শিরোনাম
সোমবার, ৮ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

জনবিচ্ছিন্ন হলে মনোনয়ন নয় এমপিদের নিয়ে জরিপ চলছে

সংসদীয় দলের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি

নিজস্ব প্রতিবেদক

জনবিচ্ছিন্ন হলে মনোনয়ন নয় এমপিদের নিয়ে জরিপ চলছে

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কঠিন চ্যালেঞ্জের। নিজেকে দায়িত্ব নিয়ে জনগণের ভোটে জিতে আসতে হবে। এলাকায় যার জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা নেই তাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না।

গতকাল রাতে জাতীয় সংসদের সরকারি দলের সভাকক্ষে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে এই হুঁশিয়ারি দেন। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্রে এ খবর জানা গেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে আরও বলেন, আমার কাছে নিয়মিত জরিপ প্রতিবেদন আসছে। এলাকায় কার কী অবস্থা জানি। যার প্রতিবেদন খারাপ, যারা এলাকায় দলাদলি করছেন, দলে বিভক্তি তৈরি করছেন, তাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, যারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ও জোয়ারে এমপি হয়েছেন, তারা জানেন না, নির্বাচন কত কঠিন। যারা এলাকায় বিএনপি-জামায়াতের কর্মীদের নিয়ে চলেন, জনসম্পৃক্তহীন হয়ে পড়েছেন, ত্যাগী কর্মীদের থেকে দূরে সরে গেছেন, তারা মনোনয়ন পাবেন না।  

গতকালের বৈঠকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১১ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হিসেবে সংসদীয় দলের সভায় যোগদান করেন। গতকাল থেকে তারা আওয়ামী লীগের এমপি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৬ জন এমপি স্বতন্ত্র নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার মধ্যে আওয়ামী লীগে ১৪ জন যোগ দিলেও গতকালের বৈঠকে তিনজন অনুপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের শুরুতে প্রয়াত শ্রমিক নেতা ও সংসদ সদস্য আহসান উল্লাহ মাস্টারের  স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদের ১৯ মাস বাকি রয়েছে। অনেক উন্নয়ন করেছি। তাই জনগণ ভোট দেবে-এমন আত্মতুষ্টিতে ভুগলে চলবে না। জনগণের কাছে যেতে হবে। এজন্য এখন থেকেই সবাইকে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে হবে। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী এমপিদের কাছে জানতে চান, আমরা কত লাখ বই বিনামূল্যে বিতরণ করেছি? কোনো এমপিই সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বছর আমরা ২৪৩ কোটি পাঠপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করেছি। তিনি কৃষিতে সরকারের ভর্তুকি কত তাও জানতে চান এমপিদের কাছে। স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়ন চিত্র জানতে চান প্রধানমন্ত্রী। কেউই সঠিক জবাব দিতে পারেননি। দলীয় এমপিদের ‘অজ্ঞতা’ দেখে উষ্মা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এত এত উন্নয়ন করছি। আপনারাই (এমপিরা) যদি বলতে না পারেন, তাহলে দেশের জনগণকে কীভাবে জানাবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে আমরা এত উন্নয়ন করেছি। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। সামাজিক উন্নয়নের বিপ্লব হয়েছে। তার প্রচার নেই। আপনারাই (এমপিরা) জানেন না কী কী উন্নয়ন করলাম। এটা কেমন কথা? আপনারা একটু পড়ালেখা করুন। উন্নয়নগুলো জনগণকে জানান। নিজ এলাকায় জনগণকে জানানোর পাশাপাশি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করুন। তিনি বলেন, শুধু উন্নয়ন করলেই হবে না। তা জনগণের সামনে প্রচার করতে হবে। প্রত্যেকের নির্বাচনী এলাকায় যেসব উন্নয়ন কাজ বাকি রয়েছে তা শেষ করতে হবে। এ ছাড়া আমরা যে উন্নয়নমূলক কাজ করছি তা বার বার মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। তিনি বলেন, আগে কী ছিল আর আওয়ামী লীগ সরকার কী উন্নয়ন করছে তা মানুষকে জানাতে হবে। একই সঙ্গে দলীয় এমপিদের নিজ-নিজ নির্বাচনী এলাকার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং জনসংযোগ শুরুর তাগাদা দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও আগামী নির্বাচনে দলটি আসবে। তাই একটি প্রতিযোগিতাপূর্ণ নির্বাচনের জন্য দলীয় এমপিদের প্রস্তুত থাকতে হবে। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকের অধিকাংশ সময়ের আলোচনাই ছিল আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে। বৈঠকে গত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো আগামী একাদশের নির্বাচন পার হওয়া সহজ হবে না— এমন বার্তা দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের এমপিদের। ভোটের মাঠের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী দল বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে— এমনটা ধরে নিয়েই তাদের মাঠের তত্পরতা বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কয়েকজন এমপি অভিযোগ করেন মন্ত্রীরা বিমাতা সুলভ আচরণ করেন। তারা উন্নয়নের কথা মুখে বললেও তাদের বরাদ্দ দেন না। আবার অনেকে এমপিদের নিজস্ব বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানান।

বৈঠকে বক্তব্য রাখেন, হাছান মাহমুদ, মোতাহার হোসেন, আতিকুর রহমান আতিক, জুনাইদ আহমেদ পলক, সাধন চন্দ্র মজুমদার, হাবিবে মিল্লাত, তারানা হালিম, ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন, শামীম ওসমান প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর