সোমবার, ৮ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা
নির্বাচনী রাজনীতি

এবারই ইভিএম চায় আওয়ামী লীগ

রফিকুল ইসলাম রনি

এবারই ইভিএম চায় আওয়ামী লীগ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের জন্য ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রপতিকে জানিয়েছে দলটি। জানানো হয়েছে নির্বাচন কমিশনকেও। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বলছেন, ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট হলে বিএনপি নির্বাচন নিয়ে যেসব অভিযোগ করে তা আর করতে পারবে না। নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারবেন না বিএনপির নেতারা। এতে ভোটে স্বচ্ছতা আসবে, খরচও কমবে। তারা আরও বলছেন, একই সঙ্গে এটি তাদের নির্বাচনের একটি কৌশল। বিএনপি যদি এতে নির্বাচন বয়কট করে তাতে সরকারের কিছু করার নেই। জানা যায়, গতকাল ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অফিসে এক অনির্ধারিত আলোচনায় আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে মত দেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। এর আগে ১১ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে বৈঠকেও নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের ব্যাপারে দলের আগ্রহের কথা জানান আওয়ামী লীগ নেতারা।  দল ও সরকারের নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন, ইভিএমে ভোট হলে নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনে কোটি কোটি ব্যালট পেপার ছাপাতে হবে না। এর ফলে কাগজ খরচ, ছাপা খরচ, পরিবহন খরচ, ভোট গণনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লোকবলের খরচ সাশ্রয় হবে। ভোট শেষ হলে দ্রুততর সময়ে ফল প্রকাশ করা সম্ভব হবে। তাড়াতাড়ি ফল প্রকাশের কারণে নির্বাচনী সহিংসতাও অনেক কমে আসবে। ভোটের ফল হবে শতভাগ নির্ভুল। ইভিএম পদ্ধতিতে ‘বাতিল ভোট’ দেওয়ার কোনোই সুযোগ থাকে না।  এ ছাড়া ইভিএমের নিরাপত্তায় ‘স্মার্ট’ কার্ড ব্যবহার হওয়ায় প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও সব প্রার্থীর এজেন্ট একজোট না হলে কেন্দ্র দখল করেও বিশেষ কোনো প্রার্থীর পক্ষে ভোট দেওয়া সম্ভব নয়। ভোটগ্রহণ কাজে নিয়োজিত সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার মেশিন থেকে ‘স্মার্ট’ কার্ড সরিয়ে নিলেই ইভিএম অকার্যকর হয়ে যায়। তবে ‘কাস্টিং’ ভোটের তথ্য মুছে যায় না। ‘কাস্টিং’ ভোটের তথ্য সংরক্ষিত থাকে চারটি মেমোরিতে। এ কারণে কেন্দ্র দখল হলে, মেশিন ছিনতাই হলে বা মেশিন ভাঙচুর হলেও ফল পাওয়া সম্ভব। কোনো কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার, সব প্রার্থীর এজেন্ট একজোট হয়ে কেন্দ্র দখল করে বিশেষ প্রার্থীর পক্ষে ভোট দিতে চাইলেও ইভিএম মিনিটে ৫টির বেশি ভোট গ্রহণ করে না। ফলে নির্বাচন নিয়ে কেউ অভিযোগ তুলতে পারবে না। যে কারণে আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করতে চায় ক্ষমতাসীন দল।  গতকাল সকালে ধানমন্ডিতে ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে সংসদ সদস্যদের করণীয়’ শীর্ষক দলের এমপিদের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশ নেয় সজীব ওয়াজেদ জয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে দলের নির্বাচনী অফিসে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে এক অনির্ধারিত আলোচনায় বসেন প্রধানমন্ত্রীর পুত্র জয়। এ সময় তিনি একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন।  তিনি বলেন, ‘বিশ্বের সঙ্গে আমাদেরও তাল মিলিয়ে চলতে হবে। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম ব্যবহার করতে হবে। এ জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। সেভাবেই দলের নেতা-কর্মী ও নির্বাচনী এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এ ব্যবস্থা চালু হলে নির্বাচন নিয়ে অভিযোগ বন্ধ হবে। কেউ ব্যালট ছিনতাই ও কারচুপি করতে পারবে না। সার্বিকভাবে নির্বাচন পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা ও স্পষ্টতা আসবে।’ আওয়ামী লীগ নেতাদের ইভিএম পদ্ধতির পক্ষে জনমত গড়ে তোলার আহ্বানও জানান তিনি।  অনির্ধারিত বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ২০ মে অনুষ্ঠেয় তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত থাকার জন্য জয়কে আমন্ত্রণ জানান। এ সময় জয় বলেন, ‘রংপুর থেকে যেহেতু আমি দলের সদস্য হয়েছি তাই আমি বৈঠকে উপস্থিত থাকব। আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে দলের জন্য করণীয় সবই করব।’  দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম ব্যবহারে দলের পক্ষে যে যে প্রস্তুতি গ্রহণ করা দরকার তা এখন থেকেই শুরু করতে যাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর