মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

আতঙ্ক বাড়াচ্ছে জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল ইয়াকিন

তৎপর বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে, দুই নেতা পাকিস্তানে

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

আতঙ্ক বাড়াচ্ছে জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল ইয়াকিন

ইয়াকিন সামরিক কমান্ডার মিয়ানমারের নাগরিক আবুজার আজ্জাম

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে শক্তি সঞ্চয় করেছে জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল ইয়াকিন। অনেকটা আইএস স্টাইলেই চলছে তাদের কাজকর্ম। তাদের প্রধান লক্ষ্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের একটি অংশ নিয়ে আলাদা রাষ্ট্র গঠন। জঙ্গি গবেষকদের ধারণা, অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের মতো এই সংগঠনটিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য ‘গলার কাঁটা’ হয়ে উঠতে পারে।

 এ বিষয়ে র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, জঙ্গি প্রতিরোধে সদা সচেষ্ট রয়েছে র‌্যাব। বাংলাদেশ যাতে জঙ্গিবাদের ঘাঁটি হতে না পারে সেই লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে র‌্যাব। জঙ্গিবাদ গবেষক ও ‘জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর মহাসচিব হাসান রফিক বলেন, হরকাতুল ইয়াকিন ২০১৩ সালে গঠিত হয়। ইদানীং তাদের শক্তি বেড়েছে। আইএস আদলেই চলছে তাদের তৎপরতা। হাসান রফিক এক যুগ ধরে বাংলাদেশের জঙ্গিবাদের ওপর গবেষণা করে চলেছেন। দেশে জঙ্গিবাদের উত্থানের ওপর তিনি বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন— যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান নেটওয়ার্ক, একজন জঙ্গির আত্মকথা ও ইসলামের নামে মানুষ হত্যা। হরকাতুল ইয়াকিন প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিনি এর কার্যকলাপের ওপর নজর রেখেছেন। তিনি বলেন, ইয়াকিনের সামরিক শাখার নেতৃত্ব দিচ্ছেন পাকিস্তানি নাগরিক আতাউল্লাহ। তার নেতৃত্বেই গত ১৩ মে কক্সবাজারের নয়াপাড়া আনসার ক্যাম্পে হামলা চালানো হয়েছিল। হাসান রফিক বলেন, ইয়াকিনের প্রাথমিক টার্গেট মিয়ানমার। তবে তাদের পরিকল্পনায় রয়েছে মিয়ানমারের আরাকান ও বাংলাদেশের একটি অংশকে নিয়ে ইসলামী রাষ্ট্র গঠন। তাই প্রশাসনকে এদের বিষয়ে এখন থেকেই নজর দিতে হবে। অনুসন্ধানে জানা যায়, পাকিস্তানি নাগরিক আবদুল কুদ্দুস বর্মি ও আতাউল্লাহ ওরফে আবু আম্মার ওরফে আবু ওমর নামে দুই দুর্ধর্ষ জঙ্গি ২০১৩ সালের শুরুতে প্রতিষ্ঠা করেন হরকাতুল ইয়াকিন। আতাউল্লাহ ছাড়াও শীর্ষ নেতাদের মধ্যে রয়েছেন মুফতি আবুজার আজ্জাম, মাওলানা মুফতি জিয়াউর রহমান, মাওলানা আবুল কালাম, মুহাম্মদ হামজা ও মাওলানা আবদুল হামিদ। এদের প্রায় সবার সঙ্গে পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। আবদুল কুদ্দুস বর্মি এবং আরেক শীর্ষ নেতা মাওলানা আবদুল হামিদ পাকিস্তানে বসে ইয়াকিনের জন্য তহবিল সংগ্রহ করছেন। ইয়াকিনের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ রক্ষা করেন মাওলানা ওস্তাদ ওয়াজির, আবুজার ও ফাইজুল্লাহ। এই জঙ্গি সংগঠনটি সরাসরি সহযোগিতা পায় আল-কায়েদার। হরকাতুল ইয়াকিনের জঙ্গিরা গত ১৩ মে টেকনাফ উপজেলার নয়াপাড়ায় রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আনসার বাহিনীর শালবন ব্যারাকে হামলা চালিয়েছিল। ৩০ মে পুলিশ টেকনাফের হোয়াইক্যংয়ের জঙ্গল থেকে নুরুল আবছার নামে এক জঙ্গিকে গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদে সে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানায়, আনসার ক্যাম্প থেকে লুট করা ১১টি অস্ত্র মিয়ানমারে নেওয়া হয়েছে। সংগঠনটি মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ডাক দিয়ে অতিসম্প্রতি ‘হরকাতুল ইয়াকিন’ নামে একটি ভিডিও ছাড়ে। এতে দেখা যায়, সামরিক প্রধান আতাউল্লাহর নেতৃত্বে তিন শতাধিক রোহিঙ্গা যুবক অজানা পথে এগিয়ে চলেছে। ভিডিওতে বলা হয়, সংগঠনটি সামরিক প্রধানের সহযোগী মুফতি জিয়াউর রহমান। কিন্তু ইয়াকিনের মূল নেতার নাম প্রকাশ করা হয়নি।

সর্বশেষ খবর