সোমবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
গাইবান্ধায় স্কুলে আগুন

কালো কাপড়ে মুখ বেধে প্রতিবাদ

গাইবান্ধা প্রতিনিধি

গাইবান্ধার কুন্দেরপাড়া চরের মাধ্যমিক স্কুল পুড়িয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে বিভিন্ন সামাজিক ও নাগরিক সংগঠন কালো কাপড়ে মুখ ঢেকে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে। গতকাল গাইবান্ধাসহ ওই স্কুল চত্বরে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এদিকে গত বৃহস্পতিবার রাতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া স্কুল চত্বরে গতকালও শিক্ষার্থীরা খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করেছে। প্রধান শিক্ষক মো. আসাদুজ্জামান জানান, দ্বিতীয় দিনের মতো পোড়া স্কুলের মাঠ এবং আগুন থেকে রক্ষা পাওয়া দুটি শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হয়েছে। মাঠে অস্থায়ী তাঁবু টানিয়ে এ পাঠদান করা হয়। তিনি আরও জানান, আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার্থীদের পুড়ে যাওয়া প্রবেশপত্র আনতে দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডে স্কুল থেকে শিক্ষকরা গিয়েছিলেন। সেখান থেকে জানানো হয়েছে, প্রবেশপত্র পেতে কোনো অসুবিধা হবে না। গাইবান্ধা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম মেহেদী হাসান জানিয়েছেন, আগুনে গণউন্নয়ন একাডেমি পুড়ে যাওয়ার আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। এগুলো পরীক্ষার জন্য বিশেষজ্ঞ টিম ঘটনাস্থলে যাবে। অগ্নিসংযোগের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করতে পুলিশি তদন্ত চলছে। এ ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন প্রধান আসামি মো. রঞ্জু মিয়াকে (৩০) গ্রেফতার করা হয়েছে। গতকাল কুন্দেরপাড়া গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি ওই গ্রামের মজিবর রহমানের ছেলে।

কালো কাপড়ে প্রতিবাদ : ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল স্কুল চত্বরে ছাত্র জমায়েত করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন এবং গাইবান্ধা শহরে মুখে কালো কাপড় বেঁধে মানববন্ধন করেছে বেশ কয়েকটি সংগঠন। গাইবান্ধা শহরের ডিবি রোডের মানববন্ধনে অংশ নেয় জেলা মানবাধিকার ফোরাম, মানবাধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, মানবাধিকার নারী সমাজ, মানবাধিকার নাট্য পরিষদ, মানবাধিকার সামাজিক উদ্যোক্তা দল, পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোট। এ কর্মমূচিতে আরও বিভিন্ন সংগঠনের বিপুল সংখ্যক সদস্য, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী এবং শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। এ সময় বক্তারা বলেন, এই নাশকতার সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক। সেই সঙ্গে চরাঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের শিক্ষার উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কুন্দেরপাড়া গণউন্নয়ন একাডেমি বিদ্যালয়কে এমপিওভুক্ত করা হোক এবং সরকারি আর্থিক সহায়তায় জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন নির্মাণসহ আসবাবপত্র, লাইব্রেরির বই-পুস্তক ও শিক্ষা উপকরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।  সে সঙ্গে যে সব শিক্ষার্থীর সনদপত্র পুড়ে গেছে তাদের সনদপত্রের ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানানো হয়। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন গাইবান্ধা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও মানবাধিকার ফোরামের আহ্বায়ক আবু জাফর সাবু, উপাধ্যক্ষ জহুরুল কাইয়ুম, সিপিবি সভাপতি মিহির ঘোষ, জাসদের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মারুফ মনা, জিয়াউল হক জনি, মানবাধিকার ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কাজী আবদুল খালেক, মানবাধিকার কর্মী হাসিনা জোয়ারদার, আবদুর রউফ, বিপুল কুমার দাস, বিদ্যালয় শিক্ষার্থী শাপলা আকতার, আবদুল জলিল প্রমুখ। এ ছাড়া স্কুল পোড়ানোর প্রতিবাদে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন গাইবান্ধা জেলা সংসদ গতকাল ওই স্কুলের শহীদ মিনার চত্বরে ছাত্র জমায়েত করে। এতে স্কুলের সব শিক্ষার্থী অংশ নেয়। জমায়েতে বক্তারা বলেন, নাশকতা ও সন্ত্রাসী তত্পরতার মাধ্যমে যে সন্ত্রাসী চক্র এদেশের নারী শিক্ষাকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়, তারাই সুপরিকল্পিতভাবে প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের শিক্ষার উন্নয়নে নিয়োজিত এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। বক্তারা অবিলন্বে ঘটনার সঙ্গে যুক্তদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। জমায়েতে বক্তব্য রাখেন ছাত্র ইউনিয়ন জেলা সংসদের সভাপতি তপন দেবনাথ, সাধারণ সম্পাদক আসমানী আকতার আশা, রানু সরকার, ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষক রোস্তম আলী, নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী  সোনালী, দশম শ্রেণির ছাত্র মমিনুর প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর