নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে সার্চ (অনুসন্ধান) কমিটির কার্যক্রম সম্পর্কে আশা-নিরাশা দুটোই দেখছে বিএনপি। সার্চ কমিটির ওপর পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছে না দলটি। কমিটির প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন তুলেছেন দলীয় নেতারা। দলটির শীর্ষ নেতৃত্বের মতে, কাজী রকিব কমিশনের মতো ‘বিতর্কিত’ ইসি গঠন করা হলে মানবে না বিএনপি। ইসিতে একতরফা নিয়োগ দেওয়া হলে মাঠে সরব থাকার নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে দলটির। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণেরও উদ্যোগ নেওয়া হবে।
আবার দলের নেতারা সার্চ কমিটির কর্মকাণ্ড নিয়ে আশার কথাও বলছেন। তাদের মতে, সার্চ কমিটির সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্ট নাগরিকরা যেসব প্রস্তাব দিয়েছেন, তার আলোকে নির্বাচন কমিশন গঠন হলে তা সবার কাছেই গ্রহণযোগ্য হবে। এসব সুপারিশের ভিত্তিতে ইসি হলে বিএনপির কোনো প্রশ্ন থাকবে না।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সার্চ কমিটি নিয়ে শুরু থেকেই আমাদের প্রশ্ন আছে। আগেরবার করা সার্চ কমিটির প্রধানই এবার দায়িত্বে আছেন। ওই সার্চ কমিটি ‘রকিব মার্কা’ কমিশন দিয়েছিল, যা নিয়ে পুরো জাতিরই প্রশ্ন ছিল। তবে এবার কমিটির সঙ্গে সমাজের সুধীজনরা আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। তারা কমিটিকে বলেছেন, সবার কাছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন উপহার দেওয়ার জন্য। যদি ‘রকিব মার্কা’ কমিশন হয়, তাহলে পরিবর্তিত পরিস্থিতি বিবেচনায় কর্মসূচি দেওয়া হবে। দলীয় সূত্রমতে, সার্চ কমিটির কার্যক্রম গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতাকেও কমিটির কর্মকাণ্ড খোঁজখবর রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি বিশিষ্টজনদের কমিটির কাছে দেওয়া বক্তব্যগুলো নিয়েও বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। তবে এ পর্যন্ত সার্চ কমিটির কার্যক্রমকে ইতিবাচকভাবেই দেখছে বিএনপি। শতাধিক নামের তালিকা থেকে সংক্ষিপ্ত ২০ জন নিয়েও দলটিতে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। বিএনপি নেতারা জানান, নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিএনপি যে তালিকা সার্চ কমিটিতে জমা দিয়েছে তা থেকেই সব নিতে হবে এমনটা তারা বলছেন না। তবে নিরপেক্ষ, অবিতর্কিত ও যোগ্যদের অবশ্যই নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ দিতে হবে। এক্ষেত্রে যে কোনো দলের সুপারিশকেই গ্রহণ করতে পারে সার্চ কমিটি। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, সরকার যদি একতরফাভাবে নির্বাচন কমিশন গঠন করে তবে ওই ইস্যুতেই রাজপথে নামবে বিএনপি। ‘রকিব কমিশনের’ মতোই নতুন ইসির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া হবে। এ নিয়ে সারা দেশে জনমত তৈরি করা হবে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পরবর্তী সব কর্মসূচিতেই নতুন ইসির বিরুদ্ধে বক্তব্য আসবে। নির্বাচন কমিশন গঠনের নিরপেক্ষতা বজায় রাখা নিয়ে বিদেশিদের দিয়েও চাপ প্রয়োগ করতে চায় বিএনপি। এক্ষেত্রে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের সহযোগিতা প্রত্যাশা করে দলটি। এ নিয়ে বিএনপির কূটনৈতিক সংশ্লিষ্ট নেতারা কাজও করে যাচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটির কাছে দলের পক্ষ থেকে যেসব নাম দেওয়া হয়েছে, তাদের কেউই বিএনপি করেন না। তারপরও সমাজে তাদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। যোগ্য ও দল নিরপেক্ষ তারা। তাই সার্চ কমিটির কাছে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে যোগ্য, অবিতর্কিত ও নিরপেক্ষদেরই নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের সুপারিশ করার। তারা কোন পদ্ধতিতে সুপারিশ করেন তা দেখার অপেক্ষায় জাতি। দলের ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে সার্চ কমিটির যে বৈঠক হয়েছে তা যেন লোক দেখানো না হয়। সবার মতামতের ভিত্তিতেই নির্বাচন কমিশন চাই।