বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

দেশে আনা হলো র‌্যাবের গোয়েন্দা প্রধানকে

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে আনা হলো র‌্যাবের গোয়েন্দা প্রধানকে

সিঙ্গাপুর থেকে আবার দেশে ফেরত আনা হলো র‌্যাবের গোয়েন্দা প্রধান লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদকে। গত রাত ৮টা ৩১ মিনিটে সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে (ফ্লাইট মেডিক-৬০) করে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। এয়ার অ্যাম্বুলেন্স থেকে আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সে করে সেনাবাহিনীর দুঃসাহসী এই প্যারা কমান্ডোকে সরাসরি নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ)। সিএমএইচ-এ তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। গতকাল বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টায় সিঙ্গাপুরের প্যারাগন মেডিকেল সেন্টারের নিউরো বিশেষজ্ঞ ডা. ম্যাথিউর নেতৃত্বে একদল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ মতেই এই বীর সেনানীর পরিবারের সদস্যরা তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। সিঙ্গাপুরে সেনা কর্মকর্তা আজাদের চিকিৎসার খোঁজখবর রাখছেন সরকারের এমন এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে বলেন, আজাদের অবস্থা সংকটাপন্ন। তবে চিকিৎসকরা এখনো আশা ছাড়েননি। একটা মিরাকলের প্রত্যাশা করছেন তারা।

জানা গেছে, গতকাল রাত ৮টা ৩১ মিনিটে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে লে. কর্নেল আজাদকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্স অবতরণ করে। সাহসী সেনা কর্মকর্তাকে গ্রহণ করতে আগে থেকেই বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছিলেন র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান, পরিচালক (লিগ্যাল মিডিয়া) কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান, পরিচালক (অপস) লে. কর্নেল মাহবুব হাসানসহ সামরিক-বেসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। গুরুতর অসুস্থ দুঃসাহসী এই সেনা কর্মকর্তাকে রিসিভ করতে বিমানবন্দরে আগে থেকেই সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন সিএমএইচ-এর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সে করে রাত পৌনে ৯টার দিকে বিমানবন্দরের ৮ নম্বর কার্গো গেট দিয়ে তাকে সরাসরি নিয়ে যাওয়া হয় সিএমএইচে।  গত শনিবার সিলেটের জঙ্গি আস্তানায় বোমার আঘাতে আহত হওয়ার পর থেকে গতকাল পর্যন্ত লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন লে. কর্নেল আজাদ। তবে এই সেনা কর্মকর্তা সুস্থ হয়ে ফিরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এ যোগদান করে দেশসেবায় অবদান রাখবেন এমনটাই প্রত্যাশা তার পরিবার, সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের। শনিবার সন্ধ্যায় সিলেটের দক্ষিণ সুরমার জঙ্গি আস্তানা ‘আতিয়া মহলে’ অভিযানস্থলে গিয়ে শক্তিশালী বোমা হামলার শিকার হন এই র‌্যাব কর্মকর্তা। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে রাতেই ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নিয়ে আসা হয়। সিঙ্গাপুরে নেওয়ার আগ পর্যন্ত লে. কর্নেল আজাদ সিএমএইচ-এর নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন। রবিবার সন্ধ্যায় তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নেওয়া হয়। গত বছর রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় প্যারা কমান্ডোদের অপারেশন থান্ডারবোল্ট-এও এই কমান্ডোর বিশেষ ভূমিকা ছিল। চলতি বছর হলি আর্টিজানে বিশেষ ভূমিকার কারণে প্রশংসিত হন। এর আগে জঙ্গিবাদ এবং অপরাধ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকার জন্য বিপিএম (বাংলাদেশ পুলিশ পদক) এবং পিপিএম (প্রেসিডেন্ট পদক) পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি।

যেভাবে সিলেট গেলেন : রাজধানীর আশকোনায় হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিপরীতে পুলিশ চেকপোস্টে বোমা বিস্ফোরণে এক যুবক নিহত হওয়ার পর সারা রাত দেশের বিভিন্ন এলাকায় র‌্যাবের অভিযান সমন্বয় করেন তিনি। সিলেটের আতিয়া মহলের জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোরা দায়িত্ব নেওয়ার পর সেখানে ছুটে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখান লে. কর্নেল আজাদ। তার সহকর্মীরা বলছিলেন, নিজে কমান্ডো হওয়ার কারণেই সিলেটে যাওয়ার তাগিদ অনুভব করছিলেন তিনি। র‌্যাবের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সবুজ সংকেত পাওয়ার পরই তাড়াহুড়ো করে সিলেটে যাওয়ার বিমান টিকিট সংগ্রহ করান তিনি। জুনিয়র সহকর্মী মেজর আজাদকে নিয়ে ছুটে যান সিলেটের আতিয়া মহলের অভিযানে। জঙ্গিবাদ দমনে নিজের অভিজ্ঞতার কথা শোনান অভিযানের দায়িত্বে থাকা সিনিয়র এবং পরিচিত সহযোদ্ধা কমান্ডোদের। সারাদিন সেখানে অবস্থান শেষে রাতেই তার ঢাকায় ফিরে আসার কথা ছিল। সে অনুযায়ী ঘটনাস্থল ত্যাগ করার প্রস্তুতিও নেন তিনি এবং তার অধস্তন মেজর আজাদ। গাড়িতে ওঠার সময়ই লে. কর্নেল আজাদের চোখ পড়ে পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক চৌধুরী আবু মোহম্মদ কয়সর এবং জালালাবাদ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুল ইসলামের তল্লাশির দৃশ্যে। এ সময় তাদের ডেকে বলছিলেন, এভাবে তল্লাশি করা ঠিক না। প্রশিক্ষিত বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সহায়তা নেওয়ার জন্য বলেন তিনি। তার মুখের কথা শেষ না হতেই বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয় বোমাটি। মুহূর্তেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন দুই পুলিশ পরিদর্শক, লে. কর্নেল আজাদ, মেজর আজাদসহ অন্তত ১০ জন। একটি স্প্লিন্টার তার চোখ দিয়ে মস্তিষ্কে প্রবেশ করে। গুরুতর অবস্থায় তাদের নেওয়া হয় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় এই দুই সেনা কর্মকর্তাকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নিয়ে আসা হয়। পরদিন উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে।

লে. কর্নেল আজাদের পারিবারিক নাম রাসেল। সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার আগে তিনি পড়াশোনা করেছেন বিকেএসপি-তে। বিকেএসপির ক্রিকেট-৫ এর সদস্য ছিলেন তিনি। তবে এ সেনা কর্মকর্তা বেড়ে উঠেছেন আগারগাঁও তালতলার ছয়তলা সরকারি কলোনিতে। তার গুরুতর আহত হওয়ার খবরে শোকাবহ পরিবেশ বিরাজ করছে পুরো কলোনি এলাকায়। কেউ মানতে পারছেন না তাদের রাসেলের এমন অবস্থার বিষয়টি। প্রতি ওয়াক্তের নামাজের পর বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছে কলোনির মসজিদগুলোতে।

সর্বশেষ খবর