মঙ্গলবার, ৯ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

নারী শিশু ধর্ষণ নিয়ে আতঙ্ক

এপ্রিলে ধর্ষিতা ৮৫ শিশু ধর্ষণ বেড়েছে

জিন্নাতুন নূর

দেশে ধর্ষণসহ নারীদের যৌন হয়রানির ঘটনা আতঙ্কজনক অবস্থায় পৌঁছেছে। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও নারী-শিশুরা দুর্বৃত্তের অস্ত্রের মুখে, প্রতারণা বা ফাঁদে পড়ে ধর্ষণ ও গণধর্ষণের শিকার হচ্ছে। প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হলে রাগ মেটাতে কখনোবা নারী ও শিশুর অসহায়ত্বের সুযোগে এক শ্রেণির দুর্বৃৎত্ত এই অপরাধ ঘটাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে প্রমাণ না রাখতে এবং ভিকটিম যাতে ঘটনাটি কাউকে না জানায় তা নিশ্চিত করতে অপরাধীরা ভিকটিমকে নির্যাতন শেষে হত্যা করছে। এমনকি নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করে তা ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। আবার প্রভাবশালীরা সালিশের নাম করে ভিকটিম ও তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ বাবদ টাকা দিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। আইনজীবীরা বলছেন, ধর্ষণের ঘটনায় বিচারের হার এতই কম যে, অপরাধীরা ধরেই নিয়েছে এমন অপরাধ করে পার পাওয়া সম্ভব। তাদের মতে, সমাজকে এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে রক্ষার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যদের এ ঘটনায় অভিযুক্ত অপরাধীদের শনাক্ত করে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্যে, এপ্রিলে মোট ৮৫টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। গণধর্ষণ হয়েছে ১৪টি এবং ধর্ষণ শেষে চারজনকে হত্যা করা হয়। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৯৩ জন নারী। এদের মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয় ২৬ জন। এই নারীদের মধ্যে পাঁচজনকে নির্যাতন শেষে হত্যা করা হয় এবং একজন আত্মহত্যা করে। অন্যদিকে পুলিশ সদর দফতরের তথ্যে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে সারা দেশে ১৪৪টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয় আর বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্যে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ১৪৫টি শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। যা আগের বছরের এই সময়ের তুলনায় ৫১ শতাংশ বেশি। এ সময়ে শিশুর প্রতি গণধর্ষণ বেড়েছে তিন গুণ। বিশেষজ্ঞ মহল বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, আইনের সঠিক প্রয়োগ না হওয়া এবং নৈতিক অবক্ষয় এবং অপসাংস্কৃতিক অগ্রাসনের কারণে নারী ও শিশুরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। এ ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, অপরাধীরা বোধ-বুদ্ধিহীন শিশু থেকে শুরু করে প্রতিবন্ধী কিশোরী, স্কুল শিক্ষার্থী থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী, গার্মেন্ট কর্মী এবং বিভিন্ন কর্মজীবী নারী ও গৃহিণীসহ সব বয়সী ও শ্রেণি-পেশার নারী-শিশুর ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। তারা আরও জানান, সারা দেশে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের দেড় লাখ মামলা এখন বিচারের অপেক্ষায় আছে। বিভিন্ন কারণে এসব মামলার বিচার ঝুলে আছে। আর বছরে নিষ্পত্তি হচ্ছে মাত্র ৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ মামলা। ওমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের উপ-কমিশনার ফরিদা ইয়াসমিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যদি রাস্তাঘাটে কোনো নারী-শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয় তবে সেটি দেখার দায়িত্ব পুলিশের কিন্তু হোটেল বা বাড়িতে কোনো ঘটনা ঘটলে তা পুলিশের আয়ত্তের বাইরে। একটি মেয়ে কোথায় যাবে, সেখানে সে নিরাপদ কিনা এ বিষয়গুলো তাকে ভাবতে হবে। এজন্য পারিবারিকভাবে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। আর আমাদের পক্ষ থেকে আমরা স্কুল পর্যায়ে এ বিষয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে বসে আলোচনার ভিত্তিতে সচেতনতা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করছি।

বনানীর বিলাসবহুল একটি হোটেলে জন্মদিনের পার্টিতে ডেকে নিয়ে গত ২৮ মার্চ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে হোটেল কক্ষে ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছে। এ সময় ধর্ষণের ঘটনাটি ভিডিওতে ধারণ করা হয়। ভিকটিম দুই ছাত্রী বনানী থানায় এ বিষয়ে মামলাও করেছেন। গত ২৮ এপ্রিল রাজধানীর জুরাইন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে এক কিশোরীকে শ্রেণিকক্ষে আটকে রেখে আট কিশোর গণধর্ষণ করে। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী কিশোরী আটজনের নাম উল্লেখ করে কদমতলী থানায় মামলা করে। এরই মধ্যে এ ঘটনায় সহায়তার জন্য স্কুলটির নিরাপত্তাকর্মী মো. স্বপন পুলিশের কাছে জবানবন্দি দিয়েছে। এর আগে গাজীপুরে এক বাবা, তার কন্যাশিশুর ওপর দুর্বৃত্তরা শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালালে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে বিচার চাইতে গেলে বিচার না পেয়ে মেয়েকে নিয়ে গত ২৯ এপ্রিল চলন্ত ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেন। এ ছাড়া ২৭ এপ্রিল রাজধানীর খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগে পাঁচ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টা করা হয়।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর