শুক্রবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
প্রধানমন্ত্রীর বিমানে ত্রুটি

সাত কর্মকর্তা রিমান্ডে দুজন কারাগারে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী ফ্লাইটে যান্ত্রিক ত্রুটির ঘটনার মামলায় বিমানের প্রকৌশল বিভাগের সাতজনকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এজাহারভুক্ত অপর দুজন আত্মসমর্পণ করলে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। এর আগে বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে সাত কর্মকর্তাকে তাদের ঢাকার বাসা থেকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। গতকাল তাদের আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ডের আদেন জানায় তদন্তকারী এ সংস্থাটি। এদের সাতজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একটি সূত্র জানায়, মামলার তদন্তভার তাদের হাতে ন্যস্ত হওয়ার পর তারা তদন্ত শুরু করে। এর অংশ হিসেবে তারা মধ্যরাতে মামলায় অভিযুক্ত নয়জনকে গ্রেফতারে অভিযান চালায়। বিমানবন্দর এলাকায় নিজ বাসা থেকে সাতজনকে গ্রেফতার করে তাদের দফতরে নিয়ে যাওয়া হয়। এরা হলেন বিমানের প্রধান প্রকৌশলী (প্রোডাকশন) দেবেশ চৌধুরী, প্রধান প্রকৌশলী (মেইনটেইন্যান্স অ্যান্ড সিস্টেম কন্ট্রোল) বিল্লাল হোসেন, প্রধান প্রকৌশলী (কোয়ালিটি) এস এ সিদ্দিক, সামিউল হক, লুত্ফুর রহমান, মিলন চন্দ্র বিশ্বাস ও জাকির হোসাইন। তবে গ্রেফতার এড়িয়ে গতকাল সকালে মামলার অপর দুই আসামি প্রকৌশল কর্মকর্তা এস এম রোকনুজ্জামান ও টেকনিশিয়ান সিদ্দিকুর রহমান আদালতে হাজির হয়ে আত্মসমর্পণ করে জামিন চান। জামিন না দিয়ে তাদের কারাগারে পাঠিয়ে দেয় আদালত। ডিএমপির পক্ষ থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ঢাকার উত্তরাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ওই সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার সম্পর্কে ডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, ডিবি কার্যালয়ে আসামিদের কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তবে তারা ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকার কথা অস্বীকার করেন। তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা না থাকলে হয়রানি করা হবে না। মূলত কোনো ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা আছে কি না তা উদ্ঘাটন করার চেষ্টা চলছে। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী উড়োজাহাজটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ২৬ নভেম্বর হ্যাঙ্গারে নেওয়া হয়। পরদিন প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে হাঙ্গেরির উদ্দেশে যাত্রা শুরু করলে উড়োজাহাজের বাঁ পাশের ইঞ্জিন অয়েলের ‘বি-নাট’ ঢিলা পাওয়া যায়। এতে ইঞ্জিনে তেলের চাপ ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে। দুর্ঘটনা এড়াতে তুর্কমেনিস্তানে বিমানটির জরুরি অবতরণ করানো হয়। এ ঘটনায় বিমান কর্তৃপক্ষের তদন্তের বরাত দিয়ে এজাহারে আরও বলা হয়, ‘বি-নাট’ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঢিলা হওয়ার সম্ভাবনা কম। এজাহারে মামলার বাদী আশঙ্কা করেছেন, উড়োজাহাজটির রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত ব্যক্তিরা নাটটি ঢিলা করেছেন। উড়োজাহাজটির রক্ষণাবেক্ষণ বা মেরামতের সময় ৯ আসামির দায়িত্ব সম্পর্কে তদন্ত কমিটির বরাত দিয়ে এজাহারে বলা হয়, আসামি সিদ্দিকুর রহমান সরাসরি মেরামত কাজে জড়িত ছিলেন। এস এম রোকনুজ্জামান ‘মেনটেইন্যান্স রিলিজ বুক’ (রক্ষণাবেক্ষণ-সংক্রান্ত খাতা) সই করেন। জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানের ইঞ্জিনে ত্রুটির বিষয়ে গঠিত পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, এটা ‘মানবসৃষ্ট’। এতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দায়িত্বে অবহেলা বা অদক্ষতা, নাকি নাশকতার চেষ্টা ছিল, তা খতিয়ে দেখার জন্য ফৌজদারি মামলা করার সুপারিশ করে মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি। বিমানের প্রকৌশল শাখাসহ প্রতিটি স্তরে অদক্ষতা ও স্বেচ্ছাচারিতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী এ ঘটনায় ফৌজদারি মামলা করার ব্যাপারে ১৯ ডিসেম্বর সম্মতি দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে বিমানের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুই দফায় প্রকৌশল বিভাগের নয়জনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

আদালত প্রতিবেদক জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটির ঘটনায় হওয়া মামলায় গ্রেফতার বাংলাদেশ বিমানের প্রকৌশলীসহ সাতজনকে রিমান্ডে নিয়ে সাত দিন জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অন্য দুই কর্মকর্তা আদালতে আত্মসমর্পণ করার পর তাদের জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানো হয়। গতকাল ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের পরিদর্শক মাহবুব আলম আসামিদের হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আসামিদের পক্ষে তাদের আইনজীবী পরিমল চন্দ্র বিশ্বাসসহ কয়েকজন রিমান্ডের আবেদন বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মহানগর হাকিম স্নিগ্ধা রানী চক্রবর্তী জামিনের আবেদন খারিজ করে সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ঢাকার মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু, ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি কাজী নজিবুল্লাহ হিরুসহ শতাধিক আইনজীবী।

সর্বশেষ খবর