বৃহস্পতিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা
র‌্যাবের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

জনগণ যেন নির্যাতনের শিকার না হয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

জনগণ যেন নির্যাতনের শিকার না হয়

দেশের সাধারণ নাগরিক যেন অহেতুক নির্যাতনের শিকার না হয় সে জন্য সজাগ থাকতে র‌্যাব সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি তাদের উদ্দেশে বলেন, জনগণের পয়সায় আমাদের-আপনাদের বেতন-ভাতা হয়। আমরা সবাই জনগণের সেবক। সেই জনগণ যেন কোনোভাবেই নিগৃহীত না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

গতকাল সকালে রাজধানীর কুর্মিটোলায় র‌্যাব সদর দফতরে র‌্যাবের ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত দরবারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী র‌্যাব সদর দফতরে এসে পৌঁছালে তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। অপরাধ ও জঙ্গি দমনে ২০০৪ সালে বাংলাদেশ পুলিশের র‌্যাব ইউনিট গঠন করা হয়। পুলিশ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, বিজিবি এবং আনসার সদস্যদের নিয়ে এই বাহিনী গঠিত হয়। র‌্যাব সদস্যদের শৃঙ্খলা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিটি সদস্যকে দেশপ্রেম, সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা, দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের মনোভাব নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে। আপনারা একটি শৃঙ্খলা-বাহিনীর সদস্য। আর নৈতিক স্খলন যে কোনো বাহিনীর মনোবল দুর্বল করে দেয়। র‌্যাব সদস্যদের একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীর সদস্য হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ পালন করা একটি বাহিনীর সদস্যদের জন্য অবশ্য পালনীয় কর্তব্য। তিনি বলেন, যারা জঙ্গিবাদ ও চরমপন্থি জীবন থেকে স্বাভাবিক জীবনে আসতে চায়, তাদের জীবন-জীবিকার সুযোগ করে দিতে হবে। জঙ্গিদের আত্মসমর্পণ করার পর তাদের ছেড়ে দিলে হবে না। তাদের প্রতিষ্ঠিত করে দিতে হবে। ইতিমধ্যে যেসব জঙ্গি আত্মসমর্পণ করেছে তাদের তালিকা করা হয়েছে। তাদের অর্থনৈতিকভাবে সহায়তা করা হবে। যে ধরনের কাজ তারা করতে চায় সেটা করতে সহায়তা করা হবে, যাতে তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে।

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গি মোকাবিলায় এক হতে না পারলে আমরা যতই অর্জন করি না কেন, সবই বিফলে যাবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ ব্যাপারে সমাজে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কথা পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, কেবল বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জঙ্গিবাদ বিরাট সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। তবে আমরা কোনো ধরনের জঙ্গি-সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বাংলাদেশে বরদাস্ত করব না। ‘ইসলাম সন্ত্রাসে বিশ্বাস করে না’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, পবিত্র ইসলামের নাম নিয়ে মানুষ খুন করা হয়। ইসলাম কখনো এসব বলেনি। মানুষ হত্যা করলেই জান্নাতে চলে যাবে এটা কোথায় আছে? বরং নিরীহ মানুষ খুন করলে তারা জান্নাতে নয়, জাহান্নামে যায়।  আমাদের নবীও (সা.) সেই শিক্ষা দিয়েছেন। পবিত্র কোরআন শরিফেও তা উল্লেখ আছে।

শেখ হাসিনা বলেন, জঙ্গিবাদ ঠেকাতে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা বাহিনী, র‌্যাব, কোস্টগার্ড ও সশস্ত্র বাহিনীসহ প্রত্যেকে যার যতটুকু সুযোগ হচ্ছে কাজ করছে। এ কাজ করতে গিয়ে তাদের জীবনও দিতে হচ্ছে। সুন্দরবনের জলদস্যুদের আত্মসমর্পণের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, র‌্যাবের ভূমিকায় সুন্দরবনের জলদস্যুরা আত্মসমর্পণ করেছে। ওই জনপথ এখন জনগণের জন্য নিরাপদ। বিএনপি-জামায়াতের নাম উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, কেবল জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের কারণে সমস্যা হয় তা নয়। রাজনৈতিক গোষ্ঠীর কারণেও সমস্যা হয়। এমন অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে। ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে আমরা সেটা দেখেছি। ওই সময় যে অগ্নিসংযোগ, মানুষ পুড়িয়ে মারা, ভাঙচুর হয়েছে- সেগুলো রাজনীতি নয়। সেগুলো ছিল সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদী কাজ। তবে র‌্যাবসহ সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় আমরা এটা মোকাবিলা করতে পেরেছি। উৎপাত থেকে দেশের মানুষকে বাঁচাতে পেরেছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা খাতে বরাদ্দ সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা মনে করি, এই যে অর্থ আমরা বরাদ্দ করছি, এটা আমাদের ব্যয় নয়। বরং জনগণের জানমাল নিরাপত্তা এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য এটাও এক ধরনের বিনিয়োগ। সরকারি কর্মচারীদের জন্য ১২৩ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী  বলেন, একসঙ্গে এত বেশি বেতন বৃদ্ধি পৃথিবীর আর কোনো সরকার তা করতে পারেনি। আমরা করতে পেরেছি। কারণ আমাদের সেই সক্ষমতা আছে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় র‌্যাবকে আরও শক্তিশালী ও তাদের কার্যক্রম জোরালো করতে তাদের জন্য বিভিন্ন অবকাঠামো ও কৌশলগত সুবিধা বাড়ানোর কথা তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বক্তৃতা করেন। এ সময় সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

রবিবার হাওর পরিদর্শনে যাবেন প্রধানমন্ত্রী : বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরেজমিন বন্যা পরিস্থিতি দেখার জন্য ৩০ এপ্রিল রবিবার সুনামগঞ্জের বন্যাকবলিত হাওর এলাকা পরিদর্শন করবেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম গতকাল এ তথ্য দেন।

সর্বশেষ খবর