বৃহস্পতিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

চাঁপাইনবাবগঞ্জে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান গোলাগুলি

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মোবারকপুর ইউনিয়নের শিবনগর গ্রামে ঘিরে রাখা একটি বাড়িতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালাচ্ছে। গতকাল সন্ধ্যায় সোয়াত টিম এ অভিযান শুরু করে। পরে মুহুর্মুহু গুলির শব্দ শোনা যায়। রাতে অভিযান স্থগিত করা হয়েছে। আজ সকালে আবার শুরু হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।  কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, শিবনগরে ভোর রাত ৩টার দিকে সাইদুর রহমান জেন্টু হাজী নামে এক ব্যক্তির বাড়ি ঘেরাও করেন কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা। সকাল ৬টার দিকে ওই বাড়ি থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। এরপর বেলা ১১টা থেকে ওই এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ওই এলাকায় যানবাহন, ধারালো অস্ত্র, লাঠিসোঁটা নিয়ে চলাচল নিষিদ্ধ করে মাইকিং করা হয়। একই সঙ্গে ঘটনাস্থলের আশপাশের বাড়ির লোকজনকে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে বলা হয়। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘিরে রাখা বাড়ি থেকে মাঝে মাঝে গুলির শব্দ শোনা গেছে। জেলা পুলিশ সূত্রে গেছে, ওই বাড়িটিতে স্থানীয় মসলা ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদ ওরফে আবু, তার স্ত্রী ও এক সন্তান রয়েছে। দুপুর দেড়টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট, শিবগঞ্জ ও নাচোল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুটি অ্যাম্বুলেন্স ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে পুলিশের রাজশাহী বিভাগীয় ডিআইজি খুরশিদ আলম, জেলা পুলিশ সুপার এ টি এম মোজাহিদুল ইসলাম, শিবগঞ্জ থানার ওসি হাবিবুল ইসলামসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলের কাছে উপস্থিত হন। বিকাল পৌনে ৫টার দিকে সোয়াত টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে। এরপর সন্ধ্যা ৬টার দিকে জঙ্গি আবুর মা ফুলসানা বেগম ও চাচি চামেলী বেগমকে তার ছেলে আবুর বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এ সময় মা ও চাচি তাদের ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে বললে তারা কোনো সাড়া দেননি। পরে মা-চাচিকে তাদের বাড়িতে ফেরত পাঠানো হয়। পরে সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে সোয়াত অভিযান শুরু করে। এ সময় মুহুর্মুহু গলির শব্দ পাওয়া যায়। এর মধ্যে একটি বোমার শব্দ পাওয়া গেছে। গণমাধ্যমকর্মীদের ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৫০০ গজ দূরে রাখা হয়। এর আগে এলাকার মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়। এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত (রাত ৯টা) গুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল। গোটা এলাকার বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা হয়। তবে সোয়াত নিজস্ব বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় অভিযান চালাচ্ছিল।

কে এই আবু : শিবগঞ্জ উপজেলার মোবারকপুর ইউনিয়নের শিবনগর গ্রামে জঙ্গি আস্তানায় থাকা আবুল কালাম আজাদ ওরফে আবুর (৩২) সঙ্গে তার পরিবারের যোগাযোগ ছিল না বলে জানিয়েছেন তার মা ফুলসানা বেগম (৫০)। ঘিরে রাখা বাড়ি থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে আবুর বাবা আফসার আলীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, আবুর মা অসুস্থ হয়ে বিছানায় শুয়ে আছেন। তিনি জানান, ৮ বছর আগে একই উপজেলার আব্বাস বাজার এলাকার রুহুল আমিনের মেয়ে সুমাইয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় আবুর। বিয়ের কয়েক মাস পর থেকেই তার ছেলে শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন। আবুর দুই মেয়ে। বাবা-মায়ের সঙ্গে আবুর খুব বেশি যোগাযোগ ছিল না, তবে মাঝেমধ্যে রাস্তায় দেখা-সাক্ষাৎ হতো।

এদিকে আবুর বাবার বাড়ির পাশের কয়েকজন প্রতিবেশী জানান, আবু শ্বশুরের বাড়ি ও সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে এক দিন আগে ঈদ উদ্যাপন করতেন। এ নিয়ে তার বাবার সঙ্গে আবুর মতপার্থক্য ছিল। শ্বশুরবাড়ি গিয়েই আবু এসব আলাদা রীতিনীতি গ্রহণ করেছেন বলে তার চাচি চামেলী বেগম জানান। বাবা এ নিয়ে তাকে অনেক বুঝিয়েছেন, কিন্তু আবু এসব ছাড়েননি। আবু পেশায় একজন মসলা বিক্রেতা। তিনি হাট-বাজারে পাটি বিছিয়ে মসলা বিক্রি করতেন। তিনি বাড়ির কাছের চাতরা ফাজিল মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। স্থানীয়রা জানান, সাধারণত মসজিদে জামাত শেষ হওয়ার পর আবুসহ কয়েকজন মিলে নামাজ পড়তেন। আবু বিয়ের কিছু দিন পর থেকে শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন, সর্বশেষ বাবার বাড়িতে কিছু দিন ছিলেন। এরপর বাবার সঙ্গে ঝগড়া হওয়ায় তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। পরে আবু তার বাড়ির আধা কিলোমিটার দূরে জেন্টু বিশ্বাসের একটি অব্যবহূত বাড়ি ভাড়া নেন।

 বাড়ির মালিকের ছেলে আনারুল ইসলাম বাবুল জানান, জেন্টু বিশ্বাস তাকে মূলত বাড়িটি দেখাশোনার জন্য বিদ্যুৎ বিলসহ সামান্য টাকায় ভাড়া দেন। গত ফেব্রুয়ারিতে বাড়িটি ভাড়া নিয়েছিলেন আবু।

সর্বশেষ খবর