বৃহস্পতিবার, ৪ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা
বাবা-মেয়ের আত্মাহুতি

তদন্ত কমিটি, আরও একজন গ্রেফতার

গাজীপুর ও শ্রীপুর প্রতিনিধি

গাজীপুরের শ্রীপুরে বিচার না পেয়ে ট্রেনের নিচে পড়ে বাবা-মেয়ের আত্মহত্যার ঘটনায় শহীদ (৪০) নামে আরও একজনকে গ্রেফতার করেছে শ্রীপুর থানা পুলিশ। গতকাল গভীর রাতে তাকে গোসিঙ্গা ইউনিয়নের কর্ণপুর গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়।

শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কায়সার আহমেদ জানান, শহীদ কর্ণপুর গ্রামের মৃত নাজির উদ্দিনের ছেলে। তিনি ওই মামলার প্রধান আসামি ফারুকের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং বাবা-মেয়ে আত্মহত্যার ঘটনা মামলার ছয় নম্বর আসামি। সোর্সের মাধ্যমে খবর পেয়ে গোসিঙ্গা ইউনয়ন থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার হননি ফারুক : এ ঘটনায় যৌন নিপীড়নে অভিযুক্ত ফারুক হোসেনকে (২৮) গ্রেফতার করতে পুলিশের কোনো তত্পরতা দেখা যাচ্ছে না। এমনকি গত সোমবার থেকে গতকাল পর্যন্ত ফারুকের বাড়িতে কোনো অভিযানও পরিচালিত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। ফারুকের প্রতিবেশী জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী তাছলিমা আক্তার বলেন, ঘটনার পর শুধু রবিবার ফারুকের বাড়িতে পুলিশ আসতে দেখেছি। এরপর সোমবার থেকে গতকাল পর্যন্ত সাংবাদিক ছাড়া কোনো পুলিশকে আসতে দেখিনি। একই এলাকার কৃষক ফাইজুদ্দিন বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে মাইক্রোবাস নিয়ে সাদা পোশাকে কয়েকজন লোক এসেছিলেন। তাদের কাছে কোনো অস্ত্র ছিল না। তারা ফারুক ও তার পরিবারের খোঁজখবর নিয়েছে। তবে পুলিশের কোনো লোক ফারুককে খুঁজতে এসেছিল কিনা জানি না।

তদন্ত কমিটি : গতকাল দুপুর ২টার দিকে হালিমা বেগমের বক্তব্য গ্রহণ করেন মহাপুলিশ পরিদর্শকের (আইজিপি) গঠিত চার সদস্যের তদন্ত কমিটির সদস্যরা। তারা দুই দফায় হালিমা বেগমের সঙ্গে প্রায় আড়াই ঘণ্টা কথা বলেন। কমিটির প্রধান অতিরিক্ত উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক (ঢাকা রেঞ্জ) মোহাম্মদ আলী বলেন, এ ঘটনায় আইজিপি চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। তদন্তের দায়িত্ব পালনের জন্য তারা দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন, থানা পুলিশ ও হালিমা বেগমের সঙ্গে কথা বলেছেন। সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমাদানের নির্দেশনা রয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন পুলিশ হেড কোয়ার্টার্সের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাদিরা বেগম, ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আকতারুজ্জামান ও গাজীপুর জেলা বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সোলাইমান।

নিরাপত্তা : শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান জানান, হালিমা বেগমের নিরাপত্তার জন্য ২৪ ঘণ্টায় দুই শিফটে ৬ জন করে পুলিশ সদস্য, তিনজন করে গ্রাম পুলিশের সদস্য দায়িত্ব পালন করছে।

সাহায্য-সহযোগিতা : গতকাল বিকালে হালিমা বেগমের জন্য একটি মোবাইল কিনে নিয়ে আসেন শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেহেনা আক্তার। এ সময় সমাজসেবা অধিদফতরের উপ-পরিচালক শংকর শরণ সাহা তার তিন মাসের অগ্রিম (এপিল-জুন) বিধবা ভাতা বাবদ এক হাজার ৫০০ টাকা হস্তান্তর করেন। এর আগে ইউএনও তাকে নগদ পাঁচ হাজার টাকা, শাড়ি ও প্রয়োজনীয় কাপড়-চোপড় দেন। গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ মঙ্গলবার হালিমার ভরণপোষণের দায়িত্ব নেওয়ার আশ্বাস দেন। উল্লেখ্য, গাজীপুরে শিশু মেয়েকে নির্যাতনের বিচার না পেয়ে মেয়েকে নিয়ে শ্রীপুর উপজেলার কর্ণপুর সিটপাড়া গ্রামের হালিমার স্বামী হযরত আলী (৫৫) ও তার শিশু কন্যা (পালিত) আয়েশা (৭) গত শনিবার সকালে শ্রীপুর রেলস্টেশনের আউটার সিগন্যালের পাশে আন্তঃনগর তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন।

সর্বশেষ খবর