শিরোনাম
সোমবার, ৮ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা
নির্বাচনী রাজনীতি

গভীর ষড়যন্ত্র মনে করছে বিএনপি

মাহমুদ আজহার

গভীর ষড়যন্ত্র মনে করছে বিএনপি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) করার প্রস্তাবের পেছনে ‘দুরভিসন্ধি’ দেখছে বিএনপি। দলের নেতারা মনে করছেন, বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখার ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ইভিএম নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে। স্বয়ংক্রিয় এই ভোটে জালিয়াতির শঙ্কার পাশাপাশি এর কারিগরি বিষয়ে নিরক্ষর জনগোষ্ঠীর একটি অংশ সমস্যায় পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা দলটির। ইভিএম চালু করলে এর বিরুদ্ধে আন্দোলনে যাওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে বিএনপির।

জানা যায়, বাংলাদেশে ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রথম ইভিএম ব্যবহার হয়। এরপর নারায়ণগঞ্জের কয়েকটি ওয়ার্ড, নরসিংদী পৌরসভা ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের পুরো নির্বাচন ইভিএমে হয়েছিল। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিদায়ের আগে সংসদ নির্বাচনের জন্য ইভিএমের প্রস্তুতিও রেখে গিয়েছিল ড. এ টি এম শামসুল হুদার কমিশন। কাজী রকিব কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর শুধু রাজশাহী ও রংপুর সিটিতে ছোট পরিসরে ইভিএম ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এবং মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির সহায়তায় এ প্রযুক্তি চালু হলেও পাঁচ বছরের মাথায় কারিগরি ত্রুটি নিয়ে ইসি-বুয়েটের দ্বন্দ্বের পাশাপাশি বিএনপির আপত্তির মধ্যে ইভিএম অধ্যায়ের ছেদ পড়ে। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ শীর্ষপর্যায় থেকে বলা হচ্ছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ই-ভোটিং চালু করতে চায় সরকার। সর্বশেষ গতকাল ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অফিসে এক অনির্ধারিত আলোচনায় ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে মত দেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। ইভিএম চালুর বিষয়ে সরকার ও আওয়ামী লীগের ফের আগ্রহকে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার চেষ্টা বলে মনে করছে বিএনপি। এ প্রসঙ্গে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমেরিকায় প্রতিষ্ঠিত কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন নিয়ে গবেষণা হয়েছে। দেখা গেছে, একজন ভোটার ইচ্ছা করলে একচাপে ৫০টির মতো ভোট দিতে পারবেন। যারা ইভিএম ভোটিং পদ্ধতির ডিজাইন করবেন, তারা এমনভাবে ডিজাইন করতে পারবেন যার ফলে ভোটার যে প্রতীকেই ভোট দিক, তা একটি নির্ধারিত প্রতীকের ঘরে যোগ হবে। তাছাড়া মোবাইল ফোন সেটের ব্লু টুথের মাধ্যমে ভাইরাস প্রবেশ করিয়ে ভোটিং মেশিন কন্ট্রোল করা যাবে। যা কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কাম্য নয়।’ বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার অভিযোগ, ইভিএম চালুর মাধ্যমে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও কারচুপির মহোৎসব করতে চায় সরকার ও নির্বাচন কমিশন। পশ্চিমা বিশ্বসহ উন্নত দেশগুলো যখন ভোটগ্রহণে ইভিএম পদ্ধতি থেকে সরে আসছে তখন বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে এ পদ্ধতি চালুর যৌক্তিকতা নেই।’ নেতারা আরও বলছেন, ‘ভারত, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশ ই-ভোটিং পদ্ধতি চালু করলে এর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। একপর্যায়ে এ পদ্ধতি বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাংলাদেশের বড় একটি জনগোষ্ঠীই নিরক্ষর। এত টেকনিক্যাল বিষয় বোঝা তাদের জন্য কষ্টসাধ্য। এই পদ্ধতিতে ই-ভোটিংয়ের সার্ভার সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। সুতরাং সরকারের জন্য ভোট ম্যানিপুলেট করা খুবই সহজ হবে।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘সরকার বা নির্বাচন কমিশন যে ইভিএমের কথা বলছে, এর ব্যবহার ভোটারদের জানা নেই। এমনকি যারা ভোটগ্রহণ করবেন তাদের অনেকেই এ তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে খুব বেশি পরিচিত নন। একটি বিশেষ দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্যই অপ্রয়োজনীয় পদ্ধতিতে ভোটের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে সরকার ও নির্বাচন কমিশন। এর পেছনে মতলববাজি চিন্তা ও দুরভিসন্ধি রয়েছে।’ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘এটা নিঃসন্দেহে দুরভিসন্ধিমূলক। জালিয়াতি করার প্রচেষ্টা। সরকারের আরেকটি ভেল্কিবাজিরই বহিঃপ্রকাশ। এই উচ্চাভিলাষের কাছে সংগ্রামী জনগণ নিজেদের সঁপে দেবে না। নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন মহলের যে কোনো ষড়যন্ত্র জনগণ রুখে দেবে।’

সর্বশেষ খবর