‘আমার মেয়ে মিতুকে অনেক কষ্ট দিত বাবুল এবং তার পরিবার। একাধিকবার তারা বাবুলকে অন্য জায়গায় বিয়েও দিতে চেয়েছিল। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে মিতু কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করে। তবে সন্তানদের কথা চিন্তা করে ফিরে এসেছে। অনেক নারীর সঙ্গে পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল বাবুলের। তবে আমার নাতি-নাতনির কথা চিন্তা করে আমরা এতদিন মুখ খুলিনি। নাতি মাহির বার বার বলত, আমার বাবাকে পুলিশে দিও না। তাহলে আমরা বড় হয়ে কী বলব?’ এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন বাবুল আক্তারের শ্বশুর অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন। গতকাল রামপুরার মেরাদিয়ায় ভূইয়াপাড়া ২২০/এ নম্বরের বাসায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি তার জামাতা অবসরে যাওয়া পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকে নিয়ে খোলামেলা অনেক কথাই বলেছেন। এ সময় পাশে ছিলেন তার স্ত্রী সাহিদা মোশাররফ। মোশাররফ হোসেন জানান, ইতিমধ্যে তিনি বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার কামরুজ্জামানের কাছে জমা দিয়েছেন। মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমার মেয়ে মিতু আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল, তা জানতে পারি মিতু খুনের পর। চট্টগ্রামের পাড়া-প্রতিবেশী এবং কাজের মেয়ের কাছ থেকে এসব বিষয়ে জানতে পারি। তবে বাবুলের বাবা-মা, ভাই-বোন মিতুকে অনেক কষ্ট দিতেন এ কথা আমরা আগেই জানতাম। অনেক মেয়ের সঙ্গে তার পরকীয়া ছিল তাও টের পেয়েছিল মিতু। বাবুলের বোন একবার বাবুলকে একটি মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দিতে চেয়েছিল। এ কথাটি মিতুও জানত। মিতুর জানাজায় বাবুলের বাবা-মাও আসেননি। মিতু হত্যাকাণ্ডের মামলার বাদী আমি হতে চেয়েছিলাম। তবে বাবুলের প্রবল ইচ্ছার কারণেই তাকে বাদী করা হয়েছিল।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মিতুকে নির্যাতনের কথা বাসায় অর্ডারলি কনস্টেবল সাদ্দাম, কাজের মেয়ে ফাতেমা, আমার নাতি মাহিরসহ আশপাশের বাসিন্দারা অনেকেই জানতেন। বাবুল প্রায়ই গালাগালি করত।’ বাবা মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমি যদি অপরাধী হই তাহলেই তো গা ঢাকা দেব। এখন সে গেল কেন? ভাগল কেন? তার চলে যাওয়ার তো কোনো যৌক্তিকতা নেই। এ ছাড়া নতুন চাকরি হওয়ার শর্ত হিসেবেও বাবুলকে দুই বছর এখানে থাকার কথা ছিল। সন্তানগুলো আমাদের কাছে থাকত। দুঃসময়ে আমরা তাকে আগলে রেখেছি। বাচ্চারা এখানে ভর্তি হইল। আইডিয়াল স্কুল ঢাকার ‘এ’ ক্যাটাগরির স্কুল। তার পরও তাদের নিয়ে গেছে। মামলা যেহেতু তদন্তাধীন, তার তো চলে যাওয়ার কথা নয়। এখন আমরা কী ভাবব? বাবুল বাদী না আসামি?’ নিজের অভিজ্ঞতার বিষয়টি উল্লেখ করে মোশাররফ বলেন, ‘বাবুলের কারণে তার স্ত্রীকে হত্যা করা হবে কেন? আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি বাবুলের পরিবারের কারও ওপর সন্ত্রাসীদের আক্রমণ করার কথা নয়। বাবুল আক্তারের পরিবারের কোনো সদস্যের ওপর কেউ আক্রমণ করার সাহস করবে না। এ বিষয়টি কেউ সন্দেহও করে না। সর্বোচ্চ তার সন্তানকে অপহরণ করলেও করতে পারত। কারণ চট্টগ্রামে অপহরণের অনেক ঘটনা ঘটে। ভারতের পুলিশপ্রধানের ছেলেকে অপহরণের পর চট্টগ্রামে লাশ পাওয়া যায়। ওই মামলায় আমি সাক্ষ্য দিয়েছি। নিহত ব্যক্তি বৈধভাবে এ দেশে প্রবেশ করেছেন কিনা এ ব্যাপারে আমি সাক্ষ্য দিয়েছি। কারণ ওই সময় আমি বেনাপোলে কর্মরত ছিলাম। আর বাবুল যদি জড়িত নাই হয়, তাহলে সে মুখ খোলে না কেন? চাইলে তো সে প্রেস কনফারেন্স করতে পারত।’ মিতুর মা সাহিদা মোশাররফ বলেন, ‘এতদিন অবুঝ দুটি সন্তানের কথা চিন্তা করে মুখ খুলিনি। একাধিক নারীর সঙ্গে বাবুলের সম্পর্ক ছিল। এ কারণে মিতুর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করত বাবুল। তবে মৃত্যুর ১৫ দিন আগে হঠাৎ করে আমাকে ফোন করে বলছিল, মা বাবুল ভালো হয়ে গেছে। এখন আর আগের মতো খারাপ আচরণ করে না। মিতুই বলছিল, বয়স হইছে। হয়তো ছেলেমেয়ের কথা চিন্তা করে সে এখন নিজেরে শোধরাইছে। কিন্তু ১৫ দিন পরই আমার মেয়ে আর দুনিয়াতেই থাকল না।’ প্রসঙ্গত, গত বছরের ৫ জুন ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে গিয়ে চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন মিতু। হত্যাকাণ্ডের পর বাবুল আক্তার বাদী হয়ে অজ্ঞাত পরিচয় তিনজনকে আসামি করে পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা করেন।