সোমবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

টাকা খরচের জায়গা না পেলে শিক্ষায় বিনিয়োগ করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক

টাকা খরচের জায়গা না পেলে শিক্ষায় বিনিয়োগ করুন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন

জনপ্রতিনিধিসহ বিত্তবানদের শিক্ষার উন্নয়নে, বিশেষ করে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ তৈরিতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গতকাল সকালে রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে ‘জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ ২০১৭’ এবং ‘প্রাথমিক শিক্ষা পদক বিতরণ’ অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, যারা সংসদ সদস্য আছেন, বিত্তশালী মানুষ আছেন, অনেকের এত টাকা হয়ে গেছে যে খরচ করার জায়গা পান না। তাদের অনুরোধ করব, নিজ গ্রামে বা স্কুলগুলোতে যদি একটি করে ল্যাপটপ ও প্রজেক্টর উপহার দেন, তাহলে অনেক সহজে আমাদের ছেলে-মেয়েরা মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম পায়। শিক্ষায় বিনিয়োগ করুন। তিনি বলেন, প্রযুক্তির শিক্ষা একান্ত অপরিহার্য। আমাদের সর্বস্তরের শিক্ষায় এই প্রযুক্তি ব্যবহার হোক। এই দেশকে আজকের শিশুরা আগামী দিনে পরিচালিত করবে। তিনি বলেন, আমরা একটা যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছি। সে শিক্ষা নীতিতে আমরা ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেছি। সব ধর্মের সম্পর্কে সবারই জ্ঞান থাকা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। আমরা সবাই নিজ নিজ ধর্ম পালন করব। শিশুদের অপরাধ প্রবণতা থেকে দূরে রাখতে শিক্ষক ও অভিভাবকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হঠাৎ করেই আমাদের শিশু কিশোর অপরাধ বেড়ে গেছে। শিশুদের সঠিক শিক্ষা দিতে হবে। তারা যেন অপরাধ কর্মকাণ্ডে না জড়ায় সে জন্য শিক্ষক ও অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে। তিনি বলেন,  সারাক্ষণ যদি শিশুদের বলতে থাকেন, পড় পড় পড়, তাহলে পড়তে ভালো লাগে না। পড়াশোনার প্রতি যাতে তাদের আগ্রহ বাড়ে সে কাজ করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসটা শিশুদের জানাতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানলে শিশুরা ছোট থেকেই দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে উঠবে। তিনি বলেন, ক্ষুধা মুক্ত দারিদ্র্য মুক্ত দেশ গড়তে গেলে শিক্ষাই হচ্ছে মূল হাতিয়ার। শিক্ষার মাধ্যমেই আমরা এই জাতিকে গড়ে তুলতে পারব। কিনি বলেন, শিক্ষা খাতে বাজেটে যে টাকা আমরা দেই, এটাকে ব্যয় মনে করি না। এটাকে বিনিয়োগ মনে করি। এই বিনিয়োগের মাধ্যমে আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গড়ে তুলছি। পিইসি এবং জেএসসি পরীক্ষা অব্যাহত রাখার পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দুটি পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের মাঝে এসএসসি পরীক্ষার জন্য আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করছে। আমি দেখলাম হঠাৎ এ দুটি পাবলিক পরীক্ষা নিয়ে কিছু কিছুু সমালোচনা শুরু হয়ে গেল এবং এই পরীক্ষা বন্ধ করারও দাবি উঠল। কিন্তু তাদের এই দাবি মোটেও বাস্তবসম্মত নয়। তিনি বলেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা যেন হারিয়ে না যায়, সেজন্য পাঁচটি গোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষায় লেখা আট ধরনের পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হয়েছে। প্রাথমিক শিশুদের বই আকর্ষণীয় করার পাশাপাশি ডিজিটাল শিক্ষার জন্য আমরা ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি করেছি। তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই যেন নেতৃত্বটা গড়ে ওঠে সে জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে আমরা স্টুডেন্ট কাউন্সিল গঠন করেছি। সেখানে তারা ভোট দিচ্ছে, নেতৃত্ব দিচ্ছে। আমাদের একটি শিশুও শিক্ষা বঞ্চিত থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৩ সালে ২৬ হাজার ৯৮৩টি রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করি। সেখানে কর্মরত ১ লাখ ১১ হাজার শিক্ষকের চাকরি জাতীয়করণ করা হয়েছে। জেলায় জেলায় সরকারিভাবে অথবা বেসরকারিভাবে একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়ক ট্রাস্ট ফান্ড করা হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষাদান এবং বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনায় বিশেষ অবদানের জন্য জেলা প্রশাসক, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পিটিআই প্রশিক্ষক এবং শিক্ষকসহ ১৯ জনকে জাতীয় শিক্ষা পদক ২০১৬ দেন প্রধানমন্ত্রী। ‘শিক্ষার আলো জ্বালবো, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়বো’ প্রতিপাদ্যে শিক্ষা সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মোহাম্মদ আসিফ-উজ-জামান এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল।

সর্বশেষ খবর