রবিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

দেশে লক্ষাধিক অবৈধ ওষুধের দোকান

মাহবুব মমতাজী

সারা দেশে এক লাখেরও বেশি লাইসেন্সবিহীন ওষুধের দোকান চলছে। এসব দোকানের মালিকদের বেশিরভাগই ওষুধ কিংবা চিকিৎসা বিজ্ঞান সংক্রান্ত কোনো জ্ঞান-প্রশিক্ষণ নেই। এ পরিস্থিতিতে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছে সাধারণ মানুষ। বাংলাদেশ কেমিস্ট ও ড্রাগিস্ট সমিতি বিষয়টির প্রতিকারে ব্যবস্থা নিতে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর এবং বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতিকে একাধিকবার চিঠি দিয়েছে। তবুও কোনো ফলোদয় হয়নি।

এভাবে চলতে থাকলে চরম ঝুঁকিতে থাকা মানুষগুলো মৃত্যুর দিকে দ্রুত ধাবিত হবেন বলেও জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

অভিযোগ রয়েছে, অবৈধ ওষুধের দোকানগুলোতেই নকল, ভেজাল এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি হয়। গত বছরের ২১ ডিসেম্বর ওষুধ নীতি অনুসারে ২৮৫টি এলোপেথিক ওষুধের তালিকা দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৩৯টি ওষুধ প্রেসক্রিপশন ছাড়া বিক্রি করা যাবে। কিন্তু সাধারণ ওষুধের দোকানগুলো  সে নির্দেশনা অনুসরণ করে না। জানা গেছে, বর্তমানে এক লাখ ৩০ হাজার লাইসেন্সধারী ওষুধের দোকান আছে। আর ড্রাগিস্ট সমিতির হিসাব মতে অবৈধ ওষুধের দোকানের সংখ্যা দুই লাখের কাছাকাছি। তবে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর বলছে এ সংখ্যা হবে সাড়ে ১৮ হাজারের মতো। বাংলাদেশ কেমিস্ট ও ড্রাগিস্ট সমিতির সহসভাপতি মো. আবদুল হাই এ প্রতিবেদককে বলেন, অবৈধ ওষুধের দোকানগুলো বিভিন্নভাবে গড়ে উঠেছে। অনেক বেকার যুবক ওষুধের দোকান খুলে ব্যবসা করছেন। কেউ কেউ যৌতুকের টাকা নিয়ে এ ব্যবসায় নামছেন। কিন্তু এর জন্য যথাযথ প্রক্রিয়া আছে। তা কেউ মানছেন না। ফলে একজন রোগীর জীবনহানির আশঙ্কা থাকছে। তিনি এও জানিয়েছেন, যিনি ওষুধের দোকান দেবেন তাকে ফার্মাসিস্ট হতে হবে। আর ফার্মাসিস্ট হতে হলে ন্যূনতম এসএসসি পাস হতে হবে। সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের দুই মাসের একটি কোর্স সম্পন্ন করে বাংলাদেশ ফার্মাসি কাউন্সিলের অধীনে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হয়। জানতে চাইলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক শফিকুল ইসলাম লস্কর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যদি লাইসেন্স ছাড়া অবৈধ ওষুধের দোকানের তালিকা বা তথ্য থাকে তাহলে সেটা তাত্ক্ষণিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া উচিত। এসব দোকান অবৈধভাবে চলতে দেওয়া যাবে না। আর আমরা সাধারণত ভেজাল এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে থাকি। তবে যন্ত্রপাতির অভাবে এখন শুধু মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ নিয়ে কাজ চলছে। যদি কোনো দোকানে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ থাকে অবশ্যই সেটা আলাদা বক্সে রেখে বাইরে লিখে দিতে হবে ‘ডেট এক্সপায়ার্ড’ বা মেয়াদ নেই। বাংলাদেশ ফার্মাসি কাউন্সিলের সচিব এ কে সাহা বলেন, এক লাখের বেশি লাইসেন্স ছাড়া ওষুধের দোকান থাকা অনেকটা আতঙ্কের বিষয়। কারণ যিনি ওষুধ দেবেন তার ওষুধ সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান, দক্ষতা ও প্রশিক্ষণ থাকতে হবে। মূলত আমাদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণের সনদ নিয়েই লাইসেন্স নিতে হয়। তা করা না হলে রোগ এক ধরনের ওষুধ দেওয়া হবে আরেক ধরনের কিংবা ওষুধের ডোজ দেওয়া আছে এক রকম, দিলেন তার চেয়ে বেশি। কেউ কেউ প্রেসক্রিপশন ছাড়াই ওষুধ দিয়ে দেয়, এতে মানুষের জীবনহানির ঝুঁকি থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু সারা মো. শামসুর রউফ বলেন, আমাদের এখানে কোনো সিস্টেমই নেই। যে যেভাবে পারে সে সেভাবে নিজের মতো করে চলছে। সব কিছু একটা সিস্টেমে নিলে সব ঠিক হয়ে যাবে। এ বিষয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন) মো. কিবরিয়া বলেন, আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে পদক্ষেপ নিচ্ছি। গত ১৮ এপ্রিল সবার সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলাম সেখানে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মডেল ফার্মেসির মাধ্যমে সবাইকে লাইসেন্সের আওতায় আনার চেষ্টা করছি। ড্রাগিস্ট সমিতি বলেছে এক লাখের বেশি অবৈধ ওষুধের দোকান আছে। কিন্তু আমাদের কাছে এ সংখ্যা সাড়ে ১৮ হাজার। তাদের কাছে তালিকা চেয়েছি, তার সেই তালিকা দিলে সে অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জানা গেছে, ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর সারা দেশে ৪৫০টি মডেল ফার্মেসি খোলার উদ্যোগ নিয়েছে। মডেল ফার্মেসিতে নকল, ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি করা যাবে না, ফিজিশিয়ান স্যাম্পল মজুদ ও বিক্রি করা যাবে না, ফার্মাসিস্ট দ্বারা ওষুধের সেবনবিধি বুঝিয়ে দেওয়া, ওষুধ বিক্রিতে ক্যাশ মেমো এবং বিরূপ প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানানোর কথা বলা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর