মঙ্গলবার, ৯ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভোটাধিকার নিয়ে আর প্রতারণা করা যাবে না

শফিউল আলম দোলন

ভোটাধিকার নিয়ে আর প্রতারণা করা যাবে না

ড. মোশাররফ হোসেন

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন এক নয়। এ দেশের জনগণ ও বিদেশি বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আর প্রতারণা করা যাবে না। বার বার একই কাজ করে সরকার পার পাবে না। নির্বাচন একটা নিরপেক্ষ ব্যবস্থার অধীনেই হতে হবে। আর সেই নির্বাচনে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ইনশাল্লাহ বিএনপিই ক্ষমতায় আসবে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলাপকালে উপরোক্ত মন্তব্য করেন সাবেক এই স্বাস্থ্যমন্ত্রী। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘ঘুঘু তুমি বার বার খেয়ে যাও ধান’ এর মতো প্রতিবারই জনগণের ভোটাধিকার নিয়ে প্রতারণা করা যাবে না। জনগণ একবার রুখে দাঁড়ালে আর কোনো উপায় থাকবে না। দেশের মানুষ বুঝে গেছে যে, এ সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য মানুষের ওপর দমন-পীড়নের স্টিম রোলার চালাচ্ছে। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এই সরকার জঙ্গিবাদকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। প্রধানমন্ত্রী ভারতে যাওয়ার আগে জঙ্গি দেখা  গেল। ভারত থেকে দেশে আসার পর নেই। জঙ্গি নিয়ে তারা নাটক করছে। আসলে আওয়ামী লীগের আমলেই জঙ্গিবাদের উত্থান হয়েছে।

বিএনপির এই নীতিনির্ধারক জানান, তার দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের একটি রূপরেখা দেবেন। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ১০ মে শুক্রবারও তিনি এই ‘ভিশন ২০৩০’ ঘোষণা করতে পারেন। ওই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশকে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার পরিকল্পনাও এতে থাকতে পারে। এ ছাড়া সুশাসন, স্থিতিশীল অর্থনীতি গঠনসহ টেকসই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার থাকার কথা রয়েছে এতে। আগামীতে সরকারে গেলে দলের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করণীয় সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দেওয়া হবে। গত মঙ্গল ও বুধবার চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলায় কর্মিসভাকে কেন্দ্র করে দলীয় নেতা-কর্মীদের মারামারির কথা অকপটে স্বীকার করে ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, এটাকে আসলে বড় রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ নেতৃত্বের প্রতিযোগিতার অংশ বলা যায়। তবে পরদিন বৃহস্পতিবার আবার সবাই একসঙ্গে এসে সমাবেশে মিলিত হয়েছেন। সব মিডিয়ায় এসেছে যে, চট্টগ্রামের কর্মিসভায় হাজার হাজার নেতা-কর্মী যোগ দিয়েছেন। তার মানে আমাদের প্রতিপক্ষ বন্ধুরা ‘রাজনীতিতে বিএনপি নিস্তেজ হয়ে পড়েছে’ বলে যে বক্তব্য দেন— চট্টগ্রামের কর্মী সমাবেশে দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মীর উপস্থিতি তাদের সেই বক্তব্যকে মিথ্যা বলে প্রমাণ করেছেন। আসলে সারা দেশের অবস্থাই এখন এ রকম। মানুষ একবার ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিএনপিকেই যে বেছে নেয়, তার প্রমাণ সুযোগ পেলেই বার বার এদেশের জনগণ দিয়েছে এবং আগামীতেও দিবে। দেশের বিদ্যমান বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতির সাম্প্রতিক বক্তব্যগুলোই নির্দেশ করে— দেশের বিচার ব্যবস্থা এখন কোন পর্যায়ে আছে। বিএনপির এই নীতিনির্ধারক দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক সমস্যা সম্পর্কে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ ও সহায়ক সরকারের যে প্রস্তাব দিবেন— সে অনুযায়ী শান্তিপূর্ণ পরিবেশে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়েই এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। তবে এ সরকার খুব সহজেই বেগম খালেদা জিয়ার ‘নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের এই প্রস্তাব’ মেনে নিবে বলে মনে হয় না। কারণ তারা ভালো করেই জানে যে, নিরপেক্ষ ব্যবস্থায় একটা অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে আওয়ামী লীগের অবস্থা কী হবে! কারণ জোর করে টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকলেও বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দেশ ও জনগণের জন্য কোনো ভালো কাজ করেছে বলে দেখাতে পারবে না। উপরন্তু দেশে লুটপাটের অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে— কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ পর্যন্ত চুরি হয়ে গেছে। তার একটা তদন্ত রিপোর্টও আজ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। কাজেই এ সরকার বেগম খালেদা জিয়ার প্রস্তাব সহজেই মেনে নিবে না। আর সেক্ষেত্রে রাজপথের আন্দোলনের কোনো বিকল্প থাকবে না। ড. মোশাররফ হোসেন দলীয় নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের জনগণকে আগামী দিনের আন্দোলনের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, সব দ্বিধা-দ্বন্দ্ব বাদ দিয়ে দেশের স্বার্থে দলমত নির্বিশেষে সবাই প্রস্তুত হন। আগামী আন্দোলন কোনো ব্যক্তি, দল বা গোষ্ঠীর স্বার্থে নয়। এ আন্দোলন— মানুষের ভোটাধিকার, নিরপেক্ষ নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা আর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন।

সর্বশেষ খবর