শিরোনাম
সোমবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

ব্যাংক বাঁচাতে পাঁচ পরামর্শ

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

ব্যাংক বাঁচাতে পাঁচ পরামর্শ

দেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলো ব্যবসায় টিকে থাকলেও রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলো মূলধন ঘাটতি নিয়ে ধুঁকছে। পরিস্থিতি এমন অবস্থায় গিয়েছে যে, রাষ্ট্র মালিকানাধীন একাধিক ব্যাংকের সঙ্গে ব্যবসায় অস্বীকৃতি জানাচ্ছে বিদেশি ব্যাংক। আমদানি-রপ্তানির ঋণপত্র পর্যন্ত গ্রহণ করছে না। আবার আস্থাহীনতার কারণে স্বাধীনভাবে বড় আকারের বিনিয়োগেও যেতে পারছে না এই ব্যাংকগুলো। একাধিক ব্যাংকে নিয়োগ করা হয়েছে পর্যবেক্ষক। এ অবস্থায় ঋণ কেলেঙ্কারি আর দুর্নীতি-অনিয়মে বিপর্যন্ত ব্যাংকিং খাতকে বাঁচাতে পাঁচটি পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকের বর্তমান পরিস্থিতির ওপর তৈরি করা অবস্থাপত্রে এ পরামর্শ দেওয়া হয়। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সম্প্রতি এটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

বাঁচানোর কৌশল : মূলধন ঘাটতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংক যে পাঁচ পারমর্শ দিয়েছে সেগুলো হচ্ছে : (১) নতুন শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধি (টিয়ার-১) করা যেতে পারে এবং সাব-অর্ডিনেট বন্ড ইস্যুর মাধ্যমেও  (টিয়ার-২) মূলধন ঘাটতি পূরণ করা যেতে পারে; (২) অর্জিত নিট মুনাফা বণ্টন না করে বোনাস শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে মূলধন বৃদ্ধি করতে পারে; (৩) বার্ষিক বাজেট থেকে অর্থ বরাদ্দের মাধ্যমে মূলধন ঘাটতি পূরণ করা যেতে পারে; (৪) শ্রেণিকৃত ঋণের বিপরীতে রক্ষিত প্রভিশন ঘাটতি কমানোর মাধ্যমে মূলধন ঘাটতি পূরণ করা যেতে পারে, এ ক্ষেত্রে দুটি উপায়ে প্রভিশন ঘাটতি হ্রাস করা সম্ভব, যেমন : শ্রেণিকৃত ঋণের মানের উন্নয়ন করার মাধ্যমে এবং সব ঋণের বিপরীতে যোগ্য জামানতের পরিমাণ বৃদ্ধি করে; এবং (৫) ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের পরিমাণ হ্রাসের মাধ্যমে ন্যূনতম রক্ষিত মূলধনের পরিমাণ হ্রাস করা যেতে পারে। তা ছাড়া, উচ্চমান সম্পন্ন রেটিং প্রতিষ্ঠানকে ঋণ প্রদান এবং ঋণগ্রহীতাদের রেটেড করার মাধ্যমেও ঝুঁকিভারিত সম্পদের পরিমাণ হ্রাস করা সম্ভব বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কেন এই পরামর্শ : বাংলাদেশ ব্যাংক তার অবস্থানপত্রে একাধিক সারণি দিয়ে বলেছে, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৬ সাল ভিত্তিতে সামগ্রিক ব্যাংকিং খাতের মূলধন ও ঝুঁকিভারিত সম্পদের অনুপাত ১০ দশমিক ৮ শতাংশ যা ব্যাসেল-৩ অনুযায়ী নির্ধারিত মাত্রার (১০ শতাংশ) চেয়ে মাত্রা শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকের মূলধন ও ঝুঁকিভারিত সম্পদের অনুপাত ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ যা, নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে ৪ দশমিক ১৪ শতাংশ কম। দেখা যাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত ৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে একমাত্র বিডিবিএল ছাড়া আর কোনো ব্যাংক ব্যাসেল-৩ নীতিমালা অনুযায়ী মূলধন সংরক্ষণ করতে পারেনি। গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সামগ্রিক ব্যাংকিং খাতের যে পরিস্থিতি তাতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর অবস্থা উন্নত নয়। এই ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতির কারণে সামগ্রিক ব্যাংকিং খাতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও বলছে, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৬ সাল পর্যন্ত সামগ্রিক ব্যাংকিং খাতের শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ ৬২ হাজার ১৭২ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৯ দশমিক ২৩ শতাংশ। একই ভিত্তিতে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকের মোট শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ ৩১ হাজার কোটি টাকা প্রায়, যা তাদের মোট ঋণের ২৫ দশমিক ০৫ শতাংশ। এ ছাড়া রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকের মোট শ্রেণিকৃত ঋণ সামগ্রিক ব্যাংকিং খাতের শ্রেণিকৃত ঋণের ৪৯ দশমিক ০৯ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেসব পরামর্শ দিয়েছে, তা ঠিকই আছে। তবে এসব করে ব্যাংকিং খাতের চেহারা বদলানো যাবে না। সরকার যদি ব্যাংকিং খাতে দক্ষ ও সৎ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে পারে তবেই এসব পরামর্শ কাজে লাগবে।

সর্বশেষ খবর