মঙ্গলবার, ৯ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

বন্ড লাইসেন্সধারী ৪৭৯ প্রতিষ্ঠানে নজরদারি নেই

আগামী ১১ মে বন্ড কার্যক্রম পর্যালোচনা ও মনিটরিং সংক্রান্ত সভা

রুহুল আমিন রাসেল

শিল্প-কারখানার অস্তিত্ব নেই এমন বন্ড লাইসেন্সধারী ৪৭৯ প্রতিষ্ঠানে কোনো ধরনের নজরদারি রাখছে না ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট। নামমাত্র অডিটের কারণে থামছে না শুল্ক ফাঁকি। অডিটে শুল্ক ফাঁকি উদ্ঘাটন করা হলেও আদায় ঠিক মতো হচ্ছে না। জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে শুল্কমুক্ত সুবিধার পণ্য পুনঃ রপ্তানির শর্তে আমদানি হলেও ফ্রি-স্টাইলে কালোবাজারে বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে। ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের সর্বশেষ তথ্য-উপাত্তে দেখা গেছে, বাস্তবে কোনো ধরনের পোশাক কারখানা না থাকার পরও ৪৭৯টি প্রতিষ্ঠানের নামে আছে বন্ড লাইসেন্স। এসব বন্ড লাইসেন্স ব্যবহার করে পণ্য আমদানি করে খোলাবাজারে বিক্রি করছেন কালোবাজারের সঙ্গে জড়িত অসাধু পোশাক কারখানার মালিকরা।

এমন প্রেক্ষাপটে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার নিয়ে ১১ মে ‘বন্ড কার্যক্রম পর্যালোচনা ও মনিটরিং সংক্রান্ত সভা’ ডাকা হয়েছে বলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কমিশনার ফৌজিয়া বেগম। সংস্থাটির সূত্র জানিয়েছে, ১৫টি এজেন্ডা নিয়ে এ সভা হবে। এজেন্ডাগুলোর মধ্যে রয়েছে, অস্তিত্বহীন বন্ড প্রতিষ্ঠান শনাক্তকরণপূর্বক হালনাগাদকরণ, বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ আইটেমের শুল্ক ফাঁকি রোধে গৃহীত কার্যক্রম ও অনিয়ম পর্যালোচনা করা, কয়টি অডিট নিষ্পন্ন হয়েছে আর কয়টি হয়নি, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, ডিপ্লোমেটিক বন্ডেড ওয়্যারহাউস ও পাশবই ইস্যু পর্যালোচনা, কয়টি প্রতিষ্ঠানের প্রাপ্যতা সংশোধন ও যৌক্তিকীকরণ করা হয়েছে, বকেয়া রাজস্ব আদায় পর্যালোচনা এবং নিরঙ্কুশ বকেয়া আদায়ের পরিমাণ নির্ধারণ করা, দাবিনামার সংখ্যা, আদায়ের পরিমাণ ও সর্বশেষ অবস্থা পর্যালোচনা করা, মামলাসমূহ ও রাজস্ব আদায়ের অগ্রগতি, ইউপি ইস্যুর ক্ষেত্রে কয়টি অনিয়ম পাওয়া গেছে, কয়টি নতুন লাইসেন্স প্রদান ও বাতিল হয়েছে এবং বন্ড নিয়ে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল—ইপিজেডগুলোর সর্বশেষ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা। এর আগে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট ৩০ জানুয়ারি সর্বশেষ ‘বন্ড কার্যক্রম পর্যালোচনা ও মনিটরিং সংক্রান্ত সভা’ করেছে। জানা গেছে, দেশে এখন মোট ৬ হাজার ৫৬৫টি প্রতিষ্ঠানের নামে বন্ড লাইসেন্স থাকলেও অনিয়মের কারণে ১ হাজার ৭৫৭ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স স্থগিত করেছে কাস্টমস। আবার কারখানা বন্ধ থাকার পরও বন্ড লাইসেন্স আছে ২৪৩৮টি পোশাক ও প্যাকেজিং কারখানার। অভিযোগ উঠেছে, দেশে পোশাকশিল্প মালিকদের ফ্রি-স্টাইলে দেওয়া হচ্ছে বন্ড লাইসেন্স। ফলে যেন তেন ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে শত শত বন্ড লাইসেন্স রয়েছে। এসব বন্ড লাইসেন্স দিয়ে আমদানি করা পণ্য খোলাবাজারে বিক্রি করে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব পুকুরচুরি করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের তথ্যমতে, রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানাগুলো পুনঃ রপ্তানির শর্তে শুল্কমুক্ত বন্ড সুবিধায় পণ্য আমদানির সুযোগ পায়। বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধার আওতায় রপ্তানির নামে শুল্কমুক্ত সুবিধায় কাঁচামাল আমদানি হয়েছে দিনের পর দিন। ফলে প্রতিবছর শুধু আমদানি পর্যায়ে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকারও বেশি শুল্ককর অব্যাহতি দিয়ে থাকে সরকার। স্থানীয় পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) অব্যাহতির হিসাব বিবেচনায় নেওয়া হলে এর পরিমাণ আরও অনেক বেশি হবে।

বন্ড সুবিধার অপব্যবহার প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পোশাক খাতের ইউডি (ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশন) ইস্যুর ক্ষমতা ১৯৯৩ সাল থেকে বিজিএমইএকে দেওয়া হয়েছে। একজন পোশাক কারখানার মালিক এক লাখ পিস শার্ট রপ্তানির অর্ডার পাওয়ার পর তিনি যখন ইউডি নেন, তখন প্রতি পিসে হয়তো আড়াই গজ ফ্যাব্রিকস হিসাব করে বন্ড সুবিধায় আড়াই লাখ গজ কাপড় আমদানি করেন। কিন্তু আদতে দেখা গেল, তার প্রতিটি শার্ট তৈরিতে ফ্যাব্রিকস লেগেছে দুই গজ করে। এতে দুই লাখ গজের ফ্যাব্রিকস দিয়ে শার্ট বানিয়ে রপ্তানি করা হলো। আর বাকি ৫০ হাজার গজ কাপড় খোলাবাজারে বিক্রি করে দেওয়া হলো। প্রসঙ্গত, রপ্তানিতে সহযোগিতা করতে সরকার শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্পের উৎপাদনে ব্যবহূত কাঁচামাল বন্ড সুবিধায় শুল্কমুক্তভাবে আমদানির সুযোগ দেয়। অর্থাৎ একটি রপ্তানিমুখী কারখানার উৎপাদনে ব্যবহূত সব কাঁচামাল কোনো ধরনের শুল্ক না দিয়েই আমদানি করা যাবে। এই শুল্কমুক্ত সুবিধা ‘বন্ড সুবিধা’ নামে পরিচিত। বন্ড সুবিধা পাওয়ার অন্যতম শর্ত থাকে, হিসাবমতো কাঁচামাল আমদানি করতে হবে এবং তা খোলাবাজারে বিক্রি করা যাবে না। আমদানিকৃত শুল্কমুক্ত পণ্য সংশ্লিষ্ট কারখানার বন্ডেড ওয়্যারহাউসে মজুদ রেখে উৎপাদনে ব্যবহার করতে হবে।

সর্বশেষ খবর