মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

এমপিদের এলাকা ছাড়ার নির্দেশ

কাল জেলা পরিষদে নির্বাচন, ভোট কেনাবেচা, আচরণবিধি লঙ্ঘনসহ নানা অভিযোগ কেন্দ্রে কেন্দ্রে থাকবে ম্যাজিস্ট্রেট, বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান ২১ জন

গোলাম রাব্বানী ও রফিকুল ইসলাম রনি

জেলা পরিষদ নির্বাচনেও জাল ভোট, কেন্দ্র দখল ও প্রকাশ্যে সিল মারার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রার্থীরা। নির্বাচনকে ঘিরে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে নির্বাচনী এলাকায়। অনেক এমপির বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘন ও প্রভাব খাটানোর অভিযোগও উঠেছে। শেষ মুহূর্তে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালীদের চাপে অনেক প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছেন। এদিকে নির্বাচনকে সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণ করতে এমপিদের নির্বাচনী এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন নির্বাচন কমিশন। এমনকি এমপিদের আচরণবিধি বিষয়ে খেয়াল রাখতে গতকাল স্পিকারকেও চিঠি দিয়েছে ইসি। এ ছাড়া ভোট কেন্দ্রে মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে ইসি। ভোট কেন্দ্রে কেন্দ্রে রাখা হচ্ছে ম্যাজিস্ট্রেটও।

দেশে প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সব প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। কাল বুধবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ চলবে। জেলা ও উপজেলায় স্থাপিত ভোট কেন্দ্রে চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ভোট দেবেন স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিরা। বিশেষ নিরাপত্তায় কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনী মালামাল পাঠানো হবে আজ। এ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থীদের প্রচারণাও শেষ হচ্ছে গতকাল দিবাগত রাত ১টায়। জেলা পরিষদ নির্বাচনের শেষ মুহূর্তের প্রচার-প্রচারণায় গতকাল ব্যস্ত ছিলেন প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্য প্রার্থীরা। নির্দলীয় এ নির্বাচনে বিএনপি ও জাতীয় পার্টি আনুষ্ঠানিকভাবে অংশ না নিলেও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী দলের বিদ্রোহীদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন— জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে চূড়ান্ত লড়াই হবে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী বনাম দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে। এ ছাড়া কিছু জেলায় অন্য দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও মাঠে রয়েছে।

প্রার্থীরা ভোট কেনা-বেচার ক্ষেত্রে বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করছেন বলেও অভিযোগ পেয়েছে ইসি। ২০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকায় ভোট কেনাবেচাও হচ্ছে। প্রার্থীদের কেউ কেউ ভোটারদের বলছেন ক্যামেরায় ছবি তুলে আনতে, কেউ বলছেন ব্যালট পেপারের পেছনে বিশেষ চিহ্ন দিতে। নরসিংদীতে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীর চার সমর্থকের বাড়িতে একযোগে হামলা, ভাঙচুর ও গুলির ঘটনা ঘটেছে।

ইসি জানিয়েছে, চেয়ারম্যান পদে ইতিমধ্যে ২১ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া বর্তমানে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ৩৯ জেলায় ১২৪ জন। কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ২ হাজার ৯৮৬ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৮০৬ জন। প্রথমবারের মতো অনলাইনে মনোনয়ন জমার সুযোগ থাকলেও কেউ এ সুযোগ নেয়নি। ৬৩ হাজারের বেশি ভোটারের এ নির্বাচনে জেলা ও উপজেলায় ওয়ার্ডভিত্তিক ৯১৫টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ হবে।

এমপিদের এলাকা ছাড়ার নির্দেশ

জেলা পরিষদ নির্বাচনে ‘কিছু’ স্থানীয় এমপির বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘন ও প্রভাব খাটানোর অভিযোগ এসেছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ওই এমপিদের নির্বাচনী এলাকা ছাড়তে বলা হয়েছে বলে জানান তিনি। গতকাল শেরেবাংলা নগরে ইসি কার্যালয়ে শাহনেওয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, কিছু প্রার্থী ও সরকারদলীয় এমপি নানাভাবে ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন বলে লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ আমরা পেয়েছি। এ ধরনের কোনো অনিয়ম সহ্য করা হবে না। কাল বুধবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত জেলা ও উপজেলায় স্থাপিত কেন্দ্রে এ নির্বচানের ভোট গ্রহণ চলবে দেশের ৬১ জেলায়। দেশে প্রথমবারের মতো এ নির্বাচনে স্থানীয় সরকারের সিটি, পৌর, উপজেলা ও ইউপি জনপ্রতিনিধিরাই কেবল ভোট দেবেন। এ নির্বাচন ঘিরে অনেক এলাকায় সরকারদলীয় এমপি ও প্রার্থীদের বিরুদ্ধে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ সংবাদমাধ্যমে আসছে বেশ কিছুদিন ধরেই। প্রার্থীরা ভোট কেনাবেচার চেষ্টায় বিভিন্ন কৌশল ব্যবহারে চাপ দিচ্ছে বলেও অভিযোগ পেয়েছে ইসি। শাহনেওয়াজ বলেন, প্রার্থীরা কেউ কেউ ভোটারদের বলছেন ক্যামেরায় ছবি তুলে আনতে, কেউ বলছেন ব্যালট পেপারের পেছনে বিশেষ চিহ্ন দিতে। এমপিদের কাছে অনুরোধ করছি— আপনারা এলাকা থেকে চলে আসেন। আমাদের অনুরোধ উপেক্ষা করে কেউ প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সে যেই হোন না কেন— অনিয়ম করলে ছাড় দেওয়া হবে না। ভোট কেন্দ্রে যাতে কোনো অনিয়ম না হয়, সেজন্য প্রতিটি ভোটকক্ষের সামনে একজন করে নির্বাহী হাকিম রাখা হবে বলে জানান এই নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেন, কোনো ভোটার বা জনপ্রতিনিধি ভোট কেন্দ্রে মোবাইল ফোন নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না।

ইসির ভোট প্রস্তুতি

ভোটের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে জানিয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। সুন্দরভাবে করার জন্যে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নির্বাচন সামগ্রীও পৌঁছে গেছে। প্রথমবারের মতো এ নির্বাচনটিও আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জিং। তিন পার্বত্য জেলা বাদ দিয়ে বাকি ৬১ জেলায় এ ভোট হচ্ছে। সচিব জানান, স্থানীয় সরকারের অন্য নির্বাচন থেকে কিছু আলাদা প্যাটার্নে হচ্ছে জেলা পরিষদের ভোট। দেশজুড়ে নির্বাচন হলেও ভোটার সংখ্যা কমের কারণে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন হবে না। ভোট ও যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে অন্য নির্বাচন থেকে কিছুটা শর্তশিথিল রাখা হয়েছে। তবে প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ রাখা হবে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে। এদিকে দেশব্যাপী জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে নেই কোনো উত্তাপ কিংবা আলোচনা। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যেও অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ নেই বললেই চলে। ফলে নিরুতাপ এই নির্বাচন ঘিরে সাধারণ ভোটারদের আগ্রহ কম। নির্দলীয় এ নির্বাচনে বিএনপি ও জাতীয় পার্টি ভোটে না থাকার ঘোষণা দিয়েছে, আওয়ামী লীগ ও তাদের বিদ্রোহীদের মধ্যেই মূলত লড়াই হবে। প্রতিটি জেলায় একজন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং ১৫ জন সাধারণ ও পাঁচজন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ভোট হবে।

তিন স্তরের নিরাপত্তা

ইসি সচিব জানান, জেলা পরিষদের প্রতিটি ভোট কেন্দ্র পাহারায় থাকবে ২০ জন করে সদস্য। পুলিশ, আর্মস পুলিশ ব্যাটালিয়ন, ব্যাটালিয়ন আনসার ও আনসার ভিডিপির সদস্যরা। এর মধ্যে একজন অস্ত্রসহ, পুলিশ (কনস্টেবল) অস্ত্রসহ, আনসার একজন অস্ত্রসহ এবং অঙ্গীভূত আনসার ১৫ জন লাঠিসহ। এরমধ্যে পুরুষ আটজন ও মহিলা সাতজন। কেন্দ্রের বাইরে স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে বিজিবি ও র‌্যাব। প্রতিটি উপজেলায় বিজিবির দুটি মোবাইল টিম (প্লাটুন দুটি প্রতি প্লাটুনে সদস্য সংখ্যা ৩০ জন) এবং একটি স্ট্রার্কি ফোর্স (এক প্লাটুন)। আর প্যাট্রোলিং ও স্ট্রাইকিংয়ের দায়িত্বে থাকবে র‌্যাব। এ হিসাবে প্রতিটি উপজেলায় র‌্যাবের দুটি মোবাইল টিম ও একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স (প্রতিটি টিমে ১০ জন করে সদস্য)। এ ছাড়া ৯১৫ জন ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে প্রতিটি কেন্দ্রে। আর ৯১ জন থাকবে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট।

প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ৩৯৩৮ জন, অনলাইনে নেই

ইসির জনসংযোগ পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান জানান, জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান, সাধারণ ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৩ হাজার ৯৩৮ জন। তবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময় এ সংখ্যা ছিল ৪২৭১ জন। প্রত্যাহার এবং মনোনয়নপত্রে ত্রুটি এবং বিনা-প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে কমেছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা। বিনা-প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ২১ জন রয়েছে। বর্তমানে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ৩৯ জেলায় ১২৪ জন। সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৪৬ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৬৮ জন বিনা-প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ২ হাজার ৯৮৬ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৮০৬ জন। প্রথমবারের মতো অনলাইনে মনোনয়ন জমার সুযোগ থাকলেও কেউ এ সুযোগ নেয়নি।

ব্যয় সোয়া পাঁচ কোটি টাকা

ইসির বাজেট শাখার জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব এনামুল হক জানান, জেলা পরিষদ নির্বাচনে পরিচালনা খাতেই সোয়া ৫ কোটি টাকার বেশি বাজেট ধরা হয়েছে। পরে আইনশৃঙ্খলা খাতের ব্যয় যুক্ত হবে। নির্বাচন ঘিরে ১২ ডিসেম্বর থেকে ১৮ দিনের জন্য ৯১ জন নির্বাহী হাকিম নির্বাচনী এলাকাগুলোতে নিয়োজিত থাকবেন। এ ছাড়া ভোটের সময় চার দিন ৯১ জন বিচারিক হাকিম থাকবেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মোবাইল-স্ট্রাইকিং ফোর্সে। তাদের দায়িত্ব পালনের সময় জ্বালানি, আপ্যায়নসহ আনুষঙ্গিক খরচ ধরে কোটি টাকার বাজেট ঠিক করা হয়েছে।

পর্যবেক্ষক : ৬১টি জেলা পরিষদে নির্বাচনে আটটি সংস্থার তিন হাজার ২২৫ জন পর্যবেক্ষককে অনুমোদন দিয়েছে ইসি। এর মধ্যে আসক ফাউন্ডেশনের আড়াই হাজার এবং জানিপপের তিন শতাধিক পর্যবেক্ষক থাকবেন।

লড়াই হবে আওয়ামী লীগ বনাম বিদ্রোহী

জামালপুরে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন এইচ আর জাহিদ আনোয়ার। এই জেলায় বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ চৌধুরী, সহ-সভাপতি সোহরাব হোসেন বাবুল, যুগ্ম সম্পাদক সরওয়ার জাহান, ফারুক আহমেদ চৌধুরীর সহধর্মিণী আঞ্জুমান আরা বেগম। এর আগে জেলার ৯০০ জনপ্রতিনিধিরা দলীয় প্রার্থী পরিবর্তন করে ফারুক আহমেদ চৌধুরীকে সমর্থন দিতে দলের হাইকমান্ডের কাছে আবেদন করেন। এ জেলায় চেয়ারম্যান পদে ফারুক আহমেদ চৌধুরীর পাল্লাই ভারী। গতকাল স্থানীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ফারুক আহমেদ চৌধুরীকে সমর্থন দিয়েছে জেলা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ। জেলা জাসদ সভাপতি জুলফিকার মো. জাহিদ ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক ইতিমুদ্দৌলা হিন্দুল এই সংবাদ সম্মেলন করেন।

পাবনা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি রেজাউল রহিম লাল। নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরিফ ডিলুর মেয়ে মেহজাবিন প্রিয়া ও জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক কামিল হোসেন। প্রিয়া ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। সেখান থেকে পদত্যাগ করে জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন। এ নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। মূলত এই তিনজনের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। অন্য আরেক প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিলেও নির্বাচনী মাঠে নেই এম সাইদুল হক চুন্নু। রাজশাহীতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন মাহবুব জামান ভুলু। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন দলের আরেক নেতা মোহাম্মদ আলী সরকার।

নরসিংদীতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আসাদুজ্জামান। তবে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন ভূঁইয়া। মানিকগঞ্জে গোলাম মহীউদ্দিন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের সমর্থন। এখানে দলের প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন মানিকগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র রমজান আলী।

মাগুড়ায় দলীয় সমর্থন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পংকজ কুমার কুণ্ডু। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন দুজন। ফলে লড়াই হবে ত্রিমুখী। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক রানা আমীর ওসমান এবং শ্রীপুর উপজেলা যুবলীগ সভাপতি ও স্থানীয় শ্রীকোল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কুতুবুল্লাহ হোসেন মিয়া কুটি।

বগুড়ায় দল সমর্থিত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ডা. মকবুল হোসেন ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সোলাইমান আলী মাস্টার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সুনামগঞ্জে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন দলটির জেলা সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এনামুল কবির ইমন। তাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নূরুল হুদা মুকুট। এখানে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের আভাস পাওয়া গেছে।

নোয়াখালীতে দ্বিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। দলীয় সমর্থন পেয়েছেন ডা. এ বি এম জাফরুল্লাহ। বিদ্রোহী প্রার্থীও রয়েছেন এই নামের। তিনি হলেন ডা. এ কে এম জাফর উল্লাহ। এ ছাড়াও এ জেলা আওয়ামী লীগের আরেক নেতা ফখরুল ইসলাম মন্টু নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

বরিশাল জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে প্রথমে সমর্থন পেয়েছিলেন কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি খান আলতাফ হোসেন ভুলু। পরবর্তীতে তাকে পরিবর্তন করে সমর্থন দেওয়া হয় মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য মইদুল ইসলামকে। পরে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন আলতাফ হোসেন ভুলু। এখানেও তুলুম প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

রাজশাহী জেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মাহবুব জামান ভুলুকে চ্যালেঞ্জ করে মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী সরকার। পিরোজপুরে দলীয় সমর্থন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শাহ আলম। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মহারাজ। বিদ্রোহী প্রার্থী মহারাজকে ভোট দিতে ভোটারদের নানাভাবে প্রভাবিত করছেন সদর আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম আউয়াল। কুড়িগ্রামে দল-সমর্থিত প্রার্থী জাফর আলী। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পনির উদ্দিন আহমেদ।

শেরপুরে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন চন্দন কুমার পাল। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন কবীর। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থীই বেশি শক্তিশালী বলে জানা গেছে। শরীয়তপুরে খোকা সিকদার দলীয় সমর্থন পেয়েছেন। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি আবদুর রব মুন্সি। এখানেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। চাঁদপুর জেলায় আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী নেই। এই জেলায় প্রথমে সমর্থন দেওয়া হয়েছিল এম আবু ওসমান চৌধুরীকে। তিনি স্থানীয় ভোটার না হওয়ায় নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারছেন না। এখানে তিনজন প্রার্থী রয়েছে। যা সবাই আওয়ামী লীগ নেতা। এরা হলেন সাবেক ছাত্রনেতা নুরুল আমিন রুহুল, ওচমান গনি পাটওয়ারী ও মো. ইউসুফ গাজী। কক্সবাজার জেলা পরিষদে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়ে নির্বাচনে লড়ছেন সাবেক এমপি মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন সাবেক এমপি সালাউদ্দিন আহমেদ। লক্ষ্মীপুরে দলের প্রার্থী মো. শামসুল ইসলামকে চ্যালেঞ্জ করে মাঠে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এম আলাউদ্দিন। এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে। ময়মনসিংহে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইউসুফ খান পাঠান। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকলেও দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। এ কে এম ফখরুল ইসলাম বাপ্পী চৌধুরীসহ আরও একজন রয়েছেন। গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন চৌধুরী এমদাদুল হক। এ জেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ডা. ওবায়দুল্লাহ বাকী। মাদারীপুরে জেলা আওয়ামী লীগের প্রার্থী মিয়াজউদ্দিন খান। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ডা. আবদুল বারী। ঝিনাইদহে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী কনক কান্তি দাস। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন জাতীয় পার্টির নেতা হারুনুর রশিদ ও জাসদ নেতা এমদাদুল হক। খুলনায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী শেখ হারুনুর অর রশিদকে চ্যালেঞ্জ করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা অজয় সরকার ও সাবেক ছাত্রনেতা শেখ আলী আকবর। মেহেরপুরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মিয়াজান আলীর প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম রসুল। সিলেট জেলায় দলীয় সমর্থন পেয়েছেন লুত্ফর রহমান। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন অধ্যক্ষ এনামুল সরদার, জিয়াউদ্দিন লালা ও ফখরুল ইসলাম।

বিনা-প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২১ চেয়ারম্যান

আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচনে ২১ জেলায় চেয়ারম্যান পদের জন্য কোনো ভোট হচ্ছে না। এসব জেলায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ৩৯ জেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ১২৪ জন প্রার্থী। অর্থাৎ এসব জেলায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী দলের বিদ্রোহীদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতরা হলেন- নারায়ণঞ্জে আনোয়ার হোসেন, গাজীপুরে মো. আখতারুজ্জামান, ঠাকুরগাঁওয়ে সাদেক কোরাইশী, জয়পুরহাটে আরিফুর রহমান রকেট, নাটোরে সাজেদুর রহমান খান, সিরাজগঞ্জে আবদুল লতিফ বিশ্বাস, যশোরে শাহ হাদিউজ্জামান, বাগেরহাটে শেখ কামরুজ্জামান টুকু, ঝালকাঠিতে সরদার শাহ আলম, ভোলায় আবদুল মোমিন টুলু, নেত্রকোনায় প্রশান্ত কুমার রায়, মুন্সীগঞ্জে মো. মহিউদ্দিন, দিনাজপুরে আজিজুল ইমাম চৌধুরী, নওগাঁয় এ কে এম ফজলে রাব্বি, ফেনীতে আজিজ আহমেদ চৌধুরী, কিশোরগঞ্জে মো. জিল্লুর রহমান, ঢাকায় মো. মাহবুবুর রহমান, হবিগঞ্জে মো. মুশফিক হুসেন চৌধুরী, চট্টগ্রামে এম এ সালাম, টাঙ্গাইলে ফজলুর রহমান খান ফারুক ও ফরিদপুরে মো. লোকমান মৃধা। এ ছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৪৬ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৬৮ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইলেন ৩ এমপি

বরিশাল থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান—‘মহান বিজয় দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বরিশাল জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক চিফ হুইপ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি। গতকাল  সকাল ১১টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত আগৈলঝাড়া উপজেলার সেরাল গ্রামে হাসানাত আবদুল্লাহর বাড়ির চত্বরে গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলার জনপ্রতিনিধিদের সভায় এই আহ্বান জানান তিনি। সভায় হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি প্রধান অতিথি এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস এমপি, সদর আসনের এমপি জেবুন্নেছা আফরোজসহ আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. মইদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া ১০ উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান, ৬ পৌর মেয়র ও কাউন্সিলরবৃন্দ, গৌরনদী-আগৈলঝাড়ার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে অংশগ্রহণকারী সবাইকে কাচ্চি বিরানি খাওয়ানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

সর্বশেষ খবর