গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটন হত্যার ২৫ দিন পরও হত্যারহস্য উদ্ঘাটিত না হওয়ায় প্রকৃত খুনিদের
গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে এমপি লিটনের পরিবার। গতকাল গাইবান্ধা প্রেস ক্লাবে বেলা সাড়ে ১১টায় এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে এমপি লিটনের বড় বোন আফরোজা বারী লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন, ‘লিটন হত্যার ২৫ দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের কুশীলবরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। আমরা তদন্তের কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখছি না। আমাদের ধারণা, পরিকল্পিতভাবে ভাড়াটে খুনি দিয়ে লিটনকে হত্যা করা হয়েছে। অবশ্যই এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে পৃষ্ঠপোষক, মদদদাতা, অর্থ জোগানদাতা হিসেবে কোনো ব্যক্তি, দল বা প্রতিষ্ঠান, কিংবা আদর্শিক অপশক্তি রয়েছে।’ আফরোজা বারী প্রশ্ন রাখেন, ‘বাড়ি হচ্ছে সবার নিরাপদ জায়গা। অথচ খুনিরা সেই বাড়িকেই হত্যাকাণ্ডের জন্য বেছে নিল কেন? কীভাবে খুনিরা পরিচয় না দিয়েই ঘরের ভিতর ঢুকে পড়ার সুযোগ পেল? এ ছাড়া লিটনের অতন্দ্রপ্রহরী জার্মান শেফার্ড কুকুর দুটো ওই সময় কোথায় ছিল? দুর্বৃত্তরা রিভলবারের পাঁচটি গুলি করার পরও কেন তার নিকটজনেরা লিটনের কাছে এলো না? লিটন গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর কাউকে কাছে না পেয়ে তাকে দৌড়ে বাড়ির ভিতর আঙিনার দিকে ছুটে যেতে হলো কেন?’ তিনি আরও প্রশ্ন রাখেন, ‘কেন লিটনের ঘনিষ্ঠজন, দলীয় নিবেদিত নেতা-কর্মী ও সহযোদ্ধারা কেউই তার পাশে ছিল না? তাদের কি দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল? গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর লিটন প্রায় এক ঘণ্টা জীবিত ছিলেন। তখন কেন খুনিদের পরিচয় বিষয়ে কোনো প্রশ্ন উঠল না?’ আফরোজা বারী বলেন, ‘লিটন হত্যার আগে-পরের এ ঘটনাগুলো আমাদের বিচলিত করেছে। এসব প্রশ্নের উত্তর পেলে আমরা অনেকটা আশ্বস্ত হব।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মামলা সিআইডির কাছে দেব কিনা সে বিষয়ে এখনো কিছু ভাবিনি। তবে আমরা এখনো হতাশ নই। প্রধানমন্ত্রী হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি দেখছেন। যারা তদন্ত করছেন তারা, না অন্য কাউকে দিয়ে তদন্ত করাতে হবে তিনিই তা ঠিক করবেন। এ ব্যাপারে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই। আমরা আশায় বুক বেঁধে আছি। শিগগিরই প্রকৃত খুনিদের মুখোশ উন্মোচিত হবে বলে আমরা মনে করি।’ এমপি লিটনের শূন্য আসনে উপনির্বাচনের ব্যাপারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মামলার বাদী ছোট বোন ফাহমিদা বুলবুল কাকলী বলেন, এ মুহূর্তে নির্বাচন নিয়ে আমরা ভাবছি না। আমরা আমাদের ভাইয়ের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক তা দেখতে চাই।’ইউপি মেম্বার রিমান্ডে : এমপি লিটন হত্যা মামলায় গ্রেফতার সর্বানন্দ ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার রেজাউল ইসলাম লিটন ওরফে ডিস লিটনের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। গতকাল গাইবান্ধার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মইনুল হাসান ইউসুফ এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পুলিশ জানায়, ২৩ জানুয়ারি ভোরে পার্শ্ববর্তী ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়ন থেকে ডিস লিটনকে গ্রেফতার করা হয়। পরদিন ২৪ জানুয়ারি তাকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। পরে বিচারক বুধবার শুনানির দিন ধার্য করেন। রেজাউল ইসলাম লিটন একজন ক্যাবল (ডিস) ব্যবসায়ী। তিনি সুন্দরগঞ্জ উপজেলার রামভদ্র কদমতলা গ্রামের আবুল হাশেমের ছেলে। মিসকিন মুকুল ও সাইফুল জেলে : সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ইমামগঞ্জ সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল ডি এম মাসুদার রহমান মুকুল ওরফে মিসকিন মুকুল এবং শিবির ক্যাডার সাইফুল ইসলামকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। তিন দিনের রিমান্ড শেষে গতকাল হাজির করলে আদালত তাদের জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। দুই জামায়াত কর্মী গ্রেফতার : মকবুল হোসেন (৫০) ও মশিউর রহমান (৫১) নামে দুই জামায়াত কর্মীকে মঙ্গলবার রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক নাশকতা ও সন্ত্রাসের মামলা রয়েছে। আদালতের মাধ্যমে তাদের বুধবার জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।