সোমবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

ট্রাম্পের মুসলিম নিষেধাজ্ঞা আটকে দিল আদালত

টেক্সাসে মসজিদে আগুন দেওয়ার অভিযোগ

প্রতিদিন ডেস্ক

ট্রাম্পের মুসলিম নিষেধাজ্ঞা আটকে দিল আদালত

শরণার্থী বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি আদেশ স্থগিত করেছে দেশটির আদালত। এর ফলে বৈধ ভিসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছার পরও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার আওতায় কয়েকটি দেশের নাগরিকদের বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানোর যে প্রক্রিয়া মার্কিন কর্তৃপক্ষ শুরু করেছে, আদালতের আদেশে তা আটকে গেছে। এতে আমেরিকাগামী শরণার্থীদের আপাতত স্বস্তি মিলল।

পাশাপাশি প্রশাসনিক নির্দেশের পর যেসব শরণার্থীকে আটক করা হয়েছে তাদের নামের সম্পূর্ণ তালিকা তৈরির আদেশ দিয়েছে আদালত। গতকাল আদালতের এ রায়ের ফলে বৈধ ভিসাধারীসহ শরণার্থী হিসেবে আবেদনকারীদের আমেরিকায় ঢোকায় আপাতত আর কোনো বাধা রইল না। শুক্রবার জারি করা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ওই আদেশের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন। সেই মামলার রায়ে আমেরিকায় এক প্রাদেশিক আদালতের বিচারক অ্যান ডনেলি এ রায় দিয়েছেন। বিচারক অ্যান ডনেলি জানিয়েছেন, এ ধরনের নির্দেশের ফলে ক্ষতিগ্রস্তদের অপূরণীয় আঘাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ওই সংগঠনের হিসাব অনুযায়ী, ট্রাম্পের আদেশের জেরে ১০০ থেকে ২০০ জনের মতো লোক বিভিন্ন বিমানবন্দরে বা ট্রানজিটে আটকা পড়েছেন। ট্রাম্পের ওই নির্বাহী আদেশের ফলে আমেরিকার পুরো শরণার্থী কর্মসূচিই থমকে গেছে। তা ছাড়া ইরান, ইরাক, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া ও ইয়েমেনের মতো দেশগুলোর নাগরিকদের আমেরিকা সফরের ওপর ৯০ দিনের নিষেধাজ্ঞাও আরোপিত হয়েছে। যারা তখন মাঝ আকাশে ছিলেন তাদের অনেককে বিমানবন্দরে অবতরণের পর আটকানো হয়েছে - যদিও তাদের বৈধ মার্কিন ভিসা কিংবা অন্যান্য অভিবাসন পারমিট ছিল। ওই ঘোষণার পর ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, এটা দারুণ কাজ করছে। আপনারা বিমানবন্দরগুলোতে সেটা দেখতে পাচ্ছেন, সর্বত্রই দেখতে পাচ্ছেন! কিন্তু এখন নিউইয়র্কের মার্কিন ডিস্ট্রিক্ট জাজ অ্যান ডনেলি তার রায়ে বলেছেন, যেসব শরণার্থীর আবেদন আগেই অনুমোদিত হয়েছে কিংবা অন্য যেসব ব্যক্তির বৈধভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ভিসা বা পারমিট আছে তাদের ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না। তবে বিচারকের রায়ে ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের সাংবিধানিকতা নিয়ে কিছু বলা হয়নি। বিভিন্ন বিমানবন্দরে যারা আটকা পড়েছেন তাদের ঠিক কী হবে, সেটা এ রায়ের পরও স্পষ্ট হয়নি। এদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আদেশের জেরে যারা সরাসরি প্রভাবিত হয়েছেন তারা বলছেন তাদের স্বপ্ন ভেঙে  গেছে- প্রবল হতাশা ঘিরে ধরছে তাদের। এদিকে আদালতের রায় ঘোষণার পরই আদালতের বাইরে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন বহু মানুষ। জেএফকেসহ বিভিন্ন এয়ারপোর্টে তুমুল বিক্ষোভ : ‘লেট দেম ইন’, ‘ব্যান-ডেথ’ ‘উই আর আমেরিকান-উই স্টে হিয়ার’ ইত্যাদি স্লোগানে জেএফকে (জন এফ কেনেডি) এয়ারপোর্টের ৪ নম্বর টার্মিনাল প্রকম্পিত করেন হাজারো ক্ষুব্ধ নারী-পুরুষ। সবাই ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন এবং মুসলিম বিদ্বেষমূলক নির্বাহী আদেশ।

‘এমন জঘন্য আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রকে সংঘাতে লিপ্ত করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এমনকি গ্রিনকার্ডধারীদেরও যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না’— বলেন বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বাংলাদেশি-আমেরিকান ডেমোক্রেটিক লিগের প্রেসিডেন্ট খোরশেদ খন্দকার। এদিকে গ্রিনকার্ডধারীদেরও যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে না দিয়ে ডিটেনশন সেন্টারে নেওয়া হচ্ছে-এমন সংবাদ জানার পর মুক্ত-বিবেকের চলচ্চিত্রকার মাইকেল ম্যুর টুইট বার্তায় শনিবার বিকালে সবাইকে জেএফকে এয়ারপোর্টে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানান। সে আহ্বানে সাড়া দিয়ে দুই সহস াধিক নারী-পুরুষ জড়ো হন ৪ নম্বর টার্মিনালে।

আয়োজক হিসেবে বিশেষ কোনো সংগঠনের ব্যানার ছিল না। ছিল শুধু প্লাকার্ড। ৪ তলাবিশিষ্ট এ টার্মিনালের প্রতিটি ফ্লোর বিক্ষোভকারীদের দখলে ছিল। তবে সবাই শান্তিপূর্ণভাবে স্লোগান ও মতামত দেওয়ায় নিরাপত্তারক্ষীরা কাউকে বিরক্ত করেনি। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে হুইল চেয়ারে ভর দিয়ে আসা লোকজনও ছিলেন। বিবিসি, এএফবি, এনআরবি।

টেক্সাসে মসজিদে অগ্নিসংযোগ : আমেরিকার টেক্সাসে ‘দ্য ইসলামিক সেন্টার অব ভিক্টোরিয়া’ মসজিদে আগুন দেওয়া হয়েছে। এতে মসজিদটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। এ ঘটনা ঘটে শনিবার ভোরে।

শুক্রবার সিরিয়াসহ ৭টি মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার এ আদেশ জারির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই টেক্সাসের মসজিদটিতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটল। খবর আরটিভি সূত্রের।

পুলিশ জানায়, খবর পেয়ে ৪ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে দমকল বাহিনীর সদস্যরা। তবে তারা আগুন লাগার কারণ  জানাতে পারেনি। মসজিদটির ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রেসিডেন্ট শাহিদ হাশমি বললেন, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মসজিদটি ধ্বংস হতে দেখা খুব কষ্টের। আগুনের লেলিহান শিখা এতটাই ছিল যে, মসজিদটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। ২০০০ সালে  মসজিদটি নির্মাণ করা হয়।

সর্বশেষ খবর