বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন-ইউজিসি গত বছর জুলাইয়ে এক তদন্তে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (এনএসইউ) প্রায় এক ডজন শিক্ষকের জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার প্রমাণ পায়। ইউজিসির তদন্ত দল এনএসইউতে ব্যাপক অনিয়ম ও এক ডজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে জঙ্গি তৎপরতায় অংশ নেওয়ার অনেক তথ্য-প্রমাণ পায়। পরে এই শিক্ষকদের কয়েকজনকে বরখাস্ত করা হয়। তখন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে শতাধিক শিক্ষার্থী নিখোঁজ থাকার তথ্যও চায় ইউজিসি। ইউজিসির ওই তদন্তে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িত নর্থ সাউথের যেসব শিক্ষকের নাম আসে তারা হলেন— এনএসইউর ভারপ্রাপ্ত উপ-উপাচার্য অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন আহসান, বাণিজ্য অনুষদের ডিন অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, অধ্যাপক হান্নান মিয়া, ড. জসিম উদ্দিন আহমেদ, ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক ড. আবুল এল হক ও ড. আউয়াল, রেজিস্ট্রার শাহজাহান, একজন ডেপুটি রেজিস্ট্রার। এ ছাড়াও এই তালিকায় আরও কমপক্ষে তিনজন শিক্ষক ছিলেন, যাদের নাম জানা যায়নি। এই তদন্তের পর ইউজিসির চাপে তখন বরখাস্ত করা হয় এনএসইউর ভারপ্রাপ্ত উপ-উপাচার্য, স্কুল অব লাইফ সায়েন্স অনুষদের ডিন গিয়াস উদ্দিন আহসান, লাইব্রেরিয়ান ড. মোস্তাফিজুর রহমানসহ আরও কয়েকজনকে।
গত বছর ১৪ জুলাই নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় সরেজমিন তদন্তে যায় ইউজিসির প্রতিনিধি দল। ওই দলে ছিলেন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম, অধ্যাপক শাহনেওয়াজ আলী, কমিশনের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের উপ-পরিচালক জেসমিন পারভীন ও জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক বিষ্ণু মল্লিক।
এর আগে জঙ্গিবাদী কার্যক্রম এবং আর্থিক অনিয়ম বিষয়ক তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ে ২০১৫ সালের ১৯ আগস্ট নর্থ সাউথ পরিদর্শন করে ইউজিসির একটি তদন্ত দল। ওই তদন্ত দলের এক সদস্য তখন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে বেশকিছু নিষিদ্ধ জঙ্গিবাদী বই তারা পেয়েছিলেন। এ বিষয়ে নর্থ সাউথ কর্তৃপক্ষ সদুত্তর দিতে পারেনি।গুলশানের হলি আর্টিজানে উদ্ধার জিম্মিদের মধ্যে আবুল হাসনাত রেজা করিম ছিলেন নর্থ সাউথের সাবেক শিক্ষক, যাকে ওই ঘটনার এক ভিডিওর সূত্র ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সন্দেহ করা হচ্ছে। গত ১ জুলাই গুলশানে হামলাকারী যুবকদের সবাই বেশ কয়েক মাস ধরে নিখোঁজ ছিলেন, যাদের মধ্যে নিবরাস ইসলাম ছিলেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ছাত্র। এর এক সপ্তাহের মাথায় শোলাকিয়ায় হামলা চালাতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত আবীর রহমানও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। গুলশান ও শোলাকিয়ার ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে নিখোঁজ যে ১০ যুবকের তালিকা দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে জুন্নুন শিকদার ও বাসারুজ্জামানও নর্থ সাউথে পড়াশোনা করেছেন। জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের জড়িত থাকার বিষয়টি প্রথম আলোচনায় আসে ২০১৩ সালে ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যার ঘটনায়। ওই ঘটনায় জড়িত থাকায় দণ্ডিত সাদমান ইয়াসির মাহমুদ, ফয়সাল বিন নাঈম দীপ, এহসান রেজা রুম্মান, মাকসুদুল হাসান অনিক, নাঈম ইরাদ ও নাফিজ ইমতিয়াজ সবাই ছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী।