সোমবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা
মন্ত্রী-এমপি দ্বন্দ্ব

হরতাল-১৪৪ ধারার মধ্যে মত্স্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠান

ব্র্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

উপজেলা আওয়ামী লীগ আহূত হরতালসহ সব বাধা উপেক্ষা করে মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী অ্যাডভোকেট ছায়েদুল হক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার নবনির্মিত প্রাণিসম্পদ কার্যালয় ভবনের ফলক উন্মোচন করেছেন। গতকাল দুপুর ১টায় মন্ত্রী, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শফিকুল আলম এমএসসিসহ বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব বহর নিয়ে বিজয়নগরে পৌঁছান। তবে হরতাল আহ্বানকারীদের তৎপরতা তেমন চোখে পড়েনি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর থেকে বেশ কিছু আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মী বিজয়নগর চান্দুরা সড়কের পাশে অবস্থান নেন। মন্ত্রী আসার পর তাদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ হয়। গত তিন দিন ধরে মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রীর এ অনুষ্ঠানকে ঘিরে বিজয়নগরে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। বৃহস্পতিবার উপজেলা আওয়ামী লীগ মন্ত্রীর আগমন ঠেকাতে গতকাল সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করে। এ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিলে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে প্রশাসন শনিবার রাতে জেলার বিজয়নগর, আশুগঞ্জ, সরাইল ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলায় রবিবার  ভোর ৬টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করে। দুপুরে র‌্যাব-পুলিশ-বিজিবির জওয়ানদের গাড়িবহর বিজয়নগরে পৌঁছে। চান্দুরা হয়ে বিজয়নগর যাওয়ার পথে বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। এতে ইটের আঘাতে নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইমতিয়াজ আহম্মেদের মাথা ফেটে যায়। তাকে জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। উদ্বোধনী সভা শেষে মন্ত্রী নবনির্মিত ভবনে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তবে মন্ত্রী প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্রে অবস্থানকালে কয়েকশ গজ দূরে জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদিকা আলম তাঁরা দুলি, জেলা যুব মহিলা লীগের যুগ্ম সম্পাদিকা মুক্তি খান, বিজয়নগর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ফয়জুন্নাহার টুনির নেতৃত্বে মহিলা নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ করেন। এ সময় তারা কালো পতাকা প্রদর্শন করেন। তবে মন্ত্রী চলে আসার পর প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকায় ৩টি ককটেল  বোমা বিস্ফোরিত হয়। এতে কেউ হতাহত হয়নি। তবে মন্ত্রীর চান্দুরায় পূর্বঘোষিত সুধীসমাবেশ বাতিল করা হয়। এদিকে জেলা প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে দুই প্লাটুন বিজিবি, ৫ সেকশন র‌্যাব, এপিবিএন সদস্যসহ দেড় শতাধিক অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে। শুক্রবার মন্ত্রীর নামফলক ভাঙচুর ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনা ঘটে। শনিবার রাতে এ ঘটনায় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. লুত্ফুর রহমান বাদী হয়ে ১২০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে মামলাটি করেন। এদিকে পুলিশ কর্মকর্তা আহত হওয়ার ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জেলার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান পিপিএম জানিয়েছেন। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, পুলিশের ওপর আক্রমণের ঘটনায় ঘটনাস্থলে অবস্থানকারীদের ভিডিও ফুটেজ দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেন, আমরা অপেক্ষায় ছিলাম তিনি ভবনটি উদ্বোধন করতে আসবেন। কিন্তু তিনি শুধু আমাকে নয়, জেলা, উপজেলা আওয়ামী লীগ এমনকি উপজেলা পরিষদকে না জানিয়েই এখানে এসেছেন। যে কারণে কোনো নেতা-কর্মী তার সঙ্গে ছিলেন না। তবে মত্স্য মন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসীরা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। কিন্তু প্রশাসনের কারণে তারা পারেনি। সরকারি কার্যালয় কারা ভেঙেছে তা খোঁজে বের করা হবে। তিনি জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সম্পাদকের কঠোর সমালোচনা করেন।

যে কারণে বিরোধ : বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রীর সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হয় জেলা আওয়ামী লীগের একাংশ নেতাদের। এ নিয়ে মন্ত্রীকে দল থেকে বহিষ্কারের সুপারিশও করা হয়। এরপর নাসিরনগরে পবিত্র কাবা শরিফকে বিকৃতি করে ছবি পোস্ট করা হয়। এ ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে ও ১৫টি মন্দির ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। গত ফেব্রুয়ারি মাসের ২৬ তারিখ মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও তার গ্রুপকে বাদ দিয়েই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। গত জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শফিকুল আলম এমএসসির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হক প্রধান অতিথি ছিলেন। পরবর্তীতে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামী লীগের সমাবেশ থেকে মন্ত্রীর অনুসারী জেলা আওয়ামী লীগের একাংশ নেতা-কর্মীদের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। এরপর বিজয়নগর উপজেলায় মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় অধীন্যস্ত নবনির্মিত কার্যালয় ভবন উদ্বোধনের কর্মসূচিতে স্থানীয় এমপি উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীকে না রাখায় নতুন করে মন্ত্রী ও জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভেদ দেখা দেয়।

সর্বশেষ খবর