ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ সোনিয়া। পরিবার তার জন্য পাত্র দেখছিল । কিন্তু সেই পাত্র সোনিয়ার পছন্দ হয় না। ফেসবুকে বিয়েটা ডট কম-এর বিজ্ঞাপন দেখে এই ম্যাট্রিমনিয়ল সাইটে নিজের পাত্র নিজেই খোঁজ করেন তিনি। সেখানে অনেক পাত্র দেখা শেষে অবশেষে জাহিদকে খুঁজে পান। সরকারি কর্মকর্তা জাহিদও তার মনের মতো জীবনসঙ্গী খুঁজে পেতে বিয়ে.কম-এ অ্যাকাউন্ট খোলেন। সোনিয়া-জাহিদের সরাসরি দেখা হয়। পরিবারের সম্মতিতে দুজনে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বর্তমানে পছন্দের পাত্র-পাত্রী খুঁজে বের করার জনপ্রিয় ও কার্যকর এক মাধ্যম ম্যাট্রিমনিয়ল সাইট। সহজ কথায় এটি হচ্ছে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশি পাত্র-পাত্রী খুঁজে বের করার ডাটাবেজ অ্যাপ্লিকেশন। সোনিয়া-জাহিদ দম্পতির মতো অনেকেই এখন বিয়ের পাত্র-পাত্রী নির্বাচনে অনলাইনভিত্তিক এই সেবার সাহায্য নিচ্ছেন। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন বিবাহযোগ্য পাত্র-পাত্রী ও অভিভাবকদের সময় বাঁচছে অন্যদিকে বর-কনের একে অপরকে পছন্দ হওয়া এবং পাত্র-পাত্রীর জীবনবৃত্তান্তসহ সরাসরি একে অপারের সঙ্গে সাক্ষাতেরও সুযোগ ঘটছে। উন্নত দেশ এমনকি প্রতিবেশী দেশ ভারতেও পাত্র-পাত্রীর খুঁজে বের করার জন্য অনলাইনভিত্তিক এই সেবা এখন খুব জনপ্রিয়। আর এই ধারাবাহিকতায় কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশেও ম্যাট্রিমনিয়ল সাইটগুলোর কর্মপরিধি বাড়ছে। কোনো কোনো ক্ষেতে এ ব্যাপারে বাবা-মা উৎসাহ দিচ্ছেন সন্তানদের।
বাংলাদেশে বিয়েটা ডট কম, বিবাহবিডি, বরবধূ ডট কম, বাংলা ম্যাট্রিমনি ডট কম, সেনসিবল ম্যাচ ডট কম, ম্যারি বিডি, বিডি ম্যারেজ ডট কমসহ আরও বেশ কিছু ম্যাট্রিমনিয়ল সাইট থেকে গ্রাহকরা এখন সেবা নিচ্ছেন। ম্যাট্রিমনিয়ল সাইটগুলোতে সাধারণত হাজার হাজার পাত্র-পাত্রীর ভেরিফাইড প্রোফাইল থাকে। এ জন্য একজন পাত্র বা পাত্রীর জন্য তার পছন্দ মতো পাত্রী বা পাত্র খুঁজে পাওয়ার সুযোগ এখানে বেশি। এই সাইটগুলোতে একজন ব্যবহারকারী সাধারণত বিনামূল্যে নিজের অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। এই অ্যাকাউন্টে ব্যবহারকারী তার ছবিসহ নাম, বয়স, উচ্চতা, বৈবাহিক অবস্থা, ধর্ম, শিক্ষাগত যোগ্যতা, নিজ জেলা, পেশা, আগ্রহ ও পারিবারিক সদস্যদের বর্ণনা তুলে ধরেন।
কিছু সাইটে পাত্র-পাত্রী সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য ব্যবহারকারীকে নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে এক মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত অন্যের তথ্য জানার সুযোগ দেওয়া হয়। আবার কিছু সাইট বিনামূল্যেই অন্যদের তথ্য দেখার সুযোগ করে দেয়। আবার সাইটে পছন্দ হলে ম্যাট্রিমনিয়ল কোম্পানিগুলো পাত্র-পাত্রীর সরাসরি সাক্ষাতেরও ব্যবস্থা করে দেয়। এ জন্য সামান্য সার্ভিস চার্জ রাখা হয়। দেশের বাইরে অবস্থিত প্রবাসী পাত্র-পাত্রীদের সম্পর্কেও এসব সাইটে খোঁজ পাওয়া যায়। কয়েকজন ব্যবহারকারী এই প্রতিবেদককে জানান, আগের নিয়ম অনুযায়ী বিয়ে করানোর জন্য পরিচিত ঘটক বা আত্মীয়ের মাধ্যমে পাত্র-পাত্রীর ছবি দেখতে হতো এবং তাদের জীবনবৃত্তান্ত সম্পর্কে জানতে হতো। কিন্তু ম্যাট্রিমনিয়ল সাইটগুলো এই প্রক্রিয়া সহজ করে দিয়েছে। যে কেউ চাইলেই এখন ঘরে ও অফিসে বসে পাত্র-পাত্রীর ছবিসহ বিস্তারিত জানতে পারছেন। একসময় মুরব্বিরা পরিবারে বিবাহযোগ্য পাত্র-পাত্রীর জন্য জীবনসঙ্গী নির্বাচনের দায়িত্ব নিলেও সময়ের প্রয়োজনে পাত্র-পাত্রীরা এখন নিজেরাই তাদের পছন্দ অনুযায়ী ম্যাট্রিমনিয়ল সাইট থেকে জীবনসঙ্গী নির্বাচন করছেন।দেশে ২০১২ সালের পর থেকে ম্যাট্রিমনিয়ল সাইটের জনপ্রিয়তা বাড়তে শুরু করে। প্রথমদিকে এই সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে সার্ভিস চার্জ সংগ্রহে সমস্যা ছিল। দেশের বাইরে থেকে এই চার্জ নেওয়া হয় পেপল-এর সাহায্যে। তবে বর্তমানে বিকাশ, অনলাইন ব্যাংকিং ভিত্তিক বিভিন্ন সুবিধার কারণে এই সেবা আরও বিস্তৃত হচ্ছে। বর্তমানে দেশে ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়ায় অনেক ব্যবহারকারীও ম্যাট্রিমনিয়ল সাইটগুলোতে অ্যাকাউন্ট খুলতে আগ্রহী হচ্ছেন। বিয়েটা ডট কমের বিজনেস এক্সিকিউটিভ অরুণা মোস্তফা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পাত্র-পাত্রীরা নিজেরাই নিজেদের পছন্দের সঙ্গী নির্বাচনের সুযোগ পাওয়ায় ক্রমেই এই সাইটগুলো জনপ্রিয় হচ্ছে। তবে আমরা নতুন কোনো অ্যাকাউন্ট ফেক কিনা তা যাচাই-এর জন্য ব্যবহারকারীর মোবাইল নম্বর ও তার দেওয়া তথ্যগুলো তাকে ফোন দিয়ে পুনরায় যাচাই করি। তার মতে, পাত্র-পাত্রীর সাক্ষাতের সময় অভিভাবকদের উপস্থিতি বিয়ের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে।