আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নতুন জোট গড়ার উদ্যোগ নিয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী এক ডজনের বেশি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে এ জোট গঠনের প্রস্তুতি চলছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি মাসের যে কোনো দিন আনুষ্ঠানিকভাবে ‘জাতীয় ঐক্যজোট’ নামে আত্মপ্রকাশ করবে নতুন এই নির্বাচনী জোট। এ ছাড়া দলকে নির্বাচনের জন্য পুরোদমে প্রস্তুত করতে প্রার্থী বাছাইসহ একগুচ্ছ পরিকল্পনা হাতে নিয়ে এগোচ্ছেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি। জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আগামী নির্বাচনে জোট করে ভোট করবে জাতীয় পার্টি। তিনি বলেন, নির্বাচন উপলক্ষে জোট করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে দলীয় প্রেসিডিয়াম বৈঠকে। রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, এপ্রিলের যে কোনো সময় জোট আত্মপ্রকাশ করবে। তিনি বলেন, ‘অন্তত ১০টি নিবন্ধিত দলের সঙ্গে আমরা বসব। এর পরই চূড়ান্ত হবে।’ মহাসচিব বলেন, ‘জোট নিয়ে আমরা চমকপ্রদ কিছু দেওয়ার অপেক্ষা করছি। নতুন এই জোটের চেয়ারম্যান হবেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।’ জানা যায়, একটি শক্তিশালী জোট গঠন করতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এইচ এম এরশাদ সম্প্রতি বলেছেন, ‘বেশকিছু রাজনৈতিক দল অনেক দিন ধরে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। অনেকে আমার সঙ্গে নানা দফায় বৈঠক করেছেন। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি নিবন্ধিত দল রয়েছে। কিছু দলের নিবন্ধন নেই। কিন্তু তাদের সমাজে পরিচিতি আছে। তারা সবাই জাতীয় পার্টিকে সামনে রেখে একটি নতুন জোট গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলে আসছেন। আমরাও নানা দিক বিবেচনায় নিয়ে জোট গঠনের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ তিনি জানান, ‘এই জোট হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে। এটি হবে মূলত একটি নির্বাচনী জোট। শরিক দলগুলোর মধ্যে ভালো প্রার্থী থাকলে এবং সেই প্রার্থীর জয়ী হয়ে আসার সম্ভাবনা থাকলে আমরা তাদের আসনে ছাড় দেব।’ পার্টির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ও প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, জাতীয় পার্টির প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। অনেকেই জাতীয় পার্টির উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন। এ কারণে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা যোগাযোগ শুরু করেছেন। কেউ কেউ ব্যক্তিগতভাবে নেতা-কর্মীদের নিয়ে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তাদের অনেকে ইতিমধ্যে যোগ দিয়েছেন। অনেকে আবার জোটভুক্ত হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এজন্য দুই জোটের বাইরে আলাদা একটি জোট গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের কয়েকটি শরিক দলও ভিতরে ভিতরে জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোট গঠনে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। দলগুলোর শীর্ষ নেতারা ইতিমধ্যে এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এ সময় তারা কেন বিএনপি জোটে থাকতে চান না সে বিষয়ে তাদের বেশকিছু যুক্তিও তুলে ধরেন। সূত্র জানায়, ২০-দলীয় জোট থেকে বিভিন্ন সময় বেরিয়ে যাওয়া কয়েকটি দলও জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোটভুক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বিএনপির সাবেক নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার নেতৃত্বাধীন জোট বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট অ্যালায়েন্সের (বিএনএ) শরিক একাধিক দলও জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোট করায় আগ্রহ জানিয়েছে। মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বে যে জোট হবে তার সঙ্গে যুক্তফ্রন্ট যুক্ত হবে। এ ছাড়া ১৪-দলীয় জোট ও ২০-দলীয় জোটের বাইরে থাকা কমপক্ষে এক ডজন রাজনৈতিক দল নানা সময়ে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে নয়া জোট গঠনের আগ্রহ প্রকাশ করে কথা বলেছে। এর বাইরে কয়েকটি ইসলামী দলের সঙ্গেও জোট গঠন বিষয়ে এরশাদের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আবদুস সবুর আসুদ বলেন, ‘আমাদের পার্টির চেয়ারম্যান চাইলে নতুন জোট গঠন করে ক্ষমতায় যাওয়া সম্ভব।’ তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নের রূপকার হলেন এরশাদ। রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনিই সফল। ফলে তার দ্বারা কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। জনগণ আস্থা রাখলে অবশ্যই তিনি সফল হবেন।