শনিবার, ২১ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

দরজা খুলল মালয়েশিয়ার

শ্রমিক পাঠানোর চাহিদাপত্র আসা শুরু, প্রক্রিয়া হবে সম্পূর্ণ অনলাইনে, অবৈধরা পাচ্ছেন বিশেষ পাস

জুলকার নাইন

দরজা খুলল মালয়েশিয়ার

দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার আবার খুলে গেল। ইতিমধ্যেই চাহিদাপত্র আসা শুরু হয়েছে। প্লান্টেশন ও ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের কয়েক হাজার চাহিদাপত্র কয়েকটি এজেন্সির কাছে পাঠানো হয়েছে। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই শ্রমিকদের সেখানে যাওয়া শুরু হবে। অনলাইনে ‘জিটুজি প্লাস’ পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ার ছয়টি খাতের সব কটিতেই যাওয়ার সুযোগ পাবে বাংলাদেশিরা। অভিবাসন ব্যয়ও হবে কম। তিন বছরের চুক্তিতে মালয়েশিয়া যাওয়ার সুযোগ পাওয়া বাংলাদেশিদের বেতন হবে কমপক্ষে এক হাজার রিঙ্গিত। নতুনদের পাশাপাশি পুরনোদের জন্য থাকছে সুখবর। এতদিনে অবৈধ হয়ে পড়া বাংলাদেশিরা বসবাসের সুযোগ পাবেন। জানা      যায়. জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে অভিবাসন ব্যয় হবে মাত্র ৩৭ হাজার টাকা। এর বাইরে শ্রমিককে শুধু পাসপোর্ট তৈরির খরচ বহন করতে হবে। মালয়েশিয়ার নিয়োগ কর্তা বিমান ও মেডিকেল খরচ বহন করবে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানিয়েছেন, নতুন চুক্তিটি হওয়ার পরেও নতুন করে জনশক্তি রপ্তানি স্থগিত ছিল তা তুলে নেওয়া হয়েছে। গত বছর সবমিলিয়ে যতজন বিদেশ গিয়েছিল শুধু মালয়েশিয়াতেই এ বছরই ততজন মানুষ পাঠানো সম্ভব হতে পারে। তবে কেউ যেন এক ধরনের চাকরি নিয়ে এসে অন্য কাজ না  খোঁজেন। যারা আসবেন তাদের চাকরির ক্ষেত্র আগে থেকেই জেনে বুঝে আসবেন। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সংগঠন বায়রার সেক্রেটারি রুহুল আমিন বলেছেন, সরকারের কূটনৈতিক সফলতার কারণেই মালয়েশিয়ার মতো এত বড় শ্রমবাজার পুনরায় খুলে গেল। এখন এজেন্সিগুলোর ও শ্রমিকদের দায়িত্ব পরিবেশ ঠিক রাখা। তিনি জানান, এবার প্রথমবারের মতো ট্রান্সপোর্টেশন বা ট্যুরিজম খাতে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়া শুরু হতে যাচ্ছে। অর্থাৎ প্লান্টেশন, ম্যানুফ্যাকচারিং, সার্ভিস সেক্টরসহ ছয় খাতেই সুযোগ পাচ্ছেন। অত্যন্ত স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় শ্রমিক প্রেরণের জন্য মেশিন ও সিস্টেম চালু করা হয়েছে। এখন মালয়েশিয়ার সরকারই নির্ধারিত পদ্ধতিতে রিক্রুটিং এজেন্সি ঠিক করে দেবে। বাংলাদেশের সব রিক্রুটিং এজেন্সিই ধীরে ধীরে সুযোগ পাবেন বলে আমার বিশ্বাস। বায়রা সেক্রেটারি জানান, এতদিন মালয়েশিয়ায় গিয়ে অবৈধ হয়ে পড়া বাংলাদেশিদের কারণে সমস্যার সৃষ্টি হতো। এবার আর সে সুযোগ থাকবে না। শ্রমিকরা যেসব কোম্পানিতে কাজ করবেন সেগুলোতে ওয়ার্ক পারমিট নবায়ন না হলে অটোমেটিক সিস্টেমে অ্যালার্ট চলে যাবে মালয়েশিয়া সরকারের কাছে। এরপর সরকারই সেগুলোর তদারকি করতে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে আদেশ দেবে। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাউন্সিলর মো. সাইয়েদুল ইসলাম জানান, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চালুর সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সম্পূর্ণ অনলাইন পদ্ধতিতে কর্মী নেবে মালয়েশিয়া। নিয়োগকারীরা চাহিদা দেবে আর তার ভিত্তিতে অনলাইনে নিয়োগ চূড়ান্ত হবে। এখানে কারও তদবিরের কিছু থাকবে না। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীর চাহিদা বেশি। কারণ বাংলাদেশি কর্মীরা দক্ষ, আইন মেনে চলে ও কঠোর পরিশ্রমী। জানা যায়, ২০০৮ সালের পর বাংলাদেশ থেকে বেশি সংখ্যায় কর্মী নেওয়া বন্ধ করে মালয়েশিয়া। এরপর ২০১২ সালে দুই দেশের সরকার জিটুজি প্লাস চুক্তি করে সরকারি পর্যায়ে কর্মী পাঠানোর উদ্যোগ নেয়। ওই সময়ে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে অভিবাসন ব্যয় কমলেও কর্মী পাঠানোর সংখ্যা খুবই কম হয়। জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে সবমিলিয়ে ১০ হাজারের কম কর্মী মালয়েশিয়ায় পাঠানো সম্ভব হয়। এখন সরকারি প্রচেষ্টায় নতুন করে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বাংলাদেশিদের জন্য ব্যাপক হারে চালু হতে যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে ২০১৬ সালের ১৮  ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া জিটুজি প্লাস চুক্তি স্বাক্ষর করে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর