শনিবার, ১ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

আইপিইউ সম্মেলন আজ, ১৩১ দেশের এমপিদের মিলনমেলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের জঙ্গি তত্পরতা মোকাবিলা করেই আজ ঢাকায় শুরু হচ্ছে ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন—আইপিইউর ১৩৬তম সম্মেলন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় নির্মিত অস্থায়ী মঞ্চে এর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্মেলনে যোগ দিতে গতকাল পর্যন্ত ৪৫ জন স্পিকার ও ৩৭ জন ডেপুটি স্পিকার ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের ৬৮৭ জন সংসদ সদস্য এবং ২০৯ জন নারী সদস্যসহ ১ হাজার ৩৪৮ জন রেজিস্ট্রেশন করেছেন। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ও আইপিইউর যৌথ উদ্যোগে পাঁচ দিনের এই সম্মেলনে বাংলাদেশে উৎপাদিত যেসব পণ্য বিদেশে রপ্তানি হয়, সেগুলো নিয়ে একটি মেলারও আয়োজন করা হয়েছে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গতকাল সকালে অনুষ্ঠিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে আইপিইউ সম্মেলনের প্রস্তুতি নিয়ে বক্তব্য দেন স্পিকার ও সিপিএ চেয়ারপারসন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, আইপিইউর সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী ও মহাসচিব মার্টিন চুংগং। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন আইপিইউর মিডিয়া রিলেশন কর্মকর্তা জিন মিলিগান। সংবাদ সম্মেলনে আইপিইউ নেতারা বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ উত্থানের পেছনে সামাজিক বৈষম্য ও বিচারহীনতাকে দায়ী করে বলেন, ইস্যুটি মোকাবিলায় করণীয় নিয়ে সম্মেলনে আলোচনা হবে। তারা জানান, আইপিইউর সিদ্ধান্ত মানতে কেউ বাধ্য নয়, কারণ এটা জাতিসংঘের সিকিউরিটি কাউন্সিল নয়। তবে আইপিইউ এ বিষয়ে সংসদের নৈতিক দায় ও বিবেককে জাগ্রত করতে কাজ করছে। বিশ্বে ক্রমবর্ধমান বৈষম্য কমাতে চায় আইপিইউ।

ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘এই সম্মেলনের সফল আয়োজন বাংলাদেশের গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রায় এক অনন্য মাইলফলক। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনাগুলো আমরা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের সামনে তুলে ধরতে চাই।’ সম্মেলন আয়োজনের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সমগ্র বিশ্বে যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দেখা যায়, বাংলাদেশ তার বাইরে নয়। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সফলভাবে এই সম্মেলন আয়োজনে সর্বাত্মক কাজ করছে। এর মাধ্যমে এমন একটি মর্যাদাপূর্ণ ও ব্যাপক আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনের সক্ষমতা যে বাংলাদেশ রাখে বিশ্বের সামনে তা নিশ্চিত করতে পেরেছে।’

আইপিইউ প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমনের বিষয়ে আইপিইউর ভূমিকা কী হবে, তা সম্মেলনে আলোচনা হবে। কেন এই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সৃষ্টি হচ্ছে, তার মূল কারণ কী তা আমরা খুঁজে বের করতে চাই। তবে শুধু সামরিক শক্তি দিয়েই এটা মোকাবিলা করা যাবে না বা ঠিকও হবে না। জঙ্গিবাদের মূল কারণগুলো কী? অর্থাৎ আমরা শুধু জঙ্গিবাদের লক্ষণের দিকে তাকাব না, এটা কেন হচ্ছে সেই জায়গায় দৃষ্টি দিতে চাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘জঙ্গিবাদের ক্ষেত্রে সরকার যা করছে তা তো আছেই, সেই সঙ্গে সংসদ সদস্য হিসেবে আমরা কী করতে পারি আইপিইউ সম্মেলনে সেই কৌশল নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে তা ঠিক করা হবে। সেখানে সরকারের পাশাপাশি সংসদের কী ভূমিকা থাকবে, সংসদ সদস্যদের ভূমিকা কী হবে তা নিয়ে আলোচনা করব। কমিটিতে এ নিয়ে যে আলোচনা হবে তা পরবর্তীতে আমাদের কাউন্সিলে যাবে। এটি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।’ ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস নিয়ে এই সম্মেলনে আলোচনা হবে কিনা— জানতে চাইলে আইপিইউ সভাপতি বলেন, ‘এটি আমাদের এমপিদের আলোচনার ওপর নির্ভর করে। আমি আশা করি এমপিরা এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবেন। এর সুযোগ আছে।’ ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়ার নেতৃত্বে ১৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সম্মেলনে অংশ নেবে। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের একটি আয়োজনের মাধ্যমে এ দেশ গ্লোবাল পার্লামেন্টারি কমিটির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে। এই সম্মেলনের মাধ্যমে আমাদের কূটনৈতিক বিষয়টি আরও জোরাল হবে। এবারের সম্মেলনে সংসদ সদস্যরা বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার সুযোগ পাবেন। সেখানে বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করার একটি বড় সুযোগ থাকবে। এমন অনেক দেশ আছে যেসব দেশে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশন নেই। সেসব দেশের প্রতিনিধিরাও এসেছেন। ফলে সংসদীয় কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরিতেও এই সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’ সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গতকাল পর্যন্ত সম্মেলনে যোগ দিতে নিবন্ধিত ৫৩ জন স্পিকারের মধ্যে ৪৫ জন এবং ৪০ জন ডেপুটি স্পিকারের মধ্যে ৩৭ জন ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন। পার্লামেন্টের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার এবং ১৩১টি দেশের পার্লামেন্ট সদস্যসহ ১ হাজার ৩০০ প্রতিনিধি সম্মেলনে অংশ নেবেন। এর মধ্যে বিভিন্ন দেশের ৬৮৭ জন সংসদ সদস্য এবং ২০৯ জন নারী সদস্যসহ ১ হাজার ৩৪৮ জন রেজিস্ট্রেশন করেছেন। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ও আইপিইউর যৌথ উদ্যোগে আজ থেকে ৫ এপ্রিল প্রথমবারের মতো ঢাকায় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সম্মেলন উপলক্ষে সংসদ ভবনসহ রাজধানীর বিভিন্ন সড়কপথ আলোকসজ্জিত করা হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে কিছু সড়কে যানবাহন চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে লেজার শোসহ বর্ণিল আয়োজন করা হয়েছে।

এইচএসসি পরীক্ষার জন্য সতর্কতা : সম্মেলন চলাকালে এইচএসসি পরীক্ষার জন্য ২ ও ৪ এপ্রিল সম্মেলনের সময়সূচিতে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। ভিআইপি চলাচলের কারণে পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষার হলে পৌঁছতে যাতে কোনো অসুবিধা না হয়, সেজন্য ওই দুই দিন সকাল ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে কোনো ভিআইপি মুভমেন্ট বন্ধ রাখা হয়েছে। তার পরও এই সম্মেলনের কারণে মানুষের কিছু সমস্যা হবে। কিন্তু এই বিশাল আয়োজনের কথা বিবেচনা করে আইপিইউর সভাপতি এ বিষয়ে সার্বিকভাবে নগরবাসীর সহযোগিতা চেয়েছেন।

সর্বশেষ খবর