শুক্রবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

সবার চোখ সার্চ কমিটিতে

চলছে হোমওয়ার্ক প্রথম বৈঠক শনিবার

গোলাম রাব্বানী

সার্চ কমিটি গঠনের পর এবার সবখানে আলোচনা চলছে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে। সবার নজর এখন সার্চ বা অনুসন্ধান কমিটির দিকেই। ইতিমধ্যে ইসি গঠনে কাজে নেমে পড়েছেন সার্চ কমিটির সদস্যরা। তারা নিজেদের মতো করে হোমওয়ার্ক শুরু করেছেন। কাল শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম সভায় বসছেন তারা। কমিটির প্রধানের সম্মতিতে শনিবার বেলা ১১টায় সুপ্রিম কোর্টের জাজেজ লাউঞ্জে বসবেন। এ বৈঠকে কিছু নাম নিয়েও আলোচনা হবে। সার্চ কমিটির দুই সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

জানা গেছে, ছয় সদসে?্যর সার্চ কমিটি নতুন নির্বাচন কমিশনের জন?্য নাম প্রস্তাব করবে; এর মধ?্য থেকে অনধিক পাঁচ সদস্যের ইসি গঠন করবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। বুধবার সার্চ কমিটি গঠিত হওয়ার পর ১০ কার্যদিবসের মধ্যে নতুন নির্বাচন কমিশনের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে নামের তালিকা দেবেন তারা।

সার্চ কমিটির প্রধান করা হয়েছে

সুপ্রিম কোর্টের আপলি বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে। বর্তমান ইসি গঠনে বিগত কমিটিরও একই দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। এ কমিটির অন্যরা হলেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক, কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) মাসুদ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য শিরীন আখতার। এর মধ্যে তিন সদস্যের উপস্থিতিতে কোরাম গঠিত হবে। সভায় উপস্থিত সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে প্রস্তাব চূড়ান্ত করবে তারা। সিদ্ধান্তের সমতার ক্ষেত্রে সভায় সভাপতিত্বকারী সদস্যের নির্ণায়ক সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা থাকবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে। নিজেদের প্রস্তাব চূড়ান্ত করে রাষ্ট্রপতির কাছে তা পাঠাবে সার্চ কমিটি। রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ দেওয়ার মধ?্য দিয়ে বিলুপ্তি ঘটে এ কমিটির। অনুসন্ধান কমিটির কাজে সাচিবিক সহায়তা দিচ্ছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এদিকে কমিটি গঠনের পর গতকাল ছয় সদস্যের কাছে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন পাঠানো হয়েছে। বিকেলের পর সদস্যদের বৈঠকের স্থান ও সময়সূচি জানিয়ে দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সার্চ কমিটির একজন সদস্য বলেছেন, ‘আমাদের কমিটির প্রথম সভার স্থান ও সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রধানের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকেই তাকে সভার বিষয়ে জানানো হয়েছে। সার্চ কমিটির প্রথম সভা সুপ্রিম কোর্টের জাজেজ লাউঞ্জে হবে শনিবার বেলা ১১টায়। অপর এক সদস্য বলেছেন, প্রাথমিকভাবে সম্ভাব্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনারদের নাম সংগ্রহ করবেন তারা। বিভিন্ন সূত্র থেকে তারা খোজ নিচ্ছেন। প্রথম বৈঠকে যেন কয়েকটি নাম নিয়ে আলোচনা করা যায় সে জন্য কিছু কাজ এগিয়ে রাখার কাজ শুরু করছেন। বিগত সার্চ কমিটি কীভাবে কাজ করেছিল, তাও তারা বিবেচনায় নিচ্ছেন। এ কমিটি প্রস্তাবিত বিভিন্ন নাম থেকে এবং নিজেরা বাছাই করে যোগ্যদের একটি তালিকা রাষ্ট্রপতিকে দেবে। এ জন্য তাদের সময় দেওয়া হয়েছে ১০ কার্যদিবস। ২০১২ সালের সার্চ কমিটি ২২ জানুয়ারি গঠনের পর ৭ ফেব্রুয়ারি ১০ জনের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে দিয়েছিল। এর মধ্য থেকে পাঁচজনকে ৮ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপ্রধান।

এদিকে নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার বাছাইয়ে রাষ্ট্রপতি ছয় সদস্যের যে সার্চ কমিটি করেছেন, ওই কমিটির কার্যপরিধি ও কর্মপদ্ধতিতে অন্তত একজন নারীসহ প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে নাম প্রস্তাব করতে বলা হয়েছে। এতে স্পষ্ট হয়েছে, নির্বাচন পরিচালনাকারী সাংবিধানিক এ সংস্থাটিতে একজন নারীকে নিয়োগ দিতে যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি। কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথম ভাগে বিদায় নেবে। এর পরই সাংবিধানিক সংস্থাটিতে দায়িত্ব নেবেন নতুন ব্যক্তিরা, যাদের অধীনে হবে পরবর্তী সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন কমিশন গঠনের এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির। সংবিধানে বলা আছে, একটি আইনের অধীনে তিনি এ নিয়োগ দেবেন। তবে চার যুগেও ওই আইনটি হয়নি। আগের রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে একটি সার্চ কমিটি গঠন করেন। তাদের মনোনীত ব্যক্তিদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেন।

অর্থাৎ সার্চ কমিটি নির্বাচন কমিশন ঠিক করে দেবে না, তারা রাষ্ট্রপতিকে সহায়তা করতে কিছু নাম বাছাই করে দেবে। রাষ্ট্রপতি তা থেকে নিয়োগ দেবেন। বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদও একই পদ্ধতি অনুসরণ করছেন। তবে গতবার চার সদসে?্যর সার্চ কমিটির পরিবর্তে এবার ছয় সদসে?্যর কমিটি করেছেন তিনি। এই কমিটিতে দুই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে তিনি এনেছেন।

কখন বিদায় বর্তমান ইসির : ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ পূর্ণ হচ্ছে। সিইসি ৮ ফেব্রুয়ারি শেষ অফিস করবেন বলে জানান বর্তমান ইসি ও এর সচিবালয়। পাঁচ বছর আগে সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ ও তিন নির্বাচন কমিশনার ৯ ফেব্রুয়ারি এবং আরেকজন নির্বাচন কমিশনার ১৫ ফেব্রুয়ারি শপথ নিয়ে নির্বাচন কমিশনে যোগ দিয়েছিলেন। সে ক্ষেত্রে বর্তমান কমিশনের মেয়াদ ৮ ফেব্রুয়ারি ও ১৪ ফেব্রুয়ারি পূর্ণ হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তবে এটিএম শামসুল হুদা ও একজন নির্বাচন কমিশনার ২০০৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি যোগ দিলেও বিদায় নিয়েছেন ২০১২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি। আরেকজন নির্বাচন কমিশনার ১৪ ফেব্রুয়ারি যোগ দিয়ে বিদায় নেন ২০১২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। বর্তমান ইসির বিদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদায় অনুষ্ঠানের কোনো কর্মসূচি নেই। তবে ৮ ফেব্রুয়ারি বর্তমান সিইসির শেষ অফিস।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর