বুধবার, ৩ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা
গাজীপুর

কেন আত্মহত্যা করতে হলো বাবা-মেয়েকে

খতিয়ে দেখা হচ্ছে পুলিশের গাফিলতি

শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ্, শ্রীপুর (গাজীপুর) থেকে ফিরে

স্থানীয় প্রশাসনের কাছে বারবার বিচার চেয়ে ব্যর্থ হওয়া হালিমা বেগমের পরিবার নিরাপত্তা ঠিকই পেয়েছে, তবে স্বামী আর সন্তানের আত্মাহুতির পর। শ্রীপুরের কর্ণপুর গ্রামের মধ্যবয়সী হযরত আলী ও তার ৮ বছরের কন্যা আয়েশা আক্তারের আত্মহত্যা ভীষণভাবে নাড়িয়ে দিয়েছে দেশবাসীকে।

হালিমা বেগমের খোঁজ নিতে এসে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, ইউপি চেয়ারম্যানসহ সবাই দুষছেন স্থানীয় প্রশাসনকে। তাদের সান্ত্বনা শান্ত করতে পারছে না সর্বহারা হালিমাকে। বার বার এদিক ওদিক খুঁজে বেড়াচ্ছেন একমাত্র কন্যা আয়েশাকে। ফিরবে না জেনেও কেঁদে কেঁদে ডাকছেন, ‘মা মা মাগো তুমি কই গেলা।’ তিনি যদিও তাকে জন্ম দেননি কিন্তু কোনো অংশেই জন্মদাত্রীর চেয়ে কম ছিলেন না। প্রশাসনের অবহেলায়ই বাবা-মেয়ে আত্মহত্যা করেছে—এমন অভিযোগ করেন স্বামী-সন্তানহারা হালিমা বেগম। স্থানীয় চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের অন্যায় অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে শ্রীপুর থানা পুলিশে বিচার চান হালিমা বেগম। কিন্তু বিচার তো পাননি, উল্টো নানা হয়রানির শিকার হয়েছেন। হালিমা বেগম বলেন, বাবারে পুলিশের কাছে গেছি, একটা লিখিত অভিযোগও দিয়েছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। ওল্ডা (উল্টো) পুলিশ মেম্বার মিলে আমাদের শাসিয়েছে আপস করতে। গতকাল শ্রীপুরের কর্ণপুরে গিয়ে দেখা যায়, স্বামী-সন্তানহারা হালিমা বেগম এদিক ওদিক ছুটে খুঁজছেন তার একমাত্র পালিত কন্যা আয়েশাকে। বারবার ডাকছেন। সন্তানের পাশাপাশি ক্ষোভে দুঃখে ঘৃণায় আত্মঘাতী স্বামীকেও খুঁজছেন হালিমা বেগম। কবরের ভেজা মাটির মতোই আজ তার চোখও ভেজা। তার এই কান্না যেন থামছেই না। যাকে সামনে পাচ্ছেন তাকে জড়িয়ে ধরেই কান্নায় ভেঙে পড়ছেন তিনি। কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হালিমা বেগম। ঘটনা পরিদর্শনে গিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, মর্যাদাহানি, লজ্জা, ক্ষোভ সর্বোপরি বিচারহীনতার কারণেই হযরত আলী ও তার মেয়ে আয়েশা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে। তিনি বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘন যারা করেছেন তাদের সঙ্গে পুলিশও এ দায়বদ্ধতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না। গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি আসামিদের গ্রেফতার করতে। এদিকে হালিমা বেগমের সব দায়িত্ব নিয়েছেন গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ। গতকাল তিনি হালিমার বাড়িতে গিয়ে বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তারা যত প্রভাবশালী হোক না কেন এদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। এদিকে এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃত ইউপি সদস্য আবুল হোসেনকে দুই দিনের রিমান্ড দিয়েছে আদালত। ঢাকার সিনিয়র চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক তাওহীদ আল আজাদ এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ঘটনায় পুলিশের দায়িত্বে কোনো অবহেলা আছে কি না তদন্ত করতে গাজীপুর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। উল্লেখ্য, শিশু মেয়ের ওপর নানা নির্যাতনের বিচার না পেয়ে মেয়েকে নিয়ে শ্রীপুরের কর্ণপুর গ্রামের হযরত আলী (৫৫) ও তার শিশু কন্যা আয়েশা আক্তার (৮) গত শনিবার সকালে আন্তনগর তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে।

সর্বশেষ খবর