমাণ কয়েক শ কোটি টাকা। সূত্র জানিয়েছে, ইকবাল পারভেজের নামে কদমতলীতে ২০ কাঠা জমি, একটি এক তলা মার্কেট; মেরাজনগরে সাত তলা ও তিন তলা দুটি বাড়ি এবং ঢাকার পূর্বাচলে ১০ কাঠার একটি প্লট রয়েছে। এসবের বাজারমূল্য প্রায় ১২০ কোটি টাকা। এ ছাড়া রাজধানীর রমনা ও নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় তার ফ্ল্যাট রয়েছে। এফ প্রিমিও ও মিতসুবিশি ব্র্যান্ডের দুটি গাড়িরও মালিক তিনি। বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার আমানত রয়েছে তার।

কে এই ইকবাল পারভেজ : আবদুল মান্নান খান মূলত আইনজীবী। তিনি আইনজীবী থাকতে তার সহকারী হিসেবে কাজ করতেন ইকবাল পারভেজ। আবদুল মান্নান খান প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর ইকবাল বয়স জালিয়াতি করে রাজউকের সহকারী পরিচালক (আইন) পদে নিয়োগ নেন। এ পদে যোগদানের পর তিনি রাজউকের জালিয়াত সিন্ডিকেটের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। অল্প দিনের মধ্যে সিন্ডিকেট-প্রধানের দায়িত্ব পান তিনি। এর পর থেকে রাজউকের সরকারি পরিত্যক্ত সম্পত্তি বিশেষ করে গুলশান, বনানী ও মতিঝিলের জালিয়াত চক্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দামি দামি জমি ভুয়া মালিক সাজিয়ে বিক্রি করে হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা। তার আরও রয়েছে ঢাকা মেট্রো গ-২৯-৪৭৪৪ নম্বরের একটি প্রিমিও কার এবং ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৩-৮৯৮১ নম্বরের মিতসুবিশি জিপ গাড়ি। দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে দুদকের উপপরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দুদক ইকবাল পারভেজের প্রায় দেড় শ কোটি টাকার সম্পদের সন্ধান পেয়েছে। তবে এর পরিমাণ আরও কয়েক গুণ বেড়ে যেতে পারে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর