বুধবার, ৩ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

সাংবাদিক হত্যার দ্রুত বিচার করতে হবে

জিন্নাতুন নূর

সাংবাদিক হত্যার দ্রুত বিচার করতে হবে

গোলাম রহমান

সাংবাদিক হত্যা এবং নির্যাতনের ঘটনায় আইনের শাসন কার্যকর করা প্রয়োজন। প্রতিটি সাংবাদিক হত্যার বিচার হতে হবে। যদি এই ঘটনাগুলোর বিচার না হয় তবে অপরাধীরা অপরাধ করার জন্য স্বাধীনতা পেয়ে যাবে। একই সঙ্গে সাংবাদিকদের তথ্য দেওয়ার প্রক্রিয়াও বাধাগ্রস্ত হবে। এ জন্য সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় আইনি প্রক্রিয়াগুলো আরও গতিশীল করতে হবে। দুঃখজনক যে, আমরা এখনো সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার পাইনি। এখন পর্যন্ত মানিক সাহাসহ হাতে গোনা কয়েকজন সাংবাদিক হত্যার বিচার হয়েছে। কিন্তু অনেক বিচারই এখনো হয়নি। দ্রুত বাকি সাংবাদিক হত্যা মামলাগুলোর বিচার করতে হবে। প্রধান তথ্য কমিশনার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক মো. গোলাম রহমান গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, সাংবাদিকরা দায়িত্বশীল আচরণ করলে গণমাধ্যমও শক্তিশালী হবে। তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতার কথাও চিন্তা করতে হবে তাহলেই আমাদের গণমাধ্যম ঘুরে দাঁড়াবে। আমি মনে করি আমাদের সাংবাদিকদের আরও দায়িত্বশীল আচরণ করা উচিত। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য গণমাধ্যম অন্যতম একটি শক্তি। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে যদি সুদৃঢ় করতে হয় তবে গণমাধ্যমকে অনেক বেশি শক্তিশালী হতে হবে। কারণ বাংলাদেশের গণমাধ্যম খুব পুরনো নয় আবার খুব নতুনও নয়। এক-একটি দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা এক এক রকম। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম না। আমাদের দেশের অবস্থা অন্যদেশের সঙ্গে মিলবে না। সেদিক বিবেচনায় আমদের অবস্থা খুব একটা খারাপ না। আমাদের সাংবাদিকরা বিভিন্ন সময়ে ঐতিহাসিকভাবে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। আশা করছি বর্তমান প্রজন্মের সাংবাদিকরা আরও দায়িত্বশীল আচরণ করবেন। বস্তুনিষ্ঠতার বিবেচনা করবেন এবং সত্যের পথে থাকবেন।

প্রধান তথ্য কমিশনার বলেন, যদিও আমাদের দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা স্বীকৃত কিন্তু পেশাদারি মনোভাব নিয়ে সংবাদপত্রের দায়িত্ব পালন করতে গেলে নানারকম সীমাবদ্ধতার মুখোমুখি হতে হয়। এতে নানারকম ঝুঁকিও আছে। এই কারণে অনেক সময় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হয়। গণমাধ্যম প্রকাশনার ক্ষেত্রে আইন-কানুন সংক্রান্ত কিছু বিষয় থাকবেই কিন্তু দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আমাদের সাংবাদিকরা পেশিশক্তি ও অদৃশ্য শক্তি থেকে এক ধরনের চাপ অনুভব করছে। সেক্ষেত্রে তাদের দায়িত্ব পালনে সমস্যা হচ্ছে। আবার এখন যারা গণমাধ্যমের মালিক বা যাদের কাছে গণমাধ্যমের কর্তৃত্ব আছে বা যারা এই মাধ্যমে পুঁজি বিনিয়োগ করছেন, তাদের কথা বিবেচনায় এনে অনেক ক্ষেত্রে সংবাদপত্রের প্রকাশক ও সাংবাদিকদের অনেক হিসাব করে চলতে হচ্ছে। এ ছাড়া বিজ্ঞাপনসহ অন্যান্য সুবিধাদির কথাও বিবেচনায় রেখে তাদের কাজ করতে হয়। আমি মনে করি এসব কারণে অনেক সময় সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হয়। অধ্যাপক গোলাম রহমান বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার নাম করে কোনো গণমাধ্যম যদি অপপ্রচার চালায়, জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করে তবে তারা নিজেদের দায়বদ্ধতা এড়িয়ে যেতে পারবে না। তাদেরকেও তখন আইন ও বিচারের আওতায় পড়তে হবে। তবে রাজনৈতিক কারণে গণমাধ্যমের মত প্রকাশের স্বাধীনতা বন্ধ করে দেওয়া ঠিক হবে না। তবে শুধু সরকারি কারণে দেশের গণমাধ্যমের কোনো স্বাধীনতা নেই এমনটি মনে করার কারণ নেই। আমাদের দেশে সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের যে অধিকার, এটি ভোগ করার যে সুযোগ-সুবিধা এবং এ জন্য যে অবস্থা বিদ্যমান সেগুলো আমাদের বিবেচনা করতে হবে। অনেকক্ষেত্রে পেশাগত কারণে সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে সাংবাদিকতা করতে পারেন না। এক্ষেত্রে নানা ধরনের হুমকিও থাকে। আবার স্বাধীন সাংবাদিকতার চর্চায় বাইরের শক্তিও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। এখানে জঙ্গি ও রাজনৈতিক শক্তিরও ভূমিকা আছে। এ জন্য সাংবাদিকরা এদেশে চাইলেই সহজে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারেন না। এ ছাড়া মালিকপক্ষের জন্য অনেক গণমাধ্যম কর্মীর মধ্যে চাকরি হারানোর ভয় কাজ করে। নারী সাংবাদিকদেরও দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে অনেক সময় নির্যাতনের শিকার হতে হয়। আর এই সবকিছুই গণমাধ্যমকে স্বাধীন ভূমিকা পালন করার ক্ষেত্রে বাধা দেয়।

সর্বশেষ খবর